নজরুল-নূর হোসেনের ‘দ্বন্দ্বই’ খুনের কারণ?

আধিপত্যের দ্বন্দ্ব ছিল ক্ষমতাসীন দলের দুই কাউন্সিলরের মধ্যে, আর সেজন্যই নূর হোসেনের পরিকল্পনায় নজরুল ইসলামকে খুন হতে হয়েছে বলে র‌্যাবের তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

সুপ্রিম কোর্ট প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Dec 2014, 01:47 PM
Updated : 11 Dec 2014, 01:29 PM

নারায়ণগঞ্জের আলোচিত এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে র‌্যাবের প্রতিবেদন বুধবার হাই কোর্টের একটি বেঞ্চে উপস্থাপন করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

প্রতিবেদনে এই হত্যাকাণ্ডের জন্য নারায়ণগঞ্জে তখন বাহিনীতে থাকা সামরিক বাহিনীর তিন কর্মকর্তা তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, আরিফ হোসেন ও এম এম রানাকে দায়ী করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ওয়ার্ড পর্যায়ের একই মতাদর্শের স্থানীয় দুই নেতা নজরুল ইসলাম ও নূর হোসেনের মধ্যে দ্বন্দ্বই এই ঘটনার মূল কারণ। 

“উভয়েই একই ধারার রাজনীতি করলেও ব্যবসায়িক স্বার্থ, এলাকায় প্রভাব বিস্তার এবং অবস্থানগত প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে উভয়েল মধ্যে দীর্ঘদিন যাবত শত্রুতা ছিল। বিভিন্ন সময়ে তারা ব্যক্তিগত ও দলগতভাবে পরস্পরের বিরুদ্ধে মামলা মোকাদ্দমায় জড়িত হয়েছে।”

ছাত্রলীগের সাবেক নেতা নজরুল ছিলেন নারায়ণগঞ্জের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। অন্যদিকে নূর হোসেন ছিলেন ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। 

গত ২৭ ফেব্রুয়ারি নজরুলসহ সাতজনকে দুটি গাড়ি থেকে অপহরণের পর তার স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নূর হোসেনের সঙ্গে তার স্বামীর দ্বন্দ্বের কথা বলেছিলেন।

তিনি দাবি করেছিলেন, নূর হোসেনের অবৈধ কাজে বাধা দেওয়ায় নজরুলকে হত্যা করা হয়েছে।

নজরুল ইসলাম

নূর হোসেন

র‌্যাবের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ১ ফেব্রুয়ারি ২ নম্বর ওয়ার্ডে একটি উচ্ছেদ অভিযানকে কেন্দ্র করে নজরুল ও তার সমর্থকদের নূর হোসেনের সমর্থকদের মারামারি হয়।

ওই ঘটনা নিয়ে নজরুলকে আসামি করে মামলা করেন নূর হোসেন। ওই মামলায় জামিন নিয়ে ঢাকা যাওয়ার পথে লিংক রোড থেকে গাড়ি আটকে নজরুলসহ পাঁচজনকে তুলে নেওয়া হয়।

“এরই ধারাবাহিকতায় নূর হোসেন নজরুলকে প্রাণনাশের হুমকিসহ বিভিন্নভাবে ক্ষতিসাধন করার হুমকি দেয়। এই কারণে নজরুল ইসলাম এলাকা ছেড়ে ঢাকায় বসবাস করতেন,” বলা হয় প্রতিবেদনে।

২৭ ফেব্রুয়ারি লিংক রোডে একই সময় তুলে নেওয়া হয় আরেকটি গাড়িতে থাকা আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তার গাড়িচালককে। বলা হচ্ছে, নজরুলদের অপহরণটি দেখে ফেলায় তাদেরও তুলে নেওয়া হয়েছিল।

তিন দিন পর শীতলক্ষ্যা নদীতে একে একে নজরুল-চন্দনসহ সাতজনের লাশ ভেসে ওঠে।

এরপর নজরুলের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম দাবি করেন, র‌্যাবকে অর্থ দিয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে নূর হোসেন; যা নিয়ে সারাদেশে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

এরপর আদালতের আদেশে র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ, মেজর আরিফ ও লেফটেন্যান্ট কমান্ডার রানাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনজনকে সামরিক বাহিনী থেকেও চাকরিচ্যুত করা হয়।

র‌্যাবের প্রতিবেদনে বলা হয়, নজরুলের ওপর প্রতিশোধ নিতে প্রশাসনিক লোকের অন্বেষণে ছিলেন নূর হোসেন। আর এভাবেই সম্ভবত র‌্যাবের কর্মকর্তারা হত্যাকাণ্ডে এতে সম্পৃক্ত হন।  

“নুর হোসেন তার হুমকি কার্যকর করার জন্য তার পক্ষে কাজ করার মতো প্রশাসনের লোকের অন্বেষণে ছিলেন। অব্যাহত প্রচেষ্টায় নূর হোসেন র‌্যাব-১১ এর সিপিএসসির কোম্পানি কমান্ডার মেজর আরিফ হোসেন, পরবর্তীতে র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক তারেক সাঈদ মোহাম্মদকে সহযোগী হিসাবে পেয়ে যেতে সমর্থ হন বলে প্রতীয়মান হয়।”

হত্যাকাণ্ডের পর পালিয়ে যাওয়া নূর হোসেন ভারতে গ্রেপ্তার হয়ে সেদেশের কারাগারে রয়েছেন। তাকে ফেরত আনার চেষ্টা চলছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।

এদিকে নজরুলের মৃত্যুতে শূন্য নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডে উপনির্বাচনে তার স্ত্রী সেলিনা কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন।