‘দিনক্ষণ ঠিক করে নয়, সময়মত  আন্দোলন’

বর্তমান সরকারকে ‘অবৈধ’ আখ্যায়িত করে সরকার পতনের আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি নিতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Oct 2014, 08:38 AM
Updated : 6 Oct 2014, 08:38 AM

তবে সরকারবিরোধী আন্দোলনের জন্য সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ ঘোষণার পক্ষে নন ২০ দলীয় জোট নেত্রী। ‘সময়’ হলে আন্দোলনের ডাক দেবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।  

কোরবানির ঈদ উপলক্ষে সোমবার দুপুরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে কূটনীতিক ও বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর সাংবাদিকদের একথা বলেন বিএনপি প্রধান।

তিনি বলেন, “এই অবৈধ সরকার জোর করে  ক্ষমতায় বসে আছে। এদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হলে দলমত নির্বিশেষে এখন সবাই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

“আমরা স্পষ্টভাষায় বলতে চাই, আন্দোলনের সময় আসছে। দিনক্ষণ দিয়ে আন্দোলন হয় না। সময়মতই আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে। এই সরকারকে অবশ্যই বিদায় করতে হবে।”

দেশ পরিচালনায় ‘ব্যর্থতার’ দায় নিয়ে সরকারকে পদত্যাগ করারও আহ্বান জানান বিএনপি চেয়ারপারসন।

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠান হয়। কূটনীতিক ও বিশিষ্ট নাগরিকদের পর্ব শেষে দলের নেতা-কর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে ঈদের কুশল বিনিময় করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

দেশবাসী ও নেতা-কর্মীদের ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, “দেশের মানুষের মনে কোনো আনন্দ নেই। এবার তারা দুর্ভোগ-ভোগান্তি-দুশ্চিন্তার মধ্যে ঈদ উদযাপন করছে।”

দেশ পরিচালনায় সরকার ‘ব্যর্থ’ দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, “মানুষের কোনো নিরাপত্তা নেই। ঈদে ঘরমুখী মানুষের দুর্ভোগের সীমা ছিল না। ট্রেন, বাস, লঞ্চ সব পথেই মানুষজন চরমভাবে ভোগান্তির শিকার হয়েছে। রাস্তা-ঘাটের বেহাল অবস্থার কারণে হাইওয়ে ছিল ব্যাপক যানজট।

“দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, বিদ্যুতের লোডশেডিং, গ্যাস সরবারহে অপ্রাপ্যতা ইত্যাদি সব মিলিয়ে দেখা গেছে, এসব দেখার কেউ নেই।”

পোশাক শিল্পেও ‘দুর্দশা’ চলছে বলে দাবি করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

“বিজেএমইএ’র প্রতিনিধিরা কিছুক্ষণ আগে আমার এখানে এসেছিলেন। তারা বলেছেন, বিদ্যুৎ নেই, গ্যাস নেই। মালামাল সঠিক সময় দিতে পারছে না। মহাসড়কের বেহাল অবস্থার জন্য পোশাক শিল্প সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে,” বলেন তিনি।

বর্তমান সরকারের আমলে নতুন কোনো শিল্প-কারাখানা হয়নি অভিযোগ করে খালেদা জিয়া বলেন, “অনেক পোশাক শিল্প বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এতে বেকারত্ব বাড়ছে। বিদেশি বিনিয়োগ নেই। ব্যাংকসমূহে অলস টাকা পড়ে আছে। কেউ বিনিয়োগ করতে চায় না। অর্থনীতিকে ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে। এভাবে চললে দেশ সামনের দিকে এগুবে কিভাবে?

“ব্যবসা-বাণিজ্যের দুরাবস্থা হলেও ছাত্রলীগ-যুবদলীয় চাঁদাবাজি চলছেই। মনে হচ্ছে, দেশে দেখার কেউ নেই। কারণ এই সরকার অবৈধ। জনগণের প্রতি তাদের কোনো দায়-দায়িত্ব নেই। নিজেরাই কিভাবে লুটপাট করে টাকা বানাবে, সেই কাজেই তারা ব্যস্ত থাকে।”

দেশের কোনো প্রতিষ্ঠান ভালো নেই দাবি করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, “ব্যাংকগুলোর কি অবস্থা। অর্থ মন্ত্রী বলেছেন, তাদের ব্যর্থতার কারণে ব্যাংকের অবস্থা ভালো নেই। তিনি আর যাই হোক একটা ব্যর্থতার কথা স্বীকার করেছেন। তাই সরকারকে বলব, এখনো সময় আছে, অবিলম্বে পদত্যাগ করে দ্রুত সুষ্ঠু নির্বাচন দিন।”

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে পাসের হার বাড়িয়ে সরকার গোটা শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী এবং জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালার সমালোচনা করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, “এই সরকার সম্পূর্ণ অবৈধভাবে ক্ষমতায় বসে আছে। তাদের জনভিত্তি নেই। অবৈধ এই সরকার একটা ভেজাল সরকার। ভেজাল ছাড়া দেশে খাঁটি কিছুই নেই। গুম-খুন করে তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়।”

কোরবানির পশুর বাজারে পশু পীরক্ষার জন্য মেডিকেল টিম রাখার সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, “ফরামালিনমুক্ত ফল কিংবা মোটাতাজাকরণ গরু- এক্ষেত্রে  ৬/৭ মাস আগে থেকেই ঘোষণা দিয়ে করা উচিৎ ছিল। তারা ঈদের ৬দিন আগে এই কাজ করার কথা ঘোষণা করেছে। এখন ঈদের পশুর হাটে  মোটাতাজাকরণ পরীক্ষার নামে যা হয়েছে, তা দুর্নীতি। ফলে প্রান্তিক পর্যায়ে ব্যবসায়ীরা গরুর দাম পায়নি।”

সরকার হটানোর আন্দোলনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, “অবৈধ এই সরকার দেশের জন্য ভালো কিছুই করতে পারবে না। এদের হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে আমাদের এক হতে হবে। দেশের মানুষ পরিবর্তন চায়। মানুষজন নতুন কিছু আশা করছে।

“জনগণকে বলব, আসুন ভেদাভেদ ভুলে আমরা এক হয়ে কাজ করি। ইনশাল্লাহ নিশ্চয়ই আমাদের সুদিন আসবে।”

ঈদ শুভেচ্ছা অনুষ্ঠানে কূটনীতিক কোরের ডীন শাহের মোহাম্মদ, পাকিস্তানের হাইকমিশনার আফরাসিয়াব হাশেমী মেহেদী কোরেশী, ভারতের হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণ ছাড়াও সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও তাদের প্রতিনিধিসহ ৪২টি দেশের কূটনীতিকরা বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

এ সময় দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, আবদুল কাইয়ুম, রাশেদ আহমেদ চৌধুরী, হারুন অর রশীদ উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের পক্ষ থেকে কূটনীতিকদের সন্মানে আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের মিডিয়াবাজারে মধ্যাহ্ন ভোজ দেয়া হয়।

ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে মঞ্চে খালেদা জিয়ার পাশে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আর এ গণি, মাহবুবুর রহমান, এম কে আনোয়ার, আ স ম হান্নান শাহ, জমির উদ্দিন সরকার, রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান প্র্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা আলতাফ হোসেন চৌধুরী, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, জয়নুল আবদিন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, নুরী আরা সাফা, শিরিন সুলতানা, মীর সরফত আলী সপু, শফিউল বারী বাবু, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, আমিরুল ইসলাম আলিম, হাফেজ এম এ মালেক, আবদুল কাদের ভুইয়া জুয়েলসহ কেন্দ্রীয় ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা ছিলেন।

রাজনীতিবিদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর মজিবুর রহমান, তাসনীম আলম, রিদওয়ান উল্লাহ শাহিদী, বিকল্পধারা’র মহাসচিব আবদুল মান্নান, লেবার পার্টির মুস্তাফিজুর রহমান ইরান, মো. ফরিদউদ্দিন, মুসলিম লীগের এএইচএম কামরুজ্জামান খান, ন্যাপ ভাসানীর আজহারুল ইসলাম প্রমুখ নেতারা বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।

ঈদ শুভেচ্ছার এই অনুষ্ঠানে গণমান্য ব্যক্তিদের মধ্যে অধ্যাপক এমাজ উদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, অধ্যাপক মবিন খান, কবি আবু  সালেহ, মাহমুদ শফিক, গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার প্রমুখ খালেদা জিয়ার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।

বিজেএমইএ’র সভাপতি আতিকুল ইসলাম, সহ-সভাপতি এস এম মান্নান কচি, আবদুস সালাম মুশের্দী, এস এম ফজলুল হক, মোহাম্মদ আলীসহ ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধি দলও বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শওকত মাহমুদ, ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আ ন হ আখতার হোসেন, সাবেক সচিব ওমর ফারুক, ইসমাইল জবিউল্লাহসহ অবরসপ্রাপ্ত সচিব ও  ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

ঈদের শুভেচ্ছা অনুষ্ঠানে গুম হয়ে যাওয়া নেতা-কর্মীদের পরিবার-পরিজনরা তাদের নিখোঁজ স্বজনদের ছবি নিয়ে খালেদা জিয়া সঙ্গে দেখা করেন।

জিয়ার কবর জিয়ারত

ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় শেষ করে খালেদা জিয়া তার স্বামী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন। তিনি ফাতেহা পাঠ ও আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।

এ সময়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার, মির্জা আব্বাস, যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।