বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেছেন, যিনি নিজের দেশে ‘শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারেন না’ তার ওই বিশ্ব সংস্থায় শান্তির কথা মানায় না।
রোহিঙ্গা সংকট নিয়েও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন ফখরুল: “মিয়ানমার যে গণহত্যা চালাচ্ছে সে কথাটা একবারও তিনি বলেননি এবং মিয়ানমারের নিন্দা করেননি। এটি না করার মানে হচ্ছে, আপনি মূল জায়গাটাতে যাচ্ছেন না। এখন মূল জায়গাটিতে যাওয়া সবচেয়ে বেশি দরকার।”
নিউ ইয়র্ক সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭২তম অধিবেশনে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অবিলম্বে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ‘জাতিগত নিধন’ বন্ধ করার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি শরণার্থীদের ফেরত নিয়ে তাদের সুরক্ষা দিয়ে পুনর্বাসনের কথা বলেন তিনি।
রোহিঙ্গাদের সুরক্ষার পাশাপাশি সব ধরনের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অবস্থানের কথা বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই। আমরা অর্থনৈতিক উন্নতি চাই, মানব ধ্বংস নয়, মানব কল্যাণ চাই।”
শুক্রবার বিকালে এক আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ নিয়ে দলীয় প্রতিক্রিয়া তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “বাংলাদেশ সরকার, শেখ হাসিনার সরকার জনগণের সমর্থন হারিয়েছে, জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। সেজন্য তারা অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে এখানে একটা একনায়কতন্ত্র নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে। সংসদে তারা খুব চমৎকার চমৎকার বক্তব্য দিয়েছে- এই উন্নতি করেছেন ওই উন্নতি করেছেন। জাতিসংঘেও প্রধানমন্ত্রী শান্তির কথা বলেছেন।
সারা দেশে সরকারবিরোধীদের ওপর নির্যাতন এবং তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দেশের রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে সরকারকে আবারও সংলাপে বসার আহ্বান জানান তিনি।
ফখরুল বলেন, “অনেক সময় বয়ে গেছে, অনেক রক্ত ঝরেছে, অনেক মায়ের কোল খালি হয়েছে, অনেক সন্তান তার পিতাকে হারিয়েছে আজকে সেই জন্যই এই সংঘাতে না গিয়ে আসুন আলোচনার মাধ্যমে সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতার মাধ্যমে দেশে যাতে একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হয় তার জন্য বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা বসুন।”
রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে এ বিষয়ে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আজকে পুরো জাতিকে সঙ্গে নিয়ে যদি আপনি কথা বলেন, মিয়ানমারকে গণহত্যার জন্য দায়ী করেন এবং দেশটির বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপের কথা বলেন তাহলেই শুধু তারা বাধ্য হবে এই গণহত্যা বন্ধ করতে এবং এদেরকে ফিরিয়ে নিতে। অন্যথায় তারা রাজি হবে না।
“এর জন্য সবার আগে প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করা এবং এই ঐক্যের মধ্য দিয়ে মিয়ানমারকে বাধ্য করা, আমাদের দেশে মিয়ানমার থেকে আসা শরণার্থী যারা রয়েছে তাদেরকে তাদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া। এটার কোনো বিকল্প নাই।”
জাতিসংঘে ভাষণে শেখ হাসিনা মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের জন্য এই সংস্থার তত্ত্বাবধানে ‘সেইফ জোন’ করার প্রস্তাব করেছেন। তার ওই প্রস্তাবের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, “এটা কি আরেকটি প্যালেস্টাইন রাষ্ট্র সৃষ্টি করতে চান?”
রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক হওয়ায় তাদের সেই অধিকার দিয়ে দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা না করা গেলে তাদের ওপর এই নির্যাতন চলতে থাকবে বলে সতর্ক করেন তিনি।
“মিয়ানমারকে বাধ্য করতে হবে রোহিঙ্গাদের সম্পূর্ণ নাগরিক অধিকার দিয়ে তাদের সসন্মানে ফেরত নিতে। সেদেশে নাগরিকদের যেসব অধিকার থাকে সেগুলো এদের জন্য বাস্তবায়িত করতে মিয়ানমারকে বাধ্য করতে হবে।”
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ত্রাণ ও পুনর্বাসন কাজে সেনাবাহিনীকে সম্পৃক্ত করতে বিলম্ব হয়েছে দাবি করে এর সমালোচনা করেন ফখরুল।
জাতীয়তাবাদী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের (জেটেব) উদ্যোগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দশম কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়। অনুষ্ঠানে জেটেবের সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচিরও উদ্বোধন করেন বিএনপি মহাসচিব।
সংগঠনের সভাপতি ফখরুল আলমের সভাপতিত্বে ও এবিএম রুহুল আমীন আখন্দের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল আউয়াল খান, কাদের গনি চৌধুরী, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন মেজবাহ ও জেটেবের কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য দেন।