সর্প দংশনে মৃত্যুর পরও চলছে ঝাড়ফুঁক

মৌলভীবাজারে সাপের দংশনে এক চা শ্রমিকের মৃত্যুর পরও ঝাড়ফুঁক দেওয়া হচ্ছে; যাকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।

বিকুল চক্রবর্তী মৌলভীবাজার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 August 2017, 05:10 AM
Updated : 9 August 2017, 10:08 AM

নিহত ময়না দাশ কুলাউড়া উপজেলার গাজীপুর চা বাগানের শ্রমিক ছিলেন। তিনি টিলালাইন এলাকার চা শ্রমিক বসন্ত দাশের স্ত্রী।

চা বাগানের ব্যবস্থাপক কাজল মাহমুদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রোববার তাদের বাগানের ৪ নম্বর সেকশনে চা-পাতা তোলার সময় ময়নাকে সাপ দংশন করে। তাকে কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখান থেকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসক।

“কিন্তু শ্রমিকদের পরামর্শে তাকে কুলাউড়া খ্রিস্টান মিশনারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মঙ্গলবার দুপুরের দিকে তিনি মারা যান বলে হাসপাতাল থেকে জানানো হয়।”

এরপর ময়নার পরিবার তাকে বাড়ি নিয়ে ওঝা ডাকে।

ময়নার ছেলে প্রদীপ দাশ বলেন, “মা মারা যাননি বলে শ্রমিকরা মনে করছে। তারা ওঝা ডেকে এনে চিকিৎসা শুরু করে।”

রাত ৮টার দিকে স্থানীয় রবির বাজার এলাকার ওঝা আব্দুল করিম খান ঝাড়ফুঁক শুরু করেন বলে কুলাউড়া পরিষদের সদস্য রামবিলাস দোষার নানকা জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, “ওঝা করিম রাত ১টা পর্যন্ত থেমে থেমে ঝাড়ফুঁক চালিয়ে যান।”

বুধবার সকালে আরেকজন ওঝা ডেকে আবার ঝাড়ফুঁক শুরু করা হয় বলে জানিয়েছেন বাগান ব্যবস্থাপক কাজল মাহমুদ।

কুলাউড়া থানার ওসি শামিম মুসা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ নিহতের পরিবারের সদস্যদের বোঝানোর চেষ্টা করছে।

“কিন্তু তারা বুঝতে নারাজ। পুলিশের কথায় কান না দিয়ে তারা ঝাড়ফুঁক চালিয়ে যাচ্ছে। পুলিশও তাদের নিবৃত্ত করে লাশ সৎকারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।”

ময়নাকে সাপে কামড়েছিল জানিয়ে কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা বলেন, “আমরা তাকে সদরে রেফার করেছি। সেখানে নিয়ে গেলে তাকে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব ছিল।”

এদিকে রামবিলাস দোষার নানকার অভিযোগ, “খ্রিস্টান মিশনারি হাসপাতালে আধুনিক চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা নেই। রোববার বিকালে সাপে কামড়ালেও মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ময়না বেঁচে ছিলেন।

“এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে সচেতন ব্যক্তি হিসেবে বাগান ব্যস্থাপক ময়নাকে সিলেট বা মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে পাঠাতে পারতেন। তাহলে হয়ত তাকে বাঁচানো যেত।”