চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে চান তারামন বিবি

কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলার কাচারীপাড়ার বাড়িতে অসুস্থতার যন্ত্রণা নিয়ে দিন কাটছে বীরপ্রতীক তারামন বিবির।

আহসান হাবীব নীলু কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 March 2016, 06:13 AM
Updated : 26 March 2016, 07:25 AM

নানা অসুখ বাসা বেঁধেছে শরীরে, নাকে লাগানো রয়েছে অক্সিজেন মাস্ক, কিছুক্ষণ পর পর হাঁপিয়ে উঠছেন। শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যার জন্য কথা বলতে কষ্ট হয়।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে একান্ত আলাপে বিদেশে গিয়ে উন্নত চিকিৎসার নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, “আমার লাঙ্গসের (ফুসফুস) ক্ষতি হইছে, নিঃশ্বাস নিতে পারি না। ঘর থেকে বের হতে পারি না। ১৯৯৬ সাল থেকে দেশের বাইরে চিকিৎসার জন্য যাওয়ার দাবি করে আসছি। কিন্তু আজও সে সুযোগ পাইনি।” 

১৯৭১ পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে সম্মুখ সমরে লড়া তারামন বিবি বলেন, “বিদেশ গিয়ে চিকিৎসা নিলে হয়ত ভালো হতাম।”

এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। সেইসঙ্গে নিজের সুস্থতা কামনা করে দেশবাসীর কাছে দোয়াও চেয়েছেন তিনি।

এছাড়া রৌমারী, রাজিবপুরকে মুক্তাঞ্চল ঘোষণার দাবি জানান তারামন বিবি।

তিনি বলেন, “স্বাধীনতা যুদ্ধে রৌমারী, রাজিবপুর ছিল মুক্ত এলাকা। ১৯৭১ এ পাক হানাদার বাহিনীকে রৌমারী, রাজিবপুরের মাটিতে পা রাখতে দেই নাই।

“মরার আগে এই এলাকাকে সরকারের কাছ থিক্যা মুক্ত এলাকা হিসেবে সম্মানিত করবার ঘোষণা শুনতে চাই। রৌমারী, রাজিবপুরকে মুক্তাঞ্চল ঘোষণা করলে আমি মইরাও শান্তি পামু।”

 

১১ নম্বর সেক্টরের কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে যুদ্ধে অংশ নেন তারামন। তাকে অস্ত্র চালানো, যুদ্ধকৌশলসহ গুপ্তচর বৃত্তি শেখান ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের প্লাটুন কমান্ডার মুহিব হালদার।

“মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা, তাদের অস্ত্র লুকিয়ে রাখা, পাকিস্তানিদের খবর সংগ্রহের পাশাপাশি সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেই। রৌমারী, রাজিবপুর ও চিলমারী, উলিপুর উপজেলার চরাঞ্চল ছিল ১১ নম্বর সেক্টরের মানকা চর সাব-সেক্টরের অধীনে।”

“ক্যাম্পে রান্না বান্নাও করছি আবার যুদ্ধে গিয়া বন্দুকও চালাইছি।”

 

১৯৫৪ সালের ১৩ ডিসেম্বর কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলা (রৌমারী উপজেলার সাবেক ৬ নম্বর ইউনিয়ন) কোদালকাটি ইউনিয়নের শংকর মাধবপুর গ্রামে জন্ম তারামন বিবির। নদী ভাঙনের কবলে পড়ে বর্তমানে উপজেলা সদরের কাচারি পাড়া গ্রামে বসবাস করছেন স্বামী সন্তান নিয়ে।

মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ সরকার তারামন বিবিকে বীর প্রতীক খেতাব দেয়। তারপর দীর্ঘ ২২ বছর তার পরিচয় সবার কাছে ছিল অজানা। পরে ১৯৯৫ সালের নভেম্বর মাসে প্রচারের আলোয় আসেন এ বীর প্রতীক নারী।

লোকচক্ষুর আড়ালে জীবন কাটানো এ বীরপ্রতীককে কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলার শঙ্কমাধবপুর গ্রাম থেকে আবিষ্কার করা হয়। অন্যের বাড়িতে কাজ করে খেতেন তিনি।

ময়মনসিংহ আনন্দ মোহন কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক বিমল কান্তি দে তাকে খুঁজে বের করেন। ওই বছর ১৯ ডিসেম্বর সরকারের পক্ষ থেকে তারামন বিবির হাতে সম্মাননা তুলে দেওয়া হয়।

তারামন বিবি বলেন, “আর অপেক্ষা নয়; সকল যুদ্ধাপরাধীদের এ সরকারে আমলেই ফাঁসির রশিতে ঝুলাতে হবে। হত্যাকারী, ইজ্জতহরণকারী রাজাকার-আলবদর-আল শামসদের ক্ষমা নাই।”