‘কৃত্রিম দ্বীপে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র কেন্দ্র বানাচ্ছে চীন’

চীন দক্ষিণ চীন সাগরে তৈরি কৃত্রিম দ্বীপপুঞ্জে ভূমি থেকে আকাশে উৎক্ষেপণযোগ্য দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র কেন্দ্র স্থাপন করছে বলে ধারণা প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের দুই কর্মকর্তা।

>>রয়টার্স
Published : 22 Feb 2017, 01:51 PM
Updated : 22 Feb 2017, 02:39 PM

তাদের দাবি, দ্বীপটিতে দুই ডজন স্থাপণা নির্মাণের কাজ প্রায় শেষে করে এনেছে চীন। ভবনের কাঠামোগুলোর নকশা দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র রাখার কেন্দ্রের মত।

এর আগে ডিসেম্বরে একটি প্রতিবেদনে চীন সাতটি কৃত্রিম দ্বীপের সবগুলোতেই বিমান-বিধ্বংসী ও ক্ষেপণাস্ত্র-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রসহ অন্যান্য অস্ত্র মোতায়েন করেছে বলে জানিয়েছিলেন ওয়াশিংটনের ‘সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক এন্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ’ এর দক্ষিণ চীন সাগর বিশেষজ্ঞ গ্রেগ পোলিং।

আর এবার চীন নতুন যে কাঠামোগুলো তৈরি করেছে সেগুলো ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করার মতো বলে জানিয়েছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। তবে চীন কখন সেখানে ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করবে সে সম্পর্কে কোনও ধারণা দিতে পারেন নি তারা।

দক্ষিণ চীন সাগরের প্রায় পুরোটাই নিজেদের ভূখণ্ড বলে দাবি করে চীন। প্রতিবেশী মালয়েশিয়া, ফিলিপিন্স, তাইওয়ান এবং ভিয়েতনামেও একই দাবি। বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ জলপথগুলোর অন্যতম দক্ষিণ চীন সাগর দিয়ে নৌপথে বিশ্ব বাণিজ্যের প্রায় একতৃতীয়াংশ সম্পন্ন হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যুক্তরাষ্ট্রের একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, “দক্ষিণ চীন সাগরে চীন যে স্থাপণাগুলো নির্মাণ করেছে সেগুলো শুধুমাত্র সাধারণ স্থাপণার মত নয়। বরং সেগুলো দেখতে অনেকটাই ভারী অস্ত্র পরিচালনার মঞ্চের মত। এসএএম ব্যাটারি (ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র) রাখার মত। তাই যৌক্তিক উপসংহার হচ্ছে, সেগুলো আসলে কিসের জন্য তৈরি।”

অন্য আরেক কর্মকর্তা বলেন, স্থাপণাগুলো প্রায় ২০ মিটার (৬৬ ফুট) দীর্ঘ এবং ১০ মিটার (৩৩ ফুট) উঁচু।

পেন্টাগনের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘দক্ষিণ চীন সাগর অ-সামরিকীকরণের’ যে প্রতিশ্রুতি যুক্তরাষ্ট্র দিয়েছে তারা তা পালন করবে। তিনি আন্তর্জাতিক আইন মেনে বাকি দাবিদারদের প্রতি ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বানও জানিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারের শুরু থেকেই দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের আধিপত্যের বিরোধী ছিলেন। নির্বাচনে জয়লাভ করার পরও তিনি চীনের কৃত্রিম দ্বীপ নির্মাণকে অবৈধ বলে মন্তব্য করে এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেছেন।

এছাড়া ‘যুক্তরাষ্ট্র এক চীন নীতি মানতে বাধ্য নয়’ বলে করা ট্রাম্পের মন্তব্যের পর ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে সম্পর্কে উত্তেজনা দেখা দেয়।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনও সিনেটে দক্ষিণ চীন সাগরের কৃত্রিম দ্বীপে চীনের পদচারণা নিষিদ্ধের প্রস্তাব করেছিলেন।

যদিও পরে (১০ ফেব্রুয়ারি) চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে টেলিফোন করে এক চীন নীতির প্রতি সম্মান জানিয়ে এ নীতি মেনে চলার প্রতিশ্রুতি দেনে ট্রাম্প।

কিন্তু এখন চীনের নতুন পদক্ষেপে যুক্তরাষ্ট্র কিভাবে ব্যবস্থা নেবে তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র চীনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি এরই মধ্যে দিয়ে রেখেছে।

রয়টার্সের পক্ষ থেকে বুধবার চীনের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থানের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জেং শুয়াং বলেন, তিনি বিষয়টি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল।

তিনি বলেন, “চীন নিজেদের ভূখণ্ডে সাধারণ নির্মাণ কাজ চালাচ্ছে এবং সেইসঙ্গে নিজেদের ভূখণ্ডের সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় ও উপযুক্ত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন করছে। আন্তর্জাতিক আইন আনুযায়ী একটি স্বাধীন দেশের এটি সাধারণ অধিকার।”