রাগীব আলীর প্রতারণা মামলার রায় বৃহস্পতিবার

প্রতারণার মাধ্যমে তারাপুর চা-বাগানের ভূমি আত্মসাতের মামলায় সিলেটের ব্যবসায়ী রাগীব আলী ও তার ছেলে আব্দুল হাইসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলার রায় বৃহস্পতিবার ঘোষণা করা হবে।

সিলেট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 April 2017, 10:15 AM
Updated : 5 April 2017, 10:15 AM

সিলেটের মুখ্য মহানগর হাকিম সাইফুজ্জামান হিরোর আদালতে বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই মামলার রায় ঘোষণার দিন রয়েছে বলে বুধবার আদালতের অতিরিক্ত পিপি মাহফুজুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, এর আগে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি এ মামলার রায় ঘোষণার দিন ঠিক করেছিল আদালত। আসামি আবদুল হাইয়ের মানসিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে উচ্চ আদালতে আবেদন করলে আদালত তার মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও রায় স্থগিতের আদেশ দেয়।

“রোববার স্বাস্থ্যগত কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের মানসিক স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে আদালতে প্রতিবেদন দেওয়ার পর স্থগিত করা রায় ঘোষণার জন্য ৬ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) নতুন তারিখ রাখে আদালত।”

পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয়দের নামে জাল আমমোক্তারনামা তৈরি করে প্রতারণার মাধ্যমে হাজার কোটি টাকার ভূসম্পত্তি দখল করার অভিযোগে এ মামলায় রাগীব আলী, তার ছেলে আব্দুল হাই, মেয়ে রোজিনা কাদির, জামাতা আব্দুল কাদির, ঘনিষ্ঠ আত্মীয় দেওয়ান আব্দুল মজিদ ও চা-বাগানের সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্তকে আসামি করা হয়।

এর মধ্যে মেয়ে রোজিনা কাদির, জামাতা আব্দুল কাদির পলাতক এবং মোস্তাক ও পংকজ জামিনে রয়েছেন।

অতিরিক্ত পিপি মাহফুজুর বলেন, প্রতারণার মামলায় ৩৩ জন সাক্ষীর মধ্যে ২২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। সাক্ষ্যগ্রহণ সমাপ্ত ঘোষণা করা হয় গত ২ ফেব্রুয়ারি। আর ২৩ ফেব্রুয়ারি মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়।

১৯৯০ সালে ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক জালিয়াতি করে প্রতারণার মাধ্যমে ভুয়া সেবায়েত সাজিয়ে তারাপুর চা-বাগানের ৪২২ দশমিক ৯৬ একর দেবোত্তর সম্পত্তি রাগীব আলী দখল করেন বলে অভিযোগ ওঠে।

১৯৯৯ সালের ২৫ অগাস্ট ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তারাপুর চা বাগান নিয়ে বিশেষ আলোচনা হয়। পরে ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের উপ-কমিটি গঠন করা হয়।

উপ-কমিটি চূড়ান্ত সুপারিশে তারাপুর চা-বাগান অবৈধভাবে জালিয়াতির মাধ্যমে দলিলপত্র সৃষ্টি করে প্রতারণামূলকভাবে লিজি হিসেবে দখলে রাখার জন্য রাগীব আলীর বিরুদ্ধে অবিলম্বে ফৌজদারি ও দেওয়ানি উভয়বিধ মামলা করতে বলে।

প্রতারণার মাধ্যমে হাজার কোটি টাকার এই ভূ-সম্পত্তি আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৫ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর কোতোয়ালি থানায় রাগীব আলীর বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেন সিলেট সদরের তৎকালীন ভূমি কমিশনার এসএম আব্দুল কাদের।

তদন্ত শেষে গত বছরের ১০ জুলাই আদালতে দুটি মামলার অভিযোগপত্র দেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সারোয়ার জাহান।

গত ১২ অগাস্ট আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। পরে ২৩ নভেম্বর ভারতের করিমগঞ্জ ইমিগ্রেশন পুলিশের হাতে রাগীব আলী এবং এর আগে ১২ নভেম্বর আবদুল হাই গ্রেপ্তার হন।

এর আগে ওই চা-বাগানের বন্দোবস্ত নিয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক (চিঠি) জালিয়াতির মামলায় গত ২ ফেব্রুয়ারি রাগীব ও তার ছেলে হাইকে চারটি ধারায় মোট ১৪ বছর কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।

সেইসঙ্গে দুই আসামিকে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা; অনাদায়ে আরও তিন মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

তাছাড়া পলাতক থাকা অবস্থায় পত্রিকা সম্পাদনাকে প্রতারণা বিবেচনা করে রাগীব আলী ও তার ছেলে আবদুল হাইকে গত ৯ মার্চ এক বছর করে কারাদণ্ড ও ৫০০ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও একমাসের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।