কড়া নিরাপত্তার শোলাকিয়ায় ঈদ জামাত

কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে দেশের বৃহত্তম ঈদগাহ কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া মাঠে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 June 2017, 08:31 AM
Updated : 26 June 2017, 08:31 AM

সোমবার সকাল ১০টায় ঐতিহাসিক এ মাঠে ঈদুল ফিতরের ১৯০তম জামাত পরিচালনা করেন মাওলানা ফরীদ উদ্দিন মাসঊদ।

নামাজ শেষে জঙ্গিবাদের নির্মূল কামনা ও দেশের শান্তি-সমৃদ্ধি কামনা করে মোনাজাত করা হয়।

এর আগের সব ঈদে মাঠের পশ্চিম প্রান্তের ঈদগাহ জামে মসজিদের খোলা দোতলায় মুসল্লিদের দিকে মুখ করে ইমাম খুতবা পাঠ ও মোনাজাত করে এলেও এবার নিরাপত্তার কারণে মসজিদের নিচতলায় নিরাপত্তা বেষ্টনির মধ্যে জামাত পরিচালনা করেন মাওলানা মাসঊদ।

এর ফলে মাঠে অবস্থানরত মুসল্লিরা তাকে দেখতে পাননি। আনুমানিক দুই লাখের বেশি মুসল্লি ঈদ জামাতে অংশ নেন।

গত বছর ঈদুল ফিতরে সংঘটিত জঙ্গি হামলার ঘটনাটি মাথায় রেখে এবার নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় ৮ প্লাটুন বিজিবি, ২০ প্লাটুন এপিবিএনসহ বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়।

এছাড়া মাঠে সাদা পোশাকে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা নজরদারি করে। প্রবেশ পথগুলোতে সিসি ক্যামেরা ও আটটি ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে মাঠের পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। মাঠে প্রবেশের পূর্বে লম্বা লাইনে দাঁড় করিয়ে প্রত্যেক মুসল্লিকে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশি করে আর্চওয়ে দিয়ে মাঠে প্রবেশ করানো হয়।

সুষ্ঠুভাবে ঈদ জামাতের লক্ষে নিরাপত্তার স্বার্থে সকাল থেকে জেলা শহরের প্রায় সব সড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং মুসুল্লিদের জন্য জায়নামাজ ছাড়া ছাতা ও যে কোনো ব্যাগ বহন নিষিদ্ধ করা হয়। ফলে দূর দূরান্ত থেকে প্রখর খরতাপ সহ্য করে মুসুল্লিরা পায়ে হেঁটে ঈদগাহ মাঠে আসেন। এছাড়া নিরাপত্তার জন্য মাঠের সামনের ১০টি কাতার বাঁশের বেড়া দিয়ে খালি রাখা হয়। সকাল ৮টার দিকে জামাতে অংশ নিতে ইচ্ছুক মুসুল্লিদের নিয়ে ময়মনসিংহ ও ভৈরব থেকে দুটি ট্রেন কিশোরগঞ্জ এসে পৌঁছায়।

অবশ্য এত কড়াকড়ির পরও সকাল থেকেই শোলাকিয়া মাঠের উদ্দেশে পায়ে হাঁটা মুসুল্লিদের ঢল নামে। জামাত শুরুর অনেক আগেই বিশাল মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় এবং অনেক মুসুল্লি জায়গা না পেয়ে আশপাশের রাস্তা ও বাড়ির আঙ্গিনায় অবস্থান নিয়ে নামাজ আদায় করেন।

শোলাকিয়া মাঠের রেওয়াজ অনুযায়ী, জামাত শুরুর ৫ মিনিট আগে তিনটি, ৩ মিনিট আগে দুইটি এবং ১ মিনিট আগে একটি শর্টগানের ফাঁকা গুলি ছুড়ে নামাজের জন্য মুসুল্লিদের সংকেত দেওয়া হয়।

মোনাজাতের আগে সংক্ষিপ্ত বয়ানে জঙ্গি হামলাকারীদের সন্ত্রাসী ও দুস্কৃতিকারী আখ্যায়িত করে মাওলানা ফরীদ উদ্দিন মাসঊদ বলেন, তাদের সাথে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশে কখনো জঙ্গিবাদ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় বাংলাদেশের লাখো আলেমের একসাথে ফতোয়া প্রদান সারা বিশ্বে নজীরবিহীন ঘটনা।”

এর আগে জামাত শুরুর আগে সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় জেলা প্রশাসক মো. আজিমুদ্দিন বিশ্বাস ও পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন খান নিরাপত্তাজনিত কড়াকড়ির কারণে মুসল্লিদের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। 

গত বছরের ৭ জুলাই ঈদুল ফিতরের দিন সকালে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহের অদূরে আজিমুদ্দিন স্কুলের পাশে পুলিশ সদস্যদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায় জঙ্গিরা। এ হামলায় পুলিশের দুই সদস্য, এক জঙ্গি ও পাশের বাড়ির ভিতরে থাকা ঝর্ণা রাণী ভৌমিক নামে এক গৃহবধুসহ চারজন নিহত হয়। আট পুলিশসহ তিন পথচারী গুরুতর আহত হয়।

এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার এজাহারভুক্ত দুই আসামির মধ্যে শফিউল ইসলাম গত বছরের ৫ অগাস্ট কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। বর্তমানে ওই মামলায় আসামি হিসেবে ঘটনাস্থলে আটক জঙ্গি জাহিদুল হক ওরফে তানিম ও জঙ্গিদের আশ্রয়দাতা বাড়ির মালিক আনোয়ার হোসেন কিশোরগঞ্জ কারাগারে আটক রয়েছেন।

শোলাকিয়া ঈদগাহ জামে মসজিদের ইমাম আব্দুস সালাম গোলাপ বলেন, ইতিহাস সূত্রে জানা যায় মসনদ-ই-আলা ঈশা খাঁর ষষ্ঠ বংশধর দেওয়ান হয়বত খান বাহাদুর কিশোরগঞ্জে জমিদারি প্রতিষ্ঠার পর ইংরেজি ১৮২৮ সনে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পূর্ব প্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে প্রায় ৭ একর জমির উপর এ ঈদগাহ প্রতিষ্ঠা করেন।

প্রথম অনুষ্ঠিত জামাতে সোয়া লাখ মুসল্লি অংশ নেন বলে মাঠের নাম হয় “সোয়া লাখি মাঠ”। সেখান থেকে উচ্চারণের বিবর্তনে পরিণত হয়ে নাম ধারণ করেছে আজকের শোলাকিয়া মাঠে। প্রায় ৭ একর আয়তনের বিশাল এই মাঠের মধ্যে মোট কাতার রয়েছে ২৬৫টি।