বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) ১ সভাপতি, ৪ সহ-সভাপতি ও ১৫টি সদস্যপদের জন্য এবার প্রার্থী ৪৬ জন। মোট ১৩৪ জন ভোটার রাজধানীর হোটেল র্যাডিসনে শনিবার দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ভোট দেবেন।
সংস্থাটির ১ সিনিয়র সহ-সভাপতির পদ ভোটাভুটির দরকার হচ্ছে না এবার। মনোনয়ন পত্র কেনা শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাবের সভাপতি মনজুর কাদের, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ডিরেক্টর ইন-চার্জ লোকমান হোসেন ভূইয়া ও আওয়ামী লিগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক দেওয়ান শফিউল আরেফীন টুটুল প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেওয়া সালাম মুর্শেদী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে স্বপদেই বহাল থাকছেন।
দুই প্রার্থী সরে দাঁড়ানোয় সভাপতি পদের লড়াইটা সালাউদ্দিন বনাম আশরাফ। নুরুল ইসলাম নুরু ও গোলাম রব্বানী হেলাল লাখ টাকায় মনোনয়ন পত্র কিনে পরে সরে দাঁড়ান। অবশ্য ২০ এপ্রিল প্রার্থীতা প্রত্যাহারের সময় ফুরিয়ে যাওয়ার পর সরে দাঁড়ানোয় ব্যালট পেপারে থেকে দুজনের নাম। এই দুই জনের মধ্যে নুরু ভিড়েছেন আশরাফের দলে। আর পুরনো মতভেদ ভুলে সালাউদ্দিনের পাশে দাঁড়িয়েছেন হেলাল।
৪ সহ-সভাপতির পদে এবার প্রার্থী ১০ জন। ১২ জন মনোনয়ন পত্র নিলেও টুটুল ও ‘বাঁচাও ফুটবল’ আন্দোলনের সামনের সারি নেতা লোকমান প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেন। ১৫ সদস্য পদের জন্য ভোটাভুটির লড়াইয়ে মোট প্রার্থী এবার ৩২ জন।
ফুটবল অভিজ্ঞতার বিচারে পোটনের চেয়ে ঢের এগিয়ে সালাউদ্দিন। ঘরোয়া ফুটবলের এই কিংবদন্তি ক্লাব ক্যারিয়ারের সোনালী সময়টা কাটিয়েছেন ঐতিহ্যবাহী আবাহনী লিমিটেডে; খেলেছেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রেও। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের এই ফরোয়ার্ডের নাম জড়িয়ে আছে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গেও।
সাফল্য-ব্যর্থতা মিলিয়ে সংগঠক হিসেবেও ঘরে-বাইরে পরিচিত মুখ সালাউদ্দিন। এর আগে দুই দফায় বাফুফে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তার আগে ছিলেন সহ-সভাপতিও। দক্ষিণ এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশনের টানা দুইবারের সভাপতি (বর্তমানেও দায়িত্বে আছে)। ফুটবলের বিশ্বসংস্থা ফিফার মার্কেটিং কমিটির সদস্যও ৬১ বছর বয়সী এই সাবেক ফুটবলার।
দুই মেয়াদে সালাউদ্দিনের সেরা সাফল্য ফুটবলকে নিয়মিত মাঠে রাখা। কোটি টাকার সুপার কাপ, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক গোল্ড কাপের আয়োজন, লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনাকে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে আনা, সিলেট একাডেমি প্রতিষ্ঠা, নিয়মিত ফুটবলার তৈরির আসর পাইওনিয়ার লিগ সচল রাখা, ঢাকার বাইরে একাধিক ম্যাচ আয়োজন-এগুলো তার তৃতীয় মেয়াদে সভাপতির পদে থাকার পাল্লা ভারী করছে।
২৫ দফা প্রতিশ্রুতির মধ্যে জাতীয় দলের সাফল্যের জন্য দেশের সকল ক্লাবকে অর্থ, কোচ দিয়ে অনূর্ধ্ব-১৪, ১৬, ১৮ দল গঠন, বন্ধ হয়ে যাওয়া ফুটবল একাডেমি আবার চালু, আন্তর্জাতিক মানের ফিটনেস সেন্টার গড়ে তোলা, প্রতিটি বিভাগে ফুটবল টার্ফ স্থাপন, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগে একাডেমি গড়ে তোলা, জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ (শেরে বাংলা কাপ) চালু, মাঠ সমস্যার সমাধান, জেলার ক্লাবগুলোর সমম্বয়ে ‘ক্লাব কাপ’ পুনরায় চালুর প্রতিশ্রুতিগুলোই উল্লেখযোগ্য।
জাতীয় দলের ব্যর্থতা, গুটিকয়েক ক্লাবকে নিয়ন্ত্রণে রাখাতে ব্যর্থতা মেনে নিয়ে তৃতীয় দফায় সভাপতির পদে ফিরতে আগ্রহী সালাউদ্দিন। নির্বাচন সামনে রেখে কিছুদিন আগে সংবাদ সম্মেলনে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে ফুটবলকে এগিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি।
“আমি এখানে গণ্ডগোল করতে আসিনি; ফুটবল ফেডারেশনে এসেছি ফুটবল নিয়ে কাজ করতে। ফুটবল আমার ভালোবাসা, এটা আমার আবেগ, এটা আমার জীবন। আমি এখানে নাটক করতে আসিনি, এখানে সবাইকে নিয়ে কাজ করতে এসেছি।”
১৪ দফা প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে অর্থ কোনো সমস্যা হবে না বলেই একাধিকবার জানিয়েছেন আশরাফ। সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনেও তিনি বলেন, “আমি ওয়াদা করছি, জিতলে প্রত্যেক জেলাকে স্পনসর দেওয়া হবে। ৬৪ জেলায় ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনে আমার লোক আছে। জাতীয় দলগুলোকে স্পনসর দিয়ে শক্তিশালী করা হবে। প্রত্যেক জেলাকে স্পনসর দিয়ে ফিক্সড ডিপোজিট করে দেব। সেটার ইন্টারেস্ট দিয়ে চলবে জেলা ফুটবল।”
এরই মধ্যে বাফুফের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে ঢাকায় পা রেখেছেন এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের প্রতিনিধিরা। ফিফা থেকেও প্রতিনিধি আসার কথা। সালাউদ্দিন-আশরাফ এখন তাকিয়ে ভোটারদের দিকে।