সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে গাজীপুরের কাশিমপুরের নয়াপাড়ায় ‘মাল্টিফ্যাবস লিমিটেড’ নামে একটি কারখানার ডাইং সেকশনের বয়লায় বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হলে চার তলা ভবনের একপাশের দোতলা পর্যন্ত ধসে পড়ে।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ১৩ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। পরিচয় সনাক্ত হওয়ার পর নওগাঁর পায়েলসহ দশজনের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে জেলা প্রশাসন।
পায়েলের লাশ ঢাকায় তার এক স্বজনের হেফাজতে হাসপাতালে রয়েছে। বুধবার নওগাঁয় নেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে।
আমিরুজ্জামান আমির ওরফে পায়েল নওগাঁ শহরের পার-নওগাঁ চকরামপুর মহল্লার প্রয়াত আজিজুল ইসলামের ছেলে। তিনি মাল্টিফ্যাবস লিমিটেড কারখানায় ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকরি করতেন।
মঙ্গলবার সরেজমিনে চকরামপুর মহল্লা পায়েলের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, প্রতিবেশিরা পায়েলের মা ও বোনকে ঘিরে বসে আছে। সবাই তাদের সান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। বিলাপ করছেন দুজনে।
প্রতিবেশীরা জানান, পায়েলের বাবা ছয় বছর আগে মারা যান। চার সদস্য নিয়ে পরিবারের টানাপড়েন শুরু হয়। পায়েল বগুড়া পলিটেকনিক থেকে ডিপ্লোমা করে ঢাকার উত্তরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি করছিল সে।
একই সঙ্গে পাঁচ বছর ধরে ‘মাল্টিফ্যাবস লিমিটেডে’ ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকরি করতেন পায়েল। পায়েল ছিল পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। তার উপার্জনের পয়সায় তিন মাস আগে ছোট বোন আফসানা মিম পুলনের বিয়ে দিয়েছিল।
সুলতান আহম্মেদ নামে এক প্রতিবেশী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পায়েলের চাকরির সুবাদে পরিবারে কিছুটা স্বচ্ছলতা এসেছে। তার মৃত্যুতে পরিবারটি নিঃস্ব হয়ে গেল। কারখানা থেকে পরিবারটিকে সহযোগিতা করলে ভাল হতো।”
টেলিভিশনের মাধ্যমে ‘মাল্টিফ্যাবস লিমিটেড’ কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণের খবরটি জানতে পারেন পায়েলের বড় বোন আফরোজা।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “টেলিভিশনে বিস্ফোরণের খবর দেখে আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। ভাইয়ের মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়। সেখানে আমাদের আত্মীয় ছিল। তাকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হলে অনেক খোঁজাখুজির পর লাশ সনাক্ত হয়।
“আমাদের দেখার এখন কেউ রইল না। কে খাওয়াবে-কে পড়াবে?”
পায়েলের লাশ গাজীপুরে একটি হাসপাতালের মর্গে আছে বলে জানান আফরোজা।
পায়েলের পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন নওগাঁর জেলা প্রশাসক আমিনুর রহমান।