শনিবার বেলা ১১টার কিছুক্ষণ আগে কাউনিয়া উপজেলার আলুটারি মহিষওয়ালা মোড়ে কুনিও হোশি (৬৬) নামে ওই জাপানিকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, তিন মুখোশধারী তাকে গুলি করে মোটরসাইকেলে চড়ে পালিয়ে যায়।
এর আগে ঢাকায় কূটনীতিক পাড়ায় ইতালির চেজারে তাভেল্লাকে গুলি করে হত্যার ঘটনায়ও খুনিরা পালানোর জন্য মোটরসাইকেল ব্যবহার করেছিল।
রংপুরের পুলিশ সুপার আব্দুর রাজ্জাক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, জাপানি নাগরিক কুনিও হোশির খুনিরা মুখোশ পরা ছিল।
“দুর্বৃত্তরা মোটর সাইকেলে এসে তাকে তিনটি গুলি করে। একটি গুলি তার বুকে, একটি ডান হাতে এবং আরেকটি কাঁধে বিদ্ধ হয়,” বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন কাউনিয়া থানার ওসি রেজাউল করিম।
চলতি বছরের মে মাসে বাংলাদেশে এসেছিলেন কুনিও হোশি। রংপুর শহরের মুন্সীপাড়ায় যার বাড়িতে তিনি থাকতেন তার নাম জাকারিয়া বালা।
জাকারিয়া বালার দুই ভাই জাপানে থাকেন, তাদের মাধ্যমে কুনিওর বাংলাদেশে আসা এবং দুই একরের ঘাসের খামার ইজারা নেওয়া।
জাকারিয়া সাংবাদিকদের বলেন, “আমি নিজেও দীর্ঘদিন জাপানে ছিলাম। আমার পরিবারের অনেকে এখনও জাপানে থাকেন। সেই সূত্রে কুনিও হোশি রংপুরে এসে আমার বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। তিনি একাই থাকতেন।”
পুলিশ সুপার রাজ্জাক বলেন, আটক মোন্নাফের রিকশায় প্রতিদিন সকালে শহর থেকে খামারে যেতেন কুনিও হোশি।
রিকশাচালককে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, “কুনিও আজ সকালেও রিকশায় করে মাহিগঞ্জ-হারাগাছা সড়ক থেকে একটি কাঁচা রাস্তা ধরে ৫০০ গজ দূরের নিজের ইজারা নেওয়া খামারের দিকে যাচ্ছিলেন। মাঝ পথে আলুটারি মহিষওয়ালা মোড়ে সড়কের পাশে দাঁড় করানো একটি মোটরসাইকেলে এক মুখোশধারী বসা ছিল। আর সামনের দিক থেকে আসে আরও দুই মুখোশধারী।
“তারা কুনিও হোশিকে গুলি করে দ্রুত দৌড়ে মোটরসাইকেলে উঠে পালিয়ে যায়। পরে পাশের বাড়ি থেকে মুরাদ বের হয়ে কুনিও হোশিকে একটি অটোরিকশায় তুলে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।”
হীরা সাংবাদিকদের বলেন, “আমার জরুরি কাজ থাকায় হোশি কুনিও হোশি একাই খামারে গিয়েছিলেন।”
কুনিও হোশির সঙ্গে থাকা পাসপোর্ট অনুযায়ী তার বয়স ৬৬ বছর। তার ভিসার মেয়াদ রয়েছে ২০১৬ সালের ৩১ মে পর্যন্ত।
রংপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জয়নুল আবেদীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মাল্টিপল ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে আসেন কুনিও হোশি। একটি প্রজেক্ট তৈরি করে ফান্ড গঠনে সহায়তা করছিলেন তিনি।”
তিনি বলেন, কিছুদিন আগে ওই কোনিও হোশি ভারত গিয়েছিলেন। সর্বশেষ গত ২৮ অগাস্ট বাংলাদেশে আসেন এই জাপানি নাগরিক।
তার মৃতদেহ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে।
হত্যাকাণ্ডের পর জেলা পুলিশ সুপার ছাড়াও জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ার ও র্যাব-১৩ এর উপ অধিনায়ক আবু রায়হান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ঘটনাস্থলে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) সদস্যদের তৎপর দেখা যায়।
পিবিআই প্রধান উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মাহবুবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা এই ঘটনাটিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। স্থানীয়ভাবে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছে। তবে টেকনিক্যাল বিষয়ে ঢাকা থেকে সরাসরি সহায়তা করা হচ্ছে।”
জাপান দূতাবাসের একটি প্রতিনিধি দল রাতে রংপুর পৌঁছে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিনিধি জানিয়েছেন।
‘অস্থিতিশীলতা তৈরির ষড়যন্ত্র’
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেছেন, “কুনিও হোশির বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়েছি। তিনি অত্যন্ত বাঙালিবান্ধব ছিলেন। গ্রামের মানুষের সঙ্গে মিলে মিশে চলতেন। নিরেট ভদ্রলোক। তাকে এভাবে কেউ হত্যা করতে পারে না।”
ঢাকায় ইতালীয় নাগরিক হত্যা আর রংপুরে জাপানি নাগরিককে হত্যার উদ্দেশ্য একই মন্তব্য করে তিনি বলেন, “দেশকে অস্থিতিশীল করতে এমনটি করা হচ্ছে।”
‘দায় স্বীকার আইএসের’
হোশি কুনিওকে হত্যার দায় স্বীকার করে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) টুইট করেছে বলে রয়টার্সের খবর।
এর আগে গত সোমবার ঢাকায় ইতালীয় নাগরিক চেজারে তাভেল্লা খুন হওয়ার পরও আইএস ওই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে বার্তা দেয় বলে জঙ্গি হুমকি পর্যবেক্ষণকারী ওয়েবসাইট ‘সাইট ইন্টিলিজেন্স গ্রুপ’ জানিয়েছিল।
তবে ওই হত্যাকাণ্ডে আইএসের সংশ্লিষ্টতার কোনো প্রমাণ ‘পাওয়া যায়নি’ জানিয়ে তাদের দাবি নাকচ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
দ্রুত তদন্ত চায় যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে হত্যায় জড়িত অপরাধীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে বার্নিকাট বলেন, “এ হত্যাকাণ্ডের সব দিক বিবেচনায় নিয়ে অনুসন্ধান চালানোর জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাই।”