কুমিল্লায় এইচএসসির ফল বিপর্যয় তদন্তে কমিটি

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর এইচএসসি পরীক্ষায় ফল বিপর্যয়ের কারণ খুঁজে বের করতে একটি তদন্ত কমিটি করেছে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড।

কাজী এনামুল হক কুমিল্লা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 July 2017, 01:42 PM
Updated : 25 July 2017, 01:42 PM

মঙ্গলবার এক সভায় কমিটি গঠনের পাশাপাশি যেসব কলেজের ফল খারাপ হয়েছে, তাদের কাছে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্তও হয়েছে বলে বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কায়সার আহমেদ জানিয়েছেন।

এবার এইচএসসিতে কুমিল্লা বোর্ডে পাসের হার সবচেয়ে কম ৪৯ দশমিক ৫২ শতাংশ। সব বোর্ড মিলিয়ে এবার গড় পাসের হার প্রায় ৬৯ শতাংশ। গতবার কুমিল্লায় পাসের হার ছিল ৬৪ শতাংশ।  

কুমিল্লা বোর্ডের ছয় জেলার ৩৩৬টি কলেজ থেকে মোট ১ লাখ ৩৭২ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল, তাদের মধ্যে পাস করেছে ৪৯ হাজার ৭০৪ জন। জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা গতবারের ১৯১২ জন থেকে কমে হয়েছে ৬৭৮ জন।

গত রোববার ফল প্রকাশের সময় কুমিল্লা বোর্ডের ফল বিপর্যয়ের কারণ খতিয়ে দেখার তাগিদ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তার দুই দিনের মধ্যে মঙ্গলবার দুপুরে শিক্ষা বোর্ডের বৈঠক হয়। এতে বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল খালেকসহ সব কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক জামাল নাসেরকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন হয়। কমিটির সদস্যরা হলেন উপ-পরিদর্শক বিজন কুমার চক্রবর্তী এবং উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (উচ্চ মাধ্যমিক) মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান।

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কায়সার আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ফল বিপর্যয়ের কারণ ও আগামীতে কী করণীয় নির্ধারণ করতে খারাপ ফলাফলকারী কলেজগুলোকে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।”

যেসব প্রতিষ্ঠানকে চিঠি পাঠানো হবে, তাদের জবাব নিয়ে আগামী সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে তদন্ত কমিটিকে।

বোর্ডের সচিব অধ্যাপক আবদুস সালাম জানান, ২০১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কুমিল্লা জেলার ৮৯টি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ২৩টি, লক্ষ্মীপুর জেলার ১৭টি, চাঁদপুর জেলার ২৬টি, ফেনী জেলার ২২টি এবং নোয়াখালী জেলায় ২৪টি।

খারাপ ফলের কারণে শিক্ষাসহ চাকরি ক্ষেত্রে কুমিল্লা পিছিয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন অভিভাবকরা।

কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড

কুমিল্লায় ফল বিপর্যয়ের জন্য বোর্ড কর্মকর্তারা প্রাথমিকভাবে ইংরেজি ও গণিতে খারাপ ফলকে কারণ হিসেবে দেখাচ্ছেন।

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কায়সার রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “ইংরেজিতেই তো ফেল করেছে ৩৮ শতাংশ।”

কুমিল্লার নামি প্রতিষ্ঠান ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আবু তাহের বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রশ্ন ও পরীক্ষা পদ্ধতি কড়াকড়ি হওয়ার কারণেও কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে ফলাফল বির্পযয় ঘটেছে। কলেজগুলোতে ইংরেজির ভালো শিক্ষক না থাকাও কারণ।”

কুমিল্লায় এবার ইংরেজিতে পাসের হার ৬২ দশমিক ০৬ শতাংশ। আর গণিতে পাস করেছে মাত্র ৩৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ পরীক্ষার্থী। 

কুমিল্লায় সবচেয়ে খারাপ ফল হয়েছে মানবিক বিভাগে। বিজ্ঞানে ৭২ দশমিক ৭২ শতাংশ এবং ব্যবসায় শিক্ষায় ৪৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ পরীক্ষার্থী পাস করলেও মানবিকে এই হার ৩৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ।

এই বোর্ডে ফেল করা পরীক্ষার্থীর মধ্যে শুধু ইংরেজিতে ফেল করেছে ৩৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ। গত বছরের তুলনায় এবার ইংরেজিতে ফেলের সংখ্যা ২১ দশমিক ৪৮ শতাংশ পয়েন্ট বেশি।

২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, কুমিল্লায় পাসের হার কোনোভাবেই ৫৯ দশমিক ৮০ শতাংশের নিচে আসেনি।

২০১৩ সালে এ হার ছিল ৬১ দশমিক ২৯ শতাংশ। পরের বছর ২০১৪ সালে পাস করে ৭০ দশমিক ১৪ শতাংশ। ২০১৫ সালে পাসের হার ছিল ৫৯ দশমিক ৮০ শতাংশ। ২০১৬ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬৪ দশমিক ৪৯ শতাংশে।