কলম্বিয়ায় সরকার ও ফার্ক গোষ্ঠীর ঐতিহাসিক শান্তিচুক্তি

কলম্বিয়ার মধ্য-ডানপন্থি সরকার ও মার্কসবাদী ফার্ক বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে চূড়ান্ত শান্তিচুক্তি সই হয়েছে।

>>রয়টার্স
Published : 27 Sept 2016, 06:09 AM
Updated : 27 Sept 2016, 06:09 AM

সোমবারের এই চুক্তির মধ্যদিয়ে পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে চলা রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের অবসান হল।

দীর্ঘ অর্ধ-শতকেরও বেশি সময় ধরে চলা এই লড়াইয়ে দুই লাখেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।

কিউবায় চারবছর ধরে শান্তি আলোচনা হওয়ার পর সোমবার প্রথমবারের মতো কলম্বিয়ার মাটিতে দেশটির প্রেসিডেন্ট হুয়ান ম্যানুয়েল সান্তোস (৬৫) ও ফার্ক বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নেতা টিমোচেনকো (৫৭) পরস্পরের সঙ্গে উষ্ণ করমর্দন করেন। এরপর সাদা একটি কলম দিয়ে তারা চুক্তিতে সই করেন।

ঐতিহাসিক এই চুক্তি অনুষ্ঠানে সমবেতরা “কলম্বিয়া দীর্ঘজীবী হোক, শান্তি দীর্ঘজীবী হোক” বলে স্লোগান দেন।

চুক্তি সই হওয়ার পর আবেগাপ্লুত সান্তোষ বলেন, “অর্ধশতক ধরে সহিংসতার কালরাত্রির যে ছায়া আমাদের ঢেকে রেখেছিল তার অবসান হয়েছে।”

কান্নাভেজা চোখে সান্তোস আরো বলেন, “একটি নতুন ভোরের প্রতি আমাদের হৃদয় মেলে ধরেছি,  একটি উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় সূর্য কলম্বিয়ার আকাশে উদয় হয়েছে।”

অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া অনেককে এ সময় কাঁদতে দেখা যায়। দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ে নিহত, পঙ্গু হয়ে যাওয়া, ধর্ষণের শিকার এবং বাস্তুচ্যুতদের স্মরণে অনুষ্ঠানে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

রোববার কলম্বিয়ার জনগণ এই নতুন চুক্তির অনুমোদনের ব্যাপারে ভোট দেবেন। জরিপ বলছে, সহজেই এটি পাস হবে।

চুক্তি অনুষ্ঠানে ফার্ক বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নেতা টিমোচেনকো বলেন, “আমরা অস্ত্রের পরিবর্তে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া বেছে নিয়েছি এ ব্যাপারে কারো কোনো সংশয় থাকা উচিৎ হবে না।”

এ সময় তিনি ফার্ক গেরিলাদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আহ্বান জানান। তিনি আরো বলেন, “আমরা সবাই আমাদের ভেতর থেকে, হৃদয় থেকে নিরস্ত্র হওয়ার জন্য প্রস্তুত।”

কলম্বিয়ার উপকূলীয় শহর কার্টাগেনায় হওয়া এই অনুষ্ঠানে আগতদের সবাইকে সাদা পোশাকে আসার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছিল। এতে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি-মুন, কিউবার প্রেসিডেন্ট রাউল কাস্ত্রো এবং যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি উপস্থিত ছিলেন।

এরআগে হাভানায় সমঝোতার যৌথ ঘোষণা দিয়েছিল কলম্বিয়া সরকার ও ফার্ক বিদ্রোহী গোষ্ঠী।

সেখানে, বিস্তৃতভাবে সামাজিক অন্তর্ভুক্তি, সংঘাতে ক্ষতিগ্রস্তদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এবং স্থিতিশীল ও দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় উভয় পক্ষ একসঙ্গে কাজ করতে একমত হয়।

কলম্বিয়া সরকার ও বামপন্থী গেরিলা বাহিনী রেভলিউশনারি আর্মড ফোর্সেস অব কলম্বিয়ার (ফার্ক) মধ্যে অর্ধ শতক ধরে চলা এই সংঘাতে প্রায় ২ লাখ ২০ হাজার মানুষের প্রাণহানি হয়েছে; ঘর-বাড়ি হারিয়েছে লাখ লাখ মানুষ।

কিউবার রাজধানীতে হওয়া ওই অনুষ্ঠানে কলম্বিয়ার প্রতিনিধি দলের প্রধান উমবেরতো দে লা চাল্লে ও ফার্কের প্রধান আলোচক ইভান মার্কেজ চুক্তিতে সই করেছিলেন ।

কিন্তু এবার কলম্বিয়ার মাটিতে দেশটির প্রেসিডেন্ট ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নেতার মাঝে চূড়ান্ত চুক্তিতে সই হল।

চুক্তি অনুযায়ী, বিশ্বের অন্যতম দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের অবসান ঘটাতে ফার্ক অস্ত্র সমর্পণ করে বেসামরিক জীবনে ফিরে যাবে।

গেল জুনে দুই পক্ষ দ্বিপক্ষীয় অস্ত্রবিরতি চুক্তিতে সই করে, যা চুড়ান্ত সমঝোতার পথ তৈরি করে।