শ্রম আইন সংস্কার বিল নিয়ে অসন্তোষের জেরে শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘটে ফ্রান্স জুড়ে ব্যাপক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
Published : 26 May 2016, 08:15 PM
বিশেষ করে তেল শোধনাগার, পরমাণু শক্তি কেন্দ্র, বন্দর ও পরিবহন শ্রমিকরা এই ধর্মঘটে অংশ নিচ্ছে।
বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা সড়কপথ ও সেতুগুলো অবরোধ করে রেখেছে। পরমাণু সাবমেরিন ঘাঁটিও অবরোধ করছে শ্রমিকরা। পরমাণু শক্তি কেন্দ্রগুলোতে উৎপাদনের গতি অনেক কম। অধিকাংশ জ্বালানি স্টেশন বন্ধ রয়েছে।
অবরোধের কারণে প্যারিস, নন্টস ও তুলুজ বিমানবন্দরে বিমান চলাচলও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
ট্রেন চালকদের অবরোধের কারণে আঞ্চলিক ও কমিউটার ট্রেন সেবায়ও বিঘ্ন ঘটছে বলে শনিবার বিবিসি’র প্রতিবেদনে জানানো হয়।
শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে বড় বড় নগরগুলোতে সমাবেশ আহ্বান করা হয়েছে।
যদিও প্রধানমন্ত্রী মানুয়েল ভালস ‘প্রস্তাবিত বিল বাতিল করা হবে না’ বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন। তবে ‘বিলটি কিছুটা পরিবর্তন করা সম্ভব হবে’ বলে ইঙ্গিত দেন তিনি।
ভালস বলেন, “আইনে পরিণত করার আগে এখনও প্রস্তাবিত বিলটিতে পরিবর্তন ও পরিমার্জনের সুযোগ রয়েছে।”
প্রস্তাবিত বিলের অনুচ্ছেদ-২ নিয়েই মূল আপত্তি শ্রমিকদের।
অনুচ্ছেদ-২ এ শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় সরকারি যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে, প্রয়োজনে যে কোনো কোম্পানি তার ইচ্ছা অনুযায়ী সেগুলোর বিরোধিতা ও পরিবর্তন করতে পারবে।
অর্থমন্ত্রী অনুচ্ছেদ-২ পুনরায় লিখতে হতে পারে বলে মন্তব্য করেছিলেন। যদিও প্রধানমন্ত্রী ভালস অর্থমন্ত্রীর ওই পরামর্শ বাতিল করে দিয়েছেন।
সরকার শ্রম আইন সংস্কার বিলটি পার্লামেন্টের অনুমোদন ছাড়াই পাস করার চেষ্টা নেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারই ঘোর বিরোধিতা করছে শ্রমিকরা।
ফ্রেঞ্চ ইউনিয়ন অব পেট্রোলিয়াম ইন্ডাস্ট্রিস এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ফ্রান্সের ১২ হাজার পেট্রোল স্টেশনে কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।
ফুটবলে ইউরোপের সেরা আসর ইউরোর এবারের আয়োজক দেশ ফ্রান্স। আসরটি শুরু হতে আর মাত্র ১০ দিন বাকি।
প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া অলন্দ বুধবার মন্ত্রীদের উদ্দেশ্যে বলেন, “ফ্রান্সের জনগণ ও অর্থনীতির রসদের যোগান নিশ্চিত করতে সবকিছু করতে হবে।”
প্রস্তাবিত বিলে উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো হল:
# সপ্তাহে গড়ে ৩৫ ঘণ্টা কাজ করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু স্থানীয় শ্রমিক ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ফার্মগুলো কর্মঘণ্টা বাড়াতে বা কমাতে পারবে। সপ্তাহে সর্বোচ্চ কর্মঘণ্টা ৪৬ ঘণ্টা বলা হয়েছে।
# শ্রমিকদের মজুরি কমানোর ক্ষেত্রে ফার্মগুলোকে অবাধ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
# শ্রমিকদের ছাঁটাইয়ের শর্তও অনেক সহজ করা হয়েছে। ফ্রান্সে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের বিষয়টি সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর নজরদারিতে রাখা হয়।
# শ্রমিকদের ছুটি বা বিশেষ ছুটি (মাতৃত্বকালীন ছুটি বা বিবাহের জন্য ছুটি) দেওয়ার ক্ষেত্রে নিয়োগকর্তাদের আরো বেশি করে স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়টিও এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর নজরদারিতে রাখা হয়।