জাপানে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাড়ছে

জাপানে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাড়ছে। প্রস্তাবিত ৪৫ টি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্যে নতুন করে আরও তিনটি কেন্দ্রের অনুমতি দিয়েছে জাপান সরকার।

এস এম নাদিম মাহমুদ, জাপান প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 August 2016, 02:14 PM
Updated : 29 August 2016, 02:14 PM

২০১১ সালের ভয়াবহ সুনামির প্রেক্ষাপটে দেশের বেশ কয়েক টি পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বন্ধ থাকার পর গত বছর অক্টোবরে ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প চালু হওয়ার পর আরও তিনটি কেন্দ্র চালু করে শিনজো আবে সরকার।

তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল হওয়ায় সরকার সম্প্রতি নতুন এই তিন কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অনুমতি দেয়।

এরই মধ্যে দেশটির মন্ত্রিপরিষদের পক্ষ থেকে দু’টি প্রকল্পের কাজও শুরু হয়েছে বলে অর্থনীতি, বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

গত ৩ অগাস্ট আবে সরকার নতুন মন্ত্রিপরিষদ গঠন  করায় অর্থনীতি, বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রী হিসেবে হিরোসিগে সেকো দায়িত্বে আসার আগে সাংবাদিকদের কয়লা ভিত্তিক তিনটি বিদ্যুৎ প্রকল্পের মধ্যে দু’টির কাজ শুরু করার কথা জানিয়েছিলেন ওই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী তামাওয়া মুরোকায়া।

নতুন এই দুই কেন্দ্র স্থাপিত হচ্ছে জাপানের রাজধানী টোকিও থেকে ৬২ মাইল দূরে ইবারাকি প্রদেশে।

মুরোকায়া দায়িত্ব ছাড়ার এ তথ্য নিশ্চিত করে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ইবারাকি প্রদেশে ৬৫০ মেগাওয়াটের জন্য যৌথভাবে চুবো ইলেকট্রিক আণ্ড পাওয়ার কোম্পানি এবং টোকিও ইলেকট্রিক কোম্পানি (টেপকো) অপরটি ৬৪৫ মেগা ওয়াটের জন্যে ইলেকট্রিক পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি ও নিপ্পন-সুমিতেমোকে অনুমতি দেয়া হয়েছে।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাপান সরকার আগামী ১২ বছরের মধ্যে ৪৫ টি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প চালুর ঘোষণা দেয়। কয়লা ভিত্তিক এই প্রকল্প থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে ২০ গিগা ওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়।

অর্থনীতি, বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ পরিসংখ্যানমতে, দেশটিতে ১২ দশমি ৩ ভাগ বিদ্যুৎ কয়লা থেকে, ৪৩ ভাগ জ্বালানি তেল, এলএনজি ১৩ দশমিক ৭, পারমাণবিক থেকে ১০ দশমিক ১, সৌর বিদ্যুৎ ২৯ দশমিক ৪ শতাংশ পাওয়া যায়।

প্রস্তাবিত হিসাব অনুযায়ী, সরকার আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বিদুৎ সরবরাহের জন্য শতকরা ২৬ ভাগই কয়লা নির্ভর করবে বলে জানানো হয়েছে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, জাপানে বর্তমানে ১৮ টি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ১০ টি জ্বালানি ভিত্তিক, ১৪ টি গ্যাস ও ২২ টি পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প চালু রয়েছে।

জীবাশ্ম জ্বালানির প্রতি নির্ভরশীলতা কমাতে এবং আন্তজার্তিক বাজারে তেলের চড়া মূল্যের কারণে শিনজো আবে সরকার তা আমদানি কমিয়েছে। ২০১৫ সালে ১১৪ দশমিক ১৪ মিলিয়ন টন কয়লা আমদানি করেছে যা পূর্ববর্তী বছরের চেয়ে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি।

বাণিজ্যমন্ত্রণালয় বলছে, চলতি বছর ১ এপ্রিলের মধ্যে ২৬৬ টি কোম্পানি নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ না পাওয়ার কারণে প্রায় ৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার লোকসানের মুখে পড়ে। ফলে অনেক কোম্পানি ব্যক্তিগত উদ্যেগে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প চালুর সিদ্ধান্তও নিয়েছে।

টোকিওতে মিসুবুসি ভারী শিল্প এলাকায় পেপার মিল জন্য আগামী মাসে ১০০ মেগাওয়াট এবং হোংসুতে ২০১৮ সালের মার্চের মধ্যে আরো ১৪৫ মেগাওয়াটের কয়লার উপর নির্ভর করে বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ করবে বলে কোম্পানিটির কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

শিল্পমন্ত্রী হিরোসিগে সেকো বলেন, বিদ্যুৎ চাহিদা মোকাবেলায় আমরা সবধরনের কাজই করে যাব। কার্বন নিঃসরণ কমাতে বিশ্বের সর্বাধনিক প্রযুক্তি জাপান সরকার ব্যবহার করবে।

কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত বিদ্যুৎ দেশের অনেক কোম্পানির উৎপাদন ব্যবস্থায় কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।