র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহামুদ খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, বৃহস্পতিবার রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে র্যাব-৫ এর একটি দল ওই তিনজনকে আটক করে।
তাদের কাছ থেকে পিস্তল, রিভলবার, গুলি ও চাপাতি উদ্ধার করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
এই তিনজন হলেন- রংপুর মহানগর যুবদলের দুই সদস্য রাজিব হাসান সুমন ওরফে মেরিল সুমন (২৮) ও নওশাদ হোসেদ রুবেল ওরফে ব্ল্যাক রুবেল (২৬) এবং রংপুর মহানগর যুবলীগের সদস্য কাজল চন্দ্র বর্মন ওরফে ভরসা কাজল।
এদের মধ্যে সুমনের বাড়ি রংপুরের কোতায়ালি থানার শালবন শাহীপাড়ায়। রুবেলের বাড়ি একই থানার সেন্ট্রাল রোড জুম্মাপাড়ায় এবং কাজলের বাড়ি শহরের শালবন মিস্ত্রীপাড়া শিয়ালুর মোড়ে।
রাজশাহী র্যাব-৫ এর অধিনায়ক লেফটেনেন্ট কর্নেল মাহাবুব আলম বলেন, “প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এই তিনজন কুনিও হোশি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেছেন।”
তিনি জানান, গভীর রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার বিদিরপুর ও নয়াগোলার সাতনইল মহল্লা থেকে তাদের আটক করা হয়।
“রাত সোয়া ১টার দিকে সাতনইলে সন্দেহজনকভাবে একজনকে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। র্যাবের গাড়ি দেখে পালানোর চেষ্টা করলে তাকে আটক করে একটি পিস্তুল, ম্যাগাজিন ও দুটি গুলি পাওয়া যায়।”
সাতনইলে আটক ওই যুবকই সুমন। পরে তার দেওয়া তথ্যে বিদিরপুরে অভিযান চালিয়ে রাত সোয়া ৩টার দিকে আটক করা হয় নওশাদ ও কাজলকে।
এই দুজনের কাছে একটি রিভলবার ও একটি চাপাতি পাওয়া যায় বলে তিনি জানান।
র্যাব-৫ কর্মকর্তা মাহাবুব বলেন, “জাপানি নাগরিক কুনিও হোশি হত্যাকাণ্ডের পর থেকে এরা পলাতক ছিলেন এবং বিভিন্ন সময় জায়গা পরিবর্তন করে থাকছিলেন।”
রাজিবের বিরুদ্ধে হত্যাসহ আটটি মামলা, রুবেলের বিরুদ্ধে দুটি হত্যা মামলা এবং কাজলের বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা রয়েছে রংপুরে।
শুক্রবার তাদের চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানায় হস্তান্তর করে অস্ত্র আইনে মামলা করা হয়েছে বলে জানান মাহাবুব।
কুনিও হোশি হত্যার ঘটনা তদন্তে পুলিশ সদর দপ্তরের গঠন করা পাঁচ সদস্যের কমিটির প্রধান রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি হুমায়ুন কবীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গ্রেপ্তার তিনজনকে রংপুরে এনে এই হত্যা মামলায় আদালতে হাজির করা হবে।”
রংপুর কোতোয়ালি থানার ওসি আবদুল কাদের জিলানী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সুমন, রুবেল ও কাজল থানার তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। তাদের বিরুদ্ধে হত্যা, ছিনতাইসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের একাধিক মামলা রয়েছে।”
র্যাব এই তিনজনকে বৃহস্পতিবার রাতে আটকের কথা বললেও গতমাসেই তাদের ‘সাদা পোশাকধারীরা’ তুলে নিয়ে গিয়েছিল বলে পরিবারের অভিযোগ।
সুমনের স্ত্রী সামিয়া আক্তার গত ৭ অক্টোবর রংপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করেন, ৬ অক্টোবর বেলা ১টার দিকে র্যাব পরিচয়ে কয়েকজন শহরের হাজীর হাট বাসস্ট্যান্ড থেকে এই যুবদল নেতাকে নিয়ে যায়।
একই দিন সুমনের সন্ধান চেয়ে প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনও করে দলটির কর্মীরা।
রংপুর মহানগর যুবদলের নেতা রুবেলের বাবা আব্দুল লতিফের অভিযোগ, ১০ অক্টোবর রাতে রুবেলকে রাজশাহী শহরে তার শ্বশুরবাড়ি থেকে র্যাব পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন থেকে ছেলের কোনো সন্ধান পাননি তারা।
আর যুবলীগের সদস্য কাজলের বাবা বাবলু চন্দ্র বর্মণ জানান, গত ৮ অক্টোবর রাত ১১টার দিকে ‘সাদা পোশাকের কয়েকজন লোক’ আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য পরিচয় দিয়ে তার ছেলেকে মিস্ত্রীপাড়ার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়।
তবে এই তিনজনকে আগে আটক করার কথা অস্বীকার করেছেন কাউনিয়ার ওসি জাহিদুল ইসলাম।
রংপুরের র্যাব-১৩ এর অধিনায়ক মেজর আবু ফারহান করিমও বলেছেন, “আমরা এই নামে আগে কাউকে গ্রেপ্তার বা আটক করিনি।”
আইএস এই হত্যার দায় স্বীকার করেছে বলে জঙ্গি হুমকি পর্যবেক্ষণকারী ওয়েবসাইট ‘সাইট ইন্টিলিজেন্স গ্রুপ’ জানালেও সরকারের দাবি, এর কোনো ‘ভিত্তি’ পাওয়া যায়নি।
নগরীর মুন্সিপাড়ায় জাকারিয়া বালার বাড়িতে ভাড়া থাকতেন কুনিও। তিনি খুন হওয়ার পরপরই পুলিশ জাকারিয়া বালা, তার শ্যালক হীরা, স্থানীয় রিকশাচালক মোন্নাফ আলী, যে বাড়ির সামনে ওই জাপানি নিহত হন, সেই বাড়িওয়ালার ছেলে মুরাদ হোসেন, রংপুর মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আনিছুর রহমান লাকু ও সদস্য রাসেদ উন নবী খান বিপ্লবকে আটক করে।
পরে কাউনিয়া থানার ওসি রেজাউল করিমের দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় হীরা ও বিপ্লবকে। হীরাকে দুই দফায় মোট ১৫ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।
এছাড়া রিকশাচালক মোন্নাফ আলী পুলিশের হেফাজতে থাকলেও এ মামলায় এখনো তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি।