মিঠু হত্যায় বিএনপি নেতা: পুলিশ

‘সংসদ নির্বাচনে পথ পরিষ্কার করতে’ বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য মামুন রহমান টাকা দিয়ে দলের খুলনা জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক সরদার আলাউদ্দিন মিঠুকে হত্যা করিয়েছেন বলে পুলিশের দাবি।

খুলনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 May 2017, 12:43 PM
Updated : 30 May 2017, 01:03 PM

মঙ্গলবার খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি ডিআইজি দিদার আহমেদ নিজ কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে একথা বলেন।

তবে মিঠুর ভাইয়ের দাবি, প্রকৃত আসামিদের আড়াল করতে পুলিশ একথা বলছে। 

গত বৃহস্পতিবার রাতে খুলনার ফুলতলা উপজেলায় নিজ অফিসে বন্দুকধারীরা গুলি করে হত্যা করে মিঠুকে। একই সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান মিঠুর সহযোগী নওশের গাজী।

ডিআইজি বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরদার আলাউদ্দিন মিঠু ও কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা মামুন রহমান দুজনই খুলনা-৫ (ফুলতলা-ডুমুরিয়া) আসনে বিএনপির প্রার্থী হওয়ার জন্য চেষ্টা করছিলেন।

“এ জন্য মিঠুর সঙ্গে হত্যাকারীদের পারিবারিক বিরোধকে কাজে লাগিয়ে মামুন এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন।”

“মামুন রহমান বিদেশে থাকেন। তিনি ফুলতলা থানা বিএনপির সদস্য সচিব হাসনাত রিজভী মার্শালকে ৩০ লাখ টাকা দিয়েছেন। মার্শাল এই টাকা হত্যাকারীদের দেন।”

ডিআইজি দিদার বলেন, বিএনপি নেতা সরদার আলাউদ্দিন মিঠুসহ জোড়া হত্যার ঘটনায় মিঠুর দেহরক্ষী ফুলতলা উপজেলার দামোদর গ্রামের মিজানুর রহমানের ছেলে শিমুল ভুঁইয়া, মৃত জিন্নাহ ভুঁইয়ার ছেলে মুশফিকুর রহমান রিফাত, একই গ্রামের মৃত আব্দুল হান্নান ভুঁইয়ার ছেলে ফুলতলা থানা বিএনপির সদস্য সচিব হাসনাত রিজভী মার্শালকে গ্রেপ্তার করা হয়।

“গত ২৮ মে এই তিনজন খুলনার বিচারিক হাকিম আদালতে হত্যায় ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।”

তাদের জবানবন্দির ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ডে জড়িত দামোদর পশ্চিমপাড়ার ওমর আলীর ছেলে তাইজুল ইসলাম রনিকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত শটগান সদৃশ্য একটি দেশি কাটা বন্দুক ও ১ রাউন্ড কার্তুজসহ সোমবার ভোররাতে গ্রেপ্তার করা হয় বলে ডিআইজি জানান।

“ইতিমধ্যে তার বিরুদ্ধে ফুলতলা থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশের হেফাজতে (রিমান্ড) আনার প্রক্রিয়া চলছে।”

মিঠু হত্যাকাণ্ডে সরাসরি শিমুল ভুঁইয়া, রেহান, রনি ও মার্শালসহ আটজন জড়িত উল্লেখ করে ডিআইজি বলেন, “তদন্তের স্বার্থে বাকি চারজনের নাম এখনই বলা যাচ্ছে না। কিলিং মিশনে মোট ৫ জন সরাসরি অংশ নিয়েছে।

“মিঠু হত্যাকাণ্ডে চরমপন্থি দল নেতা শিমুল ভুঁইয়া মূল ভূমিকা পালন করেছে। শিমুল ভুঁইয়া মিঠুর বাবা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শেখ আবুল কাশেম হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল। মূলত মিঠুর বাবা ও ভাইয়ের হত্যার সঙ্গে জড়িতরাই এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত।”

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ডিআইজি দিদার আহমেদ বলেন, মিঠু হত্যাকাণ্ড তদন্তে এখনও অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। তবে তদন্ত চলছে। তদন্তে কারও নাম পাওয়া গেলে তিনি যত বড়ই প্রভাবশালী হোন না কেন ছাড় দেওয়া হবে না।

এজন্য পুলিশের প্রতি কোনো চাপও নেই বলেও দাবি করেন ডিআইজি।

প্রেস ব্রিফিংয়ে র‌্যাব-৬ এর অধিনায়ক খোন্দকার রফিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত ডিআইজি (প্রশাসন) একরামুল কবির, অতিরিক্ত ডিআইজি (অপরাধ) হাবিবুর রহমান, ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ, র‌্যাব-৬ এর স্পেশাল কোম্পানি কমান্ডার এনায়েত হোসেন মান্নান উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে, নিহত মিঠুর ভাই সরদার সেলিম অভিযোগ করেন, মিঠু হত্যায় মদদ ও অর্থযোগানদাতা ক্ষমতাশীল দলের একজন প্রভাবশালী নেতা ও জনপ্রতিনিধি এবং  হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত দামোদর ইউপি চেয়ারম্যান চরমপন্থি দল নেতা শিমুল ভুঁইয়ার ভাই শিপলু ভুঁইয়াকে বাঁচানোর জন্য পুলিশ মামলাটি ভিন্নখাতে নেওয়ার চেষ্টা করছে।

খুলনা জেলা বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম মনা বলেন, এর আগেও মিঠুর উপর হামলা করা হয়েছে। মিঠু এ ব্যাপারে মামলাও করেছেন। এ মামলা আমলে নিয়ে পুলিশ তদন্ত করলে এ হত্যাকাণ্ড ঘটত না।

প্রকৃত তদন্তের মাধ্যমে মিঠু হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করার দাবি জানান তিনি।

গত বৃহস্পতিবার রাতে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে ফুলতলার দামোদরে তার নিজ অফিসে বৈঠক করছিলেন মিঠু। এ সময় কালো পোশাক পরা চারটি মোটরসাইকেলযোগে ৭/৮ জন লোক সেখানে গিয়ে মিঠুর মাথায় গুলি করে। এরপর তারা এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকে। ঘটনাস্থলেই মিঠুর মৃত্যু হয়। এ সময় মিঠুর দেহরক্ষী নওশের গাজী অফিসের দরজার শাটার বন্ধ করার চেষ্টা করলে তারা নওশেরকেও গুলি করে। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর রাতে তারও মৃত্যু হয়।