চলনবিলে বন্যা, ধান কাটতে প্রশাসনের মাইকিং

সিলেট, ময়মনসিংহ এলাকায় আগাম বন্যায় হাওরে ব্যাপক ফসলহানির মধ্যে নাটোরের চলনবিলেও বন্যা দেখা দিয়েছে। ডুবে যাওয়ার আগে চাষিদের আধাপাকা বোরো ধান কেটে ফেলতে হচ্ছে।

নাটোর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 April 2017, 04:48 PM
Updated : 25 April 2017, 04:48 PM

জরুরিভিত্তিতে ধান ঘরে তোলার আহ্বান জানিয়ে মঙ্গলবার মাইকিং করছে নাটোরের সিংড়া উপজেলা প্রশাসন।

উজান থেকে আসা আত্রাই ও গুড় নদীর পানি বিলে ঢুকতে শুরু করায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে প্রশাসন ও এলাকার লোকজন। ফসল রক্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এদিকে একই সময়ে সবার প্রয়োজনে ধানকাটা শ্রমিক না পেয়ে চাষিরা দুঃচিন্তায় রয়েছেন।

এলাকাবাসী ও স্থানীয় প্রশাসন জানায়, টানা কয়েক দিনের ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে আত্রাই ও গুড় নদীর পানি অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে।

পানি আত্রাই ও গুড় নদী থেকে উপজেলার জোড় মল্লিকা, নিংগইন ও পাটকোল সেতুর নিচ দিয়ে চলনবিলে ঢুকছে। পানিতে ইতোমধ্যে উপজেলার নূরপুর ও ভাগনাগরকান্দি এলাকার ধান ডুবে গেছে।

এছাড়া ঢলের পানিতে নিংগইন, বালুভরা, হাসপুকুরিয়া, শেরকোল, তেলীগ্রাম, ভাগনাগরকান্দি মাঠের কিছু কিছু ক্ষেতের বোরো ধান ডুবতে বসেছে। পানি ঢোকা অব্যাহত থাকলে কিছু দিনের মধ্যে সমস্ত ধান ডুবে যাবে।  

নিংগইন এলাকার কৃষক আশকান আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তিনি চলনবিলের জোড়মল্লিকা অংশে ১৫ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছেন। ধান পাকতে শুরু করেছে। হঠাৎ নদীর পানি বিলে ঢুকতে শুরু করেছে।

“প্রশাসন মাইকিং করে ধান কাটার পরামর্শ দিচ্ছে; কিন্তু একবারে এত শ্রমিক কোথায় পাব? দুঃচিন্তায় ছটফট করছি।”

পানি ঠেকাতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর পরপরই সোমবার সকালে জোড় মল্লিকা, নিংগইন ও পাটকোল এলাকায় জরুরিভাবে মাটি দিয়ে বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার চালানো হয়েছে।

সিংড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আত্রাই নদীর ঢলের পানি উপচে চলনবিলে ঢুকতে শুরু করেছিল; কিন্তু জরুরিভিত্তিতে মাটি দিয়ে বাঁধ দেওয়ার ফলে পানি ঢোকা বন্ধ হয়েছে।

“তবে ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকলে চলনবিলে পানি ঢুকে পড়লে ফসল নষ্ট হতে পারে।”

সিংড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাজমুল আহসান বলেন, ভারী বর্ষণে নদীর পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে চলনবিলে পানি ঢুকছিল। জরুরিভিত্তিতে সংশ্লিষ্টদের বাঁধ দিতে বলা হয়েছিল। দুটি স্থানে তাৎক্ষণিকভাবে বাঁধ নির্মাণ করাও হয়েছে। এতে ওই দুটি স্থান দিয়ে পানি ঢোকা বন্ধ হয়েছে।

“এছাড়া চাষিদের জরুরিভিত্তিতে পাকা ধান কেটে ঘরে তোলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কৃষকদের সতর্ক করতে মাইকিং করা হচ্ছে।”

জেলা কৃষি দপ্তরের উপ-পরিচালক রফিকুল ইসলাম জানান, গত কয়েক দিনের বর্ষণের পানি নদী হয়ে চলনবিলে ঢুকে কিছুটা বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে শুধু সিংড়া উপজেলার প্রায় ১৫০ হেক্টর জমির পাকা ধান ডুবে গেছে। এ মুহূর্তে পাকা ধান কেটে নেওয়ার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এলাকায় শ্রমিক সঙ্কট দেখা দিয়েছে।

এ ব্যাপারে কৃষি বিভাগের কিছুই করার নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, তবে নতুন করে বৃষ্টি না হলে ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যাবে। উৎপাদনে তেমন একটা প্রভাব পড়বে না।

এপ্রিলের শুরুতে অসময়ে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনার বিস্তীর্ণ এলাকায় বোরো ধান তলিয়ে গেছে। সর্বস্বান্ত হয়েছেন কয়েক লাখ কৃষক। এপ্রিল মাসে দেশে গত ৩৫ বছরের মধ্যে এবার সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে।