কুষ্টিয়ায় কোরবানির জন্য প্রস্তুত সোয়া লাখ পশু

কুষ্টিয়ার খামারিরা এ বছর কোরবানির জন্য সোয়া লক্ষাধিক গরু-ছাগল প্রস্তুত করেছেন বলে প্রাণী সম্পদ বিভাগ জানিয়েছে।

হাসান আলী কুষ্টিয়া প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 August 2017, 06:15 AM
Updated : 11 August 2017, 06:15 AM

জেলার উর্বর মাটিতে ধান-গম, ডাল, তেলবীজসহ নানা জাতের ফসল যেমন হয় তেমনি খামার ও ব্যক্তি পর্যায়ে অনেকে পালন করেন পশু-পাখিও।

জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মো. আশাদুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এ বছর জেলায় ৫৫৩টি বাণিজ্যিক খামারসহ ২০ সহস্রাধিক কৃষক তাদের বাড়িতে কোরবানির হাটে বিক্রির জন্য প্রায় ৯৩ হাজার গরু ও ৪০ হাজার ছাগল প্রস্তুত করেছেন।

অধিকাংশ খামারি প্রশিক্ষিত ও নিজেরা ব্যক্তিগতভাবে সচেতন বলে তিনি জানান।

“যেকোনো সময় তাৎক্ষণিক চিকিৎসা তারা নিজেরাই করে থাকেন। কোনো খামারি বা কৃষক সমস্যা নিয়ে আসলে তাৎক্ষণিকভাবে সম্ভাব্য সব সহযোগিতা করা হয় প্রাণী সম্পদ বিভাগ থেকে।”

সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে খামারি ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেছে তাদের প্রস্তুতি ও কর্মকাণ্ড সম্পর্কে।

দেখা গেছে, খামারগুলোর বেশির ভাগেরই উদ্দেশ্য পশু মোটাতাজা করা। সংকরায়িত ফিজিয়ান, শাহিওয়াল, সিন্ধি, হরিয়ানা ও দেশি জাতের গরু পালন করা হয় এসব খামারে।

কয়েক বছর ধরে তিনটি করে গরু পালন করেন সদর উপজেলার উজান গ্রামের কৃষক আব্দুর রব।

তিনি বলেন, “এ এলাকায় অনাবাদি জমি নেই। সবুজ ঘাসও নেই। তবে এ অঞ্চলে বৃহৎ চাল উৎপাদনের মোকাম থাকায় সেখান থেকে খুদ-কুঁড়া এবং খড়-বিছালি, গমের ভুসি, ভুট্টা, আলু ইত্যাদি সংগ্রহ করে গরুর খাবার প্রস্তুত করি।”

গরু-ছাগল পালন করার প্রধান ক্ষেত্র প্রাকৃতিক চারণভূমি যা এ অঞ্চলে নেই।

সদর উপজেলার হাটশ হরিপুর গ্রামের কৃষক সিরাজ শেখ মনে বলেন, পদ্মায় জেগে ওঠা বিস্তীর্ণ চরে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করা সম্ভব হলে সেখানকার অনাবাদি জমি উল্লেখযোগ্য চারণভূমি হতে পারে।

গরুর খাবার হিসেবে সিরাজ তার অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, ১০০ কেজি ওজনের একটি গরু পালতে খড়-বিছালি ও পানি ছাড়াও প্রতিদিন গরুর ওজনের ৩ শতাংশ হারে পুষ্টিকর খাবার দিতে হয়, যা পাওয়া যায় খুদ-কুঁড়া, গমের ভুসি, ভুট্টা, আলু ইত্যাদি থেকে। এ জন্য দিনে ১৫০ থেকে ২০ টাকা খরচ হয়।

বছর চুক্তিতে পশু চিকিৎসার কাজ করেন ওই গ্রামে এম এ কাইয়ুম।

তিনি বলেন, খামারিরা যেকোনো ছোটখাটো ব্যাপারেও বিশেষ সতর্ক থাকেন। প্রতিবছর একটি গরুর জন্য তারা দুই থেকে চার হাজার টাকা খরচ করেন। জটিল কোনো সমস্যা দেখা দিলে ৮-১০ হাজার টাকাও খরচ হয়। সে রকম ঘটনা সচরাচর ঘটে না।

“তবে গৃহপর্যায়ে কৃষকরা যারা একটা-দুইটা গরু পালন করেন তারা ছোটখাটো কোনো বিষয়ে চিকিৎসা দেন না। বেশি সমস্যা হলে তারা সরকারি প্রাণী সম্পদ বিভাগে যান।”

কোরবানির ঈদ উপলক্ষে খামারিদের স্বাস্থ্যহানিকর কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তিনি বলেন, পশুকে দ্রুত মোটাতাজা করতে কেউ কেউ নিষিদ্ধ হরমোন প্রয়োগ করে। অনেকে ইউরিয়া সার মেশানো খাবার দেয়। তবে এতে বিগত কয়েক বছরে পশুর মৃত্যুর ফলে এ বছর এসব দেখা যাচ্ছে না।”

সদর উপজেলার কুমারগাড়া গ্রামের কাজী ফার্মের মালিক কাজী শওকত জানান, প্রতিবছর কোরবানির বাজারে বিক্রির জন্য ঈদের পর এক-দুই মাসের মধ্যে মোটাতাজা করার জন্য গরু কেনেন তিনি। আর বেচেন ঈদের এক-দুই সপ্তাহ আগে।

তিনি বলেন, পরিচর্যার ওপরই নির্ভর করে রোগবালাই হওয়া বা না হওয়া। খামারের পরিবেশ খোলামেলা, পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সময়মতো গোসল করানোর ব্যবস্থা করতে হয়।

“আমার খামারের অধিকাংশ কাজ রাখালরা করলেও সার্বক্ষণিক সমস্ত বিষয়ে নিবিড়ভাবে লক্ষ রাখি আমি, যেন কোনো রকম ত্রুটি না থাকে। সামান্যতম অসতর্কতার কারণে গরু মৃত্যু হতে পারে।”