অবরোধকারী বিএনপি বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বলেছে, “যে কোনো উপায়ের পরিণতি কি তাহলে আরও অনেক লাশ খালে-বিলে-নদীতে ভেসে উঠবে? যৌথবাহিনী কর্তৃক চলবে গ্রামের পর গ্রামে তাণ্ডব দাহন, বিরোধী দলের আরও অসংখ্য নেতা-কর্মী হত্যার পর বলা হবে বন্দুকযুদ্ধের কাহিনী।”
প্রায় এক মাস ধরে বিএনপি জোটের অবরোধে নাশকতায় জানমালের ক্ষয়ক্ষতির প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার পুলিশকে যে কোনো উপায়ে সন্ত্রাস দমনের নির্দেশ দিয়ে তার দায়-দায়িত্ব নেওয়ার ঘোষণাও দেন।
তার ওই বক্তব্যে উদ্বেগ জানিয়ে পাঠানো বিবৃতিতে বিএনপির যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, “আমরা মনে করি, প্রধানমন্ত্রীর এহেন বক্তব্য বর্তমান সঙ্কটকে আরও গভীর ও উপসংহারহীন করে তুলবে।”
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দল অবরোধ আহ্বানের পর চলমান পরিস্থিতিকে ‘রাজনৈতিক সঙ্কট’ বলে তা সমাধানে সংলাপের আহ্বান জানিয়ে এলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলছে, রাজনৈতিক কোনো সঙ্কট নেই, আন্দোলনের নামে বিএনপি সন্ত্রাস করছে, যা দমন করা হবে।
সরকারের প্রত্যাখ্যানের প্রেক্ষাপটে আন্দোলনে অটল থাকার কথা জানিয়ে রিজভী বলেন, “আমরা বলতে চাই, সরকারি প্রচণ্ড আক্রমণ সত্ত্বেও নেতা-কর্মীরা জোরাল কণ্ঠের আওয়াজে মিছিল করে শান্তিপূর্ণ অবরোধ পালন করে যাবে।”
নাশকতার জন্য সরকার অবরোধকারীদের দায়ী করলেও বিএনপির দাবি, জনগণকে বিভ্রান্ত করতে সরকারের এজেন্টরা গাড়িতে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যার মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে।
রিজভী বলেন, “পেট্রোল বোমা ছুড়ে নিরীহ মানুষকে অগ্নিদগ্ধ করা শুধু অমানবিকই নয়, যারা এগুলোর সাথে যুক্ত তারা পাশবিক বিবেকের অমানুষ। কিন্তু এই জঘন্য অপকর্মের দায় চাপানো হচ্ছে বিরোধী দলের ওপর। কারণ সরকারি শক্তির নিয়ন্ত্রণে গণমাধ্যম। তদের(সরকার) হুকুমেই গণমাধ্যমে ঢালাও প্রচার চালানো হচ্ছে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে।
“যেখানে দেশনেত্রী নিজ কার্যালয়ে অবরুদ্ধ, দলের মহাসচিবসহ হাজার হাজার নেতা-কর্মী কারাগারে, প্রায় লক্ষাধিক নেতা-কর্মী মিথ্যা মামলা কাঁধে নিয়ে বাড়িছাড়া, অসংখ্য নেতা-কর্মীদের বাসায় চলছে যৌথবাহিনীর তাণ্ডব, ক্রসফায়ারের নামে বিরোধী জোটের নেতা-কর্মীদের হত্যা করা হচ্ছে, সেরকম ভয়, আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠার মধ্যে নেতা-কর্মীরা জীবন বাঁচাবে, না গাড়িতে আগুন অথবা পেট্রোল বোমা ছুড়বে।”
৫ জানুয়ারিতে ‘ভোটারবিহীন’ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গঠিত ‘অবৈধ’ এই সরকার ক্ষমতা ধরে রাখতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করাতে চাইছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপির যুগ্মমহাসচিব।
অবরোধের মধ্যে সম্প্রতি ঢাকায় ছাত্রদল নেতা নুরুজ্জামান জনি, জামায়াতে ইসলামীর নেতা নড়াইলের ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইমরুল কায়েস, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ছাত্রদল নেতা মতিয়ার রহমান ও ইসলামী ছাত্রশিবির নেতা আসাদুজ্জামান তুহিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।
এই ঘটনাগুলোকে ‘হত্যাকাণ্ড’ আখ্যায়িত করে রিজভী এসব বিষয়ে গণমাধ্যমের ভূমিকার সমালোচনাও করেন।
“এদের প্রায় সবাইকে নিজ বাড়ি কিংবা আত্মীয়-স্বজনের বাসা থেকে যৌথবাহিনী, গোয়েন্দা পুলিশ বা র্যাব তুলে নিয়ে হত্যা করেছে। এদের মায়ের আহাজারি, পরিবারের কান্না কেন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত হয় না। এরা কি দেশের মানুষ নয়। এত মানুষের লাশ, এত কান্নার রোল, কেন গণমাধ্যম আড়াল করে রাখছে?”