চিকিৎসকের বিরুদ্ধে রোগীর কিডনি অপসারণের অভিযোগ

নাটোরে এক রোগীর কিডনি অপসারণের অভিযোগে তিন চিকিৎসকসহ একটি বেসরকারি হাসপাতালের পরিচালকের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে।

নাটোর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Feb 2017, 04:01 PM
Updated : 8 Feb 2017, 04:01 PM

বুধবার দুপুরে সিংড়ার ছোট চৌগ্রামের সাজ্জাদ আলীর ছেলে ফজলু বিশ্বাস তার স্ত্রীর কিডনি অপসারণের অভিযোগে সিংড়ার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালতে মামলাটি করেন।

আদালত আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি রোগীকে চিকিৎসার কাগজপত্রসহ সশরীরে আদালতে হাজির হতে বলেছে বলে বাদীর আইনজীবী বকুল হোসেন।

মামলার আসামিরা হলেন সার্জন এম এ হান্নান, চিকিৎসক আমিরুল ইসলাম, চিকিৎসক এসবি হালদার ও নাটোর শহরের জনসেবা হাসপাতালের পরিচালক রফিকুল ইসলাম।

মামলা অভিযোগ করা হয়েছে, ফজলু বিশ্বাসের স্ত্রী মোছা. আছমা (৫০) পেটের ব্যথা নিয়ে ২০১৫ সালের ১২ জুন নাটোর শহরের জনসেবা হাসপাতালে ভর্তি হয়। সেখানে পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে কর্তব্যরত চিকিৎসক আশিকুর রহমান রোগীর দুটি কিডনি স্বাভাবিক থাকার কথা বললেও মূত্রথলির কিছু সমস্যার কথা জানান।

“পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে ওইদিন ওই হাসপাতালে কর্তব্যরত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক (সার্জারি) এমএ হান্নানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি অস্ত্রপোচারের পরামর্শ দেন। ওইদিন রাতেই তিনি অস্ত্রপোচার করেন।”

অভিযোগে আরও বলা হয়, সাতদিন রাখার পর আছমাকে ১৯ জুন হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে রোগী সুস্থ না হওয়ায় ২০১৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি আবারও তাকে জনসেবা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ওইদিন হাসপাতালের সনোলজিস্ট এ বি সিদ্দিক পরীক্ষা করে জানান যে, তার শরীরের ডান কিডনি অনুপস্থিত এবং বাম কিডনি স্বাভাবিক।

“এ কথা শোনার পর রোগী ও তার স্বজনরা তাৎক্ষণিক বিষয়টি হাসপাতালের চিকিৎসক আমিরুল ইসলামকে জানান। তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে রোগীকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।”

কিডনি না থাকার বিষয়টি আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য পরবর্তীতে নাটোরের আইডিয়াল ডায়াগনস্টিক সেন্টারের চিকিৎসক আব্দুস সামাদকে দিয়ে আবারও রোগীর সনোগ্রাফি করানো হলে সেখানেও একই ফলাফল পাওয়া যায় বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।

মামলায় আরও অভিযোগ করা হয়, এভাবে দিনের পর দিন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে ঘোরাতে থাকে। পরে গত ৩ ফেব্রুয়ারি রোগী ও তার স্বজনরা জনসেবা হাসপাতালে গিয়ে অস্ত্রপোচারকারী চিকিৎসক এমএ হান্নানের কাছে কিডনি অপসারণের অভিযোগ করেন। তখন স্বজনদের সাথে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ব্যাপক হাঙ্গামা হয়। এক পর্যায়ে নাটোর সদর থানার পুলিশ এসে চিকিৎসক এমএ হান্নানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানায় নিয়ে গেলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

পরে রোগীকে ৪ ফেব্রুয়ারি বগুড়ার পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার লিমিটেডে উন্নত পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়। সেখানেও রোগীর ডান কিডনি দৃশ্যমান নয় প্রতিবেদন দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করা হয়।

বাদী আরও অভিযোগ করেন, সার্জন এম এ হান্নান, চিকিৎসক আমিরুল ইসলাম, চিকিৎসক এসবি হালদার ও জনসেবা হাসপাতালের পরিচালক রফিকুল ইসলাম পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার অসৎ উদ্দেশ্যে তার স্ত্রী শরীর থেকে কিডনি অপসারণ করে অঙ্গহানী করেছেন। এ ব্যাপারে প্রতিবাদ জানালে তারা বাদীকে প্রাণনাশের হুমকি দেন।

মামলার ব্যাপারে জনসেবা হাসপাতালের পরিচালক রফিকুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।

তবে অস্ত্রপোচারকারী চিকিৎসক এমএ হান্নান তার ফেইসবুক পেজে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, অভিযোগের ব্যাপারে তিনি মর্মাহত। রোগীরা চিকিৎসা নিতে তার কাছে যান অথচ সাংবাদিকের কাছে বিচার দেন। সাংবাদিকরা তাতে রং লাগিয়ে প্রচার করেন।

“কিডনির পাথর ও মূত্রথলির পাথর অপারেশন করা হয়। এ সময় কোনো কিডনি অপসারণ করা হয়নি। পরবর্তীতে হয়ত একটা কিডনি ছোট হয়ে গেছে। এ কারণে সনোগ্রাফিতে দেখা যাচ্ছে না।”

এ সম্পর্কে বিজ্ঞানসম্মত ধারণা না থাকায় রোগীর লোকজন মিথ্যা অভিযোগ করছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।