পোড়াদহের মেলায় লাখ টাকার বাঘাড়

বগুড়ার পোড়াদহে শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী ‘জামাই’ মেলা, এবার মেলায় একটি বাঘাড়ের দাম হাঁকা হয়েছে এক লাখ ২০ হাজার টাকা।

জিয়া শাহীন বগুড়া প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Feb 2017, 11:39 AM
Updated : 8 Feb 2017, 03:44 PM

বুধবার শুরু হওয়া মেলায় আসা ওই বাঘাড়টির ওজন ৮২ কেজি।

প্রতিবছর মাঘের শেষ বুধবার মেলা শুরু হওয়া এই মেলাকে স্থানীয়রা সন্ন্যাসীর মেলা, মাছের মেলা; আবার কেউবা জামাই মেলা বলে থাকে।

গাবতলী উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নের গোলাবাড়ি এলাকায় ইছামতি নদীর তীরে এ মেলা উপলক্ষে আশে পাশের গ্রাম এবং উপজেলায় বাড়িতে বাড়িতে আগমন হয় আত্মীয় স্বজনদের।

মেলার প্রথম দিন বুধবারকে বলা হয় জামাই বরণ এবং দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার বউমেলা। ওই দিন শুধু মেয়েরাই কেনাকাটা করবে মেলায়।

সরেজমিনে দেখা যায়, ইছামতি নদীর তীরে হাজার হাজার মানুষের কেনা-কাটার ধুম। মেলার বিশেষ ঐতিহ্য বড় বড় মাছ এবং বড় বড় মিষ্টি।

এবার পোড়াদহ মেলায় ৮২ কেজি ওজনের এক বাঘাড় এসেছে। মাছটি এনেছেন মহিষবাথান গ্রামের দুখু মিয়া। মাছটির দাম হাঁকা হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা।

গাবতলী উপজেলার মড়িয়া গ্রামের মাছ বিক্রেতা ইসলাম বলেন, এবারের মেলায় তিনি ৪০ কেজি ওজনের কাতলা মাছ নিয়ে এসেছেন। মাছটির দাম হাঁকা হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। 

ছবি: মুস্তাফিজ মামুন/ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

ছবি: মুস্তাফিজ মামুন/ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

এছাড়া মেলায় উঠেছে বোয়াল মাছ, কাতল মাছ, রুই, পাঙ্গাস, চিতল মাছসহ সব ধরনের মাছ। পাঁচ কেজি ওজন থেকে শুরু করে ৬৫ কেজি ওজনের মাছ বিক্রি হচ্ছে মেলায়।

মাছের পাশাপাশি মেলায় বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি উঠেছে। মিষ্টিগুলো আবার বিভিন্ন আকৃতির। কোনোটা মাছ আকৃতির, আবার কোনোটা বিভিন্ন পশুপাখির আকৃতির।

সৈয়দ আহম্মেদ কলেজ এলাকার ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাকের দোকানে মাছ আকৃতির ২০ কেজি ওজনের এ মিষ্টি বিক্রি হয়েছে আট হাজার টাকায়।

মেলায় মাছ কিনতে আসা আসলাম উদ্দিন বলেন, তিনি বিদেশে থাকেন। ঈদে আসতে পারেনি। কিন্ত মেলা উপলক্ষে বাড়িতে এসেছেন।

মালিয়ানডাঙ্গা গ্রামের রেহান বলেন, মেলা উপলক্ষে তাদের বাড়িতে আত্মীয় স্বজনে ভরে গেছে। মেলায় মাছ ও মিষ্টি কিনতে এসেছেন।

এ মেলায় মাছ, মিষ্টি, আসবাবপত্র, পান সুপারী, তৈজসপত্র, খেলনা থাকলেও মাছের জন্য বিখ্যাত।

মেলার পরিচালনার দায়িত্বে থাকা মহিষাবান ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম জানান, হাজার হাজার মানুষের পদচারণা হয়ে থাকে এ মেলায়। আশপাশের ২০ গ্রামের মানুষের কাছে বৃহত্তম উৎসব। মেলাকে কেন্দ্র করে জামাই ও মেয়েসহ আত্মীয় স্বজনদের দাওয়াত দেওয়া হয়ে থাকে।

ছবি: মুস্তাফিজ মামুন/ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

ছবি: মুস্তাফিজ মামুন/ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

তিনি বলেন, “আমরা দাদার কাছ থেকে শুনেছি প্রায় আড়াইশ বছর আগে থেকে এই মেলা হয়ে আসছে। পোড়াদহ মেলা সংলগ্ন ইছামতি নদীতে প্রতিবছর মাঘের শেষ বুধবারে একটি কাতলা মাছ তার পিঠে সোনার চালুনি নিয়ে ভেসে উঠত।

“মাঘের শেষ বুধবার এই ঘটনা দেখার জন্য লোকজন জড়ো হতো। পরে এক সন্ন্যাসী নদীর তীরে একটি বটগাছের নিচে পূজার আয়োজন করেন।ওই পূজাকে ঘিরে মেলার শুরু হয়।”