রায়ে সন্তুষ্ট নয় নিহত চার শিশুর পরিবার

দুই পরিবারের দ্বন্দ্ব থেকে হবিগঞ্জের বাহুবলে চার শিশু হত্যা মামলার রায়ে সন্তুষ্ট হতে পারেননি নিহতদের স্বজনরা।

রাসেল চৌধুরী হবিগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 July 2017, 08:28 AM
Updated : 26 July 2017, 02:52 PM

মামলার প্রধান আসামি আব্দুল আলী বাগালসহ তিনজন খালাস পাওয়ায় ফের আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কায় থাকার কথা জানিয়েছেন তারা।

সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মকবুল আহসান বুধবার দেড় বছর আগের এই চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন।

রায়ে বাগালের ছেলে রুবেল মিয়াসহ তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সাত বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত দুইজনের মধ্যে রয়েছেন তার আরেক ছেলে জুয়েল মিয়া।

রায় ঘোষণার পর মামলার বাদী নিহত শিশু মনিরের বাবা আব্দাল মিয়া তালুকদার সাংবাদিকদের বলেন, “এ রায়ে আমি ও আমার পরিবার সন্তুষ্ট হতে পারছি না। প্রধান আসামি আব্দুল আলী বাগালসহ পাঁচ আসামির সর্ব্বোচ্চ শাস্তি হয়নি। তারা এখন বাড়িতে আসার পরই আমাদের ওপর আক্রমণ শুরু করবে। এজন্য আমি আমার পরিবার নিয়ে আতঙ্কে রয়েছি।”

নিহত আরেক শিশু ইসমাইলের মা মিনারা বেগম বলেন, “আমরা ন্যায়বিচার পাইনি। আমাদের শিশুদের যে নিষ্ঠুরভাবে মারা হয়েছে, সব আসামির সেভাবে ফাঁসি চাই আমরা।”

নিহত চার শিশুর দাদী মহরম চাঁন বলেন, “আমার চার নাতিকে হত্যা করে আমার পরিবার শুন্য করা হয়েছে। আমি এ রায়ে সন্তুষ্ট নই। আমরা উচ্চ আদালতে এর বিচার চাইব।”

নিহত মনিরের বড় ভাই ইব্রাহিম মিয়াও রায়ে অসন্তোষের কথা জানান।

গত বছরে ১২ ফেব্রুয়ারি বিকালে বাড়ির পাশের মাঠে খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হয় বাহুবল উপজেলার সুন্দ্রাটিকি গ্রামের আবদাল মিয়ার ছেলে মনির মিয়া (৭), ওয়াহিদ মিয়ার ছেলে জাকারিয়া আহমেদ শুভ (৮), আব্দুল আজিজের ছেলে তাজেল মিয়া (১০) ও আব্দুল কাদিরের ছেলে ইসমাইল হোসেন (১০)।

মনির সুন্দ্রাটিকি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে, তার দুই চাচাত ভাই শুভ ও তাজেল একই স্কুলে দ্বিতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ত। আর তাদের প্রতিবেশী ইসমাইল ছিল সুন্দ্রাটিকি মাদ্রাসার ছাত্র।

নিখোঁজের পাঁচ দিন পর ইছাবিল থেকে তাদের বালিচাপা লাশ উদ্ধার হলে দেশজুড়ে আলোচনা সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় বাহুবল থানায় নয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন আবদাল মিয়া।

২০১৬ বছরের ২৯ এপ্রিল মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির তৎকালীন ওসি মোক্তাদির হোসেন নয়জনের বিরুদ্ধেই আদালতে অভিযোগপত্র দেন।

সেখানে বলা হয়, সুন্দ্রাটিকি গ্রামের দুই পঞ্চায়েত আবদাল মিয়া তালুকদার ও আব্দুল আলী বাগালের মধ্যে পারিবারিক বিরোধের জেরে ওই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়।

আসামিদের মধ্যে বাচ্চু মিয়া র‌্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে উস্তার মিয়া এবং খালাস পাওয়া বাবুল মিয়া ও বিল্লাল রায় ঘোষণার সময় পলাতক ছিলেন।

মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ পিপি কিশোর কুমার করও প্রধান আসামি আব্দুল আলী বাগালের খালাসে অসন্তোষ জানিয়েছেন।

“পঞ্চায়েতের দ্বন্দ্ব নিরসনে আব্দুল আলী বাগালকে আপস করার কথা বলা হলে বাগাল নিজেই বলেছিলেন, ‘আগে অনেক পাপ করেছি। আর একটি পাপ করেই তওবা করে নেব। কোনো আপস করব না।’ তার এ কথাই প্রমাণ করে তিনি ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন,” সাক্ষীদের বরাতে বলেন তিনি।

এদিকে রায় ঘোষণার পর কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সুন্দ্রাটিকি গ্রামে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে  এএসপি রাসেলুর রহমান জানিয়েছেন।