ধূমপানে অকাল মৃত্যুর ঝুঁকিতে এক-তৃতীয়াংশ চীনা তরুণ

চীনে ধূমপান ত্যাগ না করলে ২০ বছরের কম বয়সী প্রতি তিনজন তরুণের একজন অকালে মারা যাবে বলে নতুন এক গবেষণা প্রতিবেদনে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে।

>>রয়টার্স
Published : 9 Oct 2015, 10:20 AM
Updated : 9 Oct 2015, 12:11 PM

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, ‘চাইনিজ একাডেমি অব মেডিসিন সায়েন্স ’এবং ‘চাইনিজ সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল’ এ গবেষণা চালায়। ল্যানসেট মেডিকেল জার্নালে গবেষণাপ্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে।

এতে বলা হয়, চীনের দুই-তৃতীয়াংশ পুরুষ ২০ বছর হওয়ার আগেই ধূমপান শুরু করে। তাদের প্রায় অর্ধেক এ বদঅভ্যাসের কারণে মারা যাবে।

গবেষকরা ১৫ বছর ধরে  চীনজুড়ে দুইবার জরিপ চালান। গবেষণায় হাজার হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করে।

২০১০ সালে চীনে তামাক সেবনের কারণে প্রায় ১০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

বিশ্বে চীনেই সবচেয়ে বেশি মানুষ ধূমপান করে। বিশ্বব্যাপী প্রতি তিনজন ধূমপায়ীর একজন চীনের নাগরিক।

এছাড়া, চীন বিশ্বের সবচেয়ে বড় তামাক উৎপাদনকারী দেশ। দেশটির মোট জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ ধূমপান করে।

তবে সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হল, চীনে মোট পুরুষের অর্ধেকের বেশি ধূমপায়ী। নারীদের মধ্যে এ হার ২ দশমিক ৪ শতাংশ।

চীনে গড়ে একজন ধূমপায়ী দৈনিক ২২টির মতো সিগারেট পান করে। আর তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর আরোপ করে চীন সরকারের বাৎসরিক আয় প্রায়  ৪২ হাজার ৮০০ কোটি ইয়েন।

গবেষকরা বলেন, যদি বর্তমান অবস্থা বিরাজমান থকে তবে ২০৩০ সাল নাগাদ চীনে তামাক জনিত রোগে ভুগে মৃত্যুবরণ করা মানুষের সংখ্যা ২০ লাখ হবে, যাদেরঅধিকাংশই হবে পুরুষ।

ক্রমবর্ধমান এই অকাল মৃত্যু এক সময় মহামারী রূপ নেবে বলেও সতর্ক করে দিয়েছেন গবেষকরা।

চীনে জনবহুল স্থানে ধূমপান এখনও নিষিদ্ধ নয়। দামী ব্র্যান্ডের সিগারেটের প্যাকেট সুন্দর করে সাজিয়ে অনেক সময় উপহার হিসেবেও দেয়া হয়। সাধারন ব্র্যান্ডেরসিগারেট সবার ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে। চীনে সাধারণ মানের একটি সিগারেটের দাম  মাত্র ২ দশমিক ৫ ইয়েন।

চীনের নাগরিকদের কাছে ধূমপান মজ্জাগত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের দৈনন্দিন জীবনে অংশ হয়ে উঠেছে সিগারেট। দেশটিতে খুব কম সংখ্যক ব্যক্তিই ধূমপানের ক্ষতিসম্পর্কে ওয়াকিবহাল।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, চীনে মাত্র ২৫ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি ফুসফুসের ক্যান্সার ও হৃদরোগের মতো অসুখের জন্য ধূমপানকে দায়ী করে।

এছাড়া, চীনে মাত্র ১০ শতাংশ ধূমপায়ী নিজের ইচ্ছায় ধুমপান ত্যাগ করে।  বাকি যারা ধূমপান ত্যাগের চেষ্টা করছে তারা আসলে বাধ্য হয়ে চেষ্টা করছে।

ধূমপানের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে চীন সরকার ধূমপান বিরোধী প্রচার শুরু করেছে।

সহ গবেষক রিচার্ড পেটো বলেন, সব আশা এখনও শেষ হয়ে যায়নি। যদি জনগণকে ধূমপানের কুফল সম্পর্কে বুঝিয়ে এ বদঅভ্যাস ত্যাগ করানো হয় তবে এখনও আশাআছে।

"এ মহামারী আটকে দেয়ার একমাত্র উপায় হল এখনই (ধূমপান) বন্ধ করা। আর আপনি তরুণ হলে ধূমপান শুরু করবেন না।"

অর্থনৈতিক অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে জনগণের মধ্যে সাধারণত ধূমপানের প্রবণতা কমে আসে। যেমন, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি পাঁচ জনের মধ্যে ধুমপায়ীর সংখ্যা একজনেরও কম।

কিন্তু চীনের ক্ষেত্রে বিষয়টি উল্ট হয়ে গেছে। অর্থনৈতিক অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে সেখানে ধূমপায়ীর হার বাড়ছে।

জনসম্মুখে ধূমপান নিষিদ্ধ করার বিষয়ে চীন সরকার কাজ করছে। কিন্তু জনগণের অভ্যাস ও করের মাধ্যমে রাজস্ব আয়ের এটি একটি বড় উৎস হওয়ায় বিষয়টিসেভাবে কার্যকর হচ্ছে না।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বের মোট ধূমপায়ীদের অর্ধেক ধূমপান জনিত রোগে ভুগে মারা যায়।