যুক্তরাষ্ট্রের রণতরীর নিখোঁজ নৌসেনাদের লাশ উদ্ধার

কন্টেইনারবাহী একটি বাণিজ্য জাহাজের ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত যুক্তরাষ্ট্রের একটি রণতরী থেকে নিখোঁজ হওয়া নৌসেনাদের লাশ পাওয়া গেছে।

>>রয়টার্স
Published : 18 June 2017, 05:40 AM
Updated : 18 June 2017, 05:46 AM

যুক্তরাষ্ট্র নৌবাহিনীর ক্ষতিগ্রস্ত ডেস্ট্রয়ার ইউএসএস ফিটজেরাল্ডের পানি ঢুকে যাওয়া একটি কম্পার্টমেন্টে নিখোঁজ সেনাদের লাশ পাওয়া যায় বলে রোববার জানিয়েছে দেশটির সপ্তম নৌবহর।

জাপানের গণমাধ্যম নিখোঁজ সাত সেনার সবার লাশ পাওয়ার কথা জানিয়েছে।

এক বিবৃতিতে জাপানে মোতায়েন যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম নৌবহর বলেছে, “ডুবুরিরা (জাহাজের) ওই জায়গাটিতে প্রবেশ করতে সক্ষম হয় এবং বেশ কয়েকটি মৃতদেহ খুঁজে পায়।”

এর আগে দেওয়া আরেকটি বিবৃতিতে সপ্তম নৌবহর জানিয়েছিল, খুঁজে পাওয়া নৌসেনাদের দেহ জাপানের ইয়োকোসুকায় ‍যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর ঘাঁটির হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে, সেখানে তাদের শনাক্ত করা হবে।

“(নিহতদের) পরিবারগুলোকে বিষয়টি জানানো হয়েছে এবং এই কঠিন সময়ে তাদের যে সহয়তা দরকার তা দেওয়া হচ্ছে,” বিবৃতিতে বলেছে সপ্তম নৌবহর।

ইউএসএস ফিটজেরাল্ডের স্টারবোর্ড সাইডে পানির উপরে ও নিচে উভয় দিকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। রয়টার্স

জাপানের স্থানীয় সময় শনিবার ভোররাত আড়াইটায় টোকিও উপসাগরের দক্ষিণে এবং বন্দরনগরী ইয়োকোসুকা থেকে ১০৩ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্রবাহী ডেস্ট্রয়ার ফিটজেরাল্ডের সঙ্গে ফিলিপাইনের পতাকাবাহী একটি বাণিজ্য জাহাজের সংঘর্ষ হয়।

তিনগুণ বড় এসিএক্স ক্রিস্টাল নামের ওই বাণিজ্য জাহাজের ধাক্কায় ফিটজেরাল্ডের স্টারবোর্ড সাইডে পানির উপরে ও নিচে উভয় দিকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং সাত নৌসেনা নিখোঁজ ও অপর তিনজন আহত হয়। অপরদিকে এসিএক্স ক্রিস্টালের সামান্য ক্ষতি হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত ফিটজেরাল্ডের দুটি স্লিপিং বার্থ ও অন্যান্য কয়েকটি এলাকা পানিতে সয়লাব হয়ে যায়। 

আহত তিন নৌসেনার মধ্যে মার্কিন ডেস্ট্রয়ারটির কমান্ডিং অফিসার ব্রেইস বেনসনও রয়েছেন। তাদের হেলিকপ্টার যোগে সরিয়ে নিয়ে ইয়োকোসুকায় ‍যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাদের অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী।

ক্ষতিগ্রস্ত ফিটজেরাল্ড শনিবার সন্ধ্যায় বন্দরে ফিরে যায়। অপরদিকে নিখোঁজ সাত সেনার খোঁজে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের জলযান ও বিমানগুলো তল্লাশি অভিযান চালাতে থাকে।

কোন পরিস্থিতিতে জাহাজ দুটির মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে তা পরিষ্কার নয়। ‘তদন্ত শেষ হলে যেকোনো বৈধ ইস্যু প্রকাশ করা হবে’ বলে জানিয়েছেন সপ্তম নৌবহরের এক মুখপাত্র। 

ফিলিপাইনের পতাকাবাহী বাণিজ্য জাহাজ এসিএক্স ক্রিস্টাল, এর সামনের পোর্ট বো অংশটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে; ১৭ জুন, ২০১৭। জাপান কোস্ট গার্ড/রয়টার্স

ট্র্যাফিক কন্ট্রোলের দায়িত্বে নিয়োজিত ‘পেশাদারদের অবহেলা জনিত কারণ’ এর জন্য দায়ী কি না, তা তদন্ত করে দেখছে জাপানের কর্তৃপক্ষ। তবে তদন্ত দুই জলযানের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে কি না তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী বলছে, ঘটনাটি স্থানীয় সময় ভোররাত প্রায় ২টা ৩০ মিনিটে ঘটেছে; অপরদিকে জাপানের কোস্টগার্ড বলছে, ঘটনাটি স্থানীয় সময় রাত ১টা ৩০ মিনিটে ঘটেছে।

এসিএক্স ক্রিস্টালকে অনুমোদন দেওয়া জাপানের প্রতিষ্ঠান নিপ্পন ইয়ুসেন কেকে এক বিবৃতিতে জাপানের কোস্টগার্ডের তদন্তে ‘পূর্ণ সহযোগিতা করবে’ বলে জানিয়েছে।   

জাপানের বৃহত্তম দুটি কন্টেইনার পোর্ট টোকিও ও ইয়োকোহামা মুখি জাহাজ চলাচলের কারণে টোকিও উপসাগরে ঢোকার জলপথটি বাণিজ্যিক জাহাজের আনাগোনায় ব্যস্ত থাকে। এই জলপথেই জাহাজ দুটির সংঘর্ষ হয়েছে।

প্রকাশিত ছবি থেকে বোঝা গেছে, কন্টেইনারবাহী ৩০ হাজার টনি এসিএক্স ক্রিস্টালের সম্মুখভাগের একপাশ ইউএসএস ফিটজেরাল্ডের স্টারবোর্ড পাশে আঘাত করেছে। এতে ফিটজেরাল্ডের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও এসিএক্স ক্রিস্টালের পোর্ট বো অংশ শুধু কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

সামান্য ক্ষতি নিয়ে এসিএক্স ক্রিস্টাল শনিবার রাতে টোকিও উপসাগরে পৌঁছেছে বলে জানা গেছে।