রবের বাসায় পুলিশি বাগড়ায় মওদুদ আহমেদও ক্ষুব্ধ

জাসদ নেতা আ স ম আবদুর রবের বাসায় রাতের ঘরোয়া অনুষ্ঠানে পুলিশি বাগড়ার সমালোচনা করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমেদ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 July 2017, 10:21 AM
Updated : 15 July 2017, 01:06 PM

শনিবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় ক্ষোভ প্রকাশ সময় মওদুদ আহমেদের সঙ্গে আ স ম রবের বাসার অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ বেশ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন।

ক্ষোভ প্রকাশ করে মওদুদ বলেন, “আ স ম আবদুর রবের বাসায় বাংলাদেশের স্বনামধন্য অনেক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সেখানে তারা যা খুশি আলোচনা করতে পারেন, এটাতে আইনগত তো কোনো বাধা নাই। সেখানে পুলিশ যাবে কেন?

“আমি তীব্র ভাষায় এর নিন্দা জানাই। এটার একমাত্র কারণ রাজনৈতিক নেতৃত্বের মাইন্ডসেট যে আমিই সব কিছু করব।”

দেশে ‘এক ব্যক্তি’র শাসন চলছে অভিযোগ করে তার অবসানে ‘সুষ্ঠু অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের' এক দফা দাবিতে সব রাজনৈতিক দলের জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন করে ভাষ্য সাবেক এই মন্ত্রীর।

তিনি বলেন, “আমিই সব কিছু করব, আই অ্যাম দি স্টেট’- এই কর্তৃত্ববাদের আমরা অবসান চাই, এই কর্তৃত্ববাদ আমরা নির্মূল করে দিতে চাই। সেটা করার একমাত্র উপায় হল, জনগণের মাধ্যমে একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করার মধ্য দিয়ে সেটা আমরা করতে পারি।

“আমি বলব, এই কারণে একটা ন্যূনতম কর্মসূচির উপরে ভিত্তি করে একটা জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করতে হবে। এর মূল লক্ষ্য হবে দেশে আমরা গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে চাই, মানুষের অধিকার, ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে চাই। এজন্য আমরা একটা সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই, এক দফা। এখানে পাঁচ দফা ১০ দফার তো দরকার নাই।”

উত্তরায় জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রবের বাসায় বৃহস্পতিবার রাতে রাজনীতিক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, আবদুল কাদের সিদ্দিকী, মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ কয়েকজন বৈঠক করেন। জেএসডির নেতারা একে বলছেন ‘চা চক্র’।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ। (ফাইল ছবি)

ওই বৈঠকের সময় পুলিশ উপস্থিত হয়ে অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত করতে তাড়া দেয় এক জেএসডি নেতাসহ অতিথিদের কয়েকজন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

এর আগে এ ঘটনায় মওদুদ আহমেদের আগে বিএনপি নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ‘দেশে অব্যাহত গুম-খুন-অপহরণ: শঙ্কিত নাগরিক সমাজ’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে আদর্শ নাগরিক আন্দোলন।

এতে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের একদফার ভিত্তিতে এগিয়ে যাওয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে আহ্বান জানান বিএনপি নেতা মওদুদ।

তিনি বলেন, “আমরা সমঝোতার কথা সবাই বলে এসছি। সরকার যদি সেটা না বুঝেন… আপনারা বলছেন যে, তারা তো ক্ষমতাচ্যুত হতে চাইবেন না, তারা দুর্নীতির মাধ্যমে এত সম্পদের সম্ভার তৈরি করেছেন, সেই সম্ভার হারিয়ে ফেলতে পারে- এই ভয়ে তারা ক্ষমতা ছাড়তে চাইবে না।

“সেজন্য তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করতে হবে। আমাদের অনেকের ক্ষোভ-দুঃখ-বেদনা, অনেক অভিযোগ ও অনেক রকমের দ্বিমত থাকতে পারে কিন্তু একটা বিষয়ে আমরা আসুন একমত হই-দেশে গণতন্ত্রের চর্চা ফিরিয়ে আনতে আনব।”

জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে দেশে গণতান্ত্রিক চর্চার সুরক্ষায় নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, সরকারি কর্ম কমিশনসহ সংসদকে শক্তিশালী করতে জনগণের সঙ্গে চুক্তিপত্র করার কথা বলেন এরশাদ আমলের এই উপ-প্রধানমন্ত্রী।

আলোচনায় রাষ্ট্রপতি ও স্পিকার নির্বাচিত হওয়ার পর নিরপেক্ষতার স্বার্থে তাদের দল থেকে পদত্যাগের নিয়ম চালু করার ব্যক্তিগত মতের কথা জানান ব্যারিস্টার মওদুদ।

সংসদীয় সরকার ব্যবস্থার বাংলাদেশে স্পিকার কোনো দলের সদস্য হলেও তাকে দল থেকে পদত্যাগ করতে হয় না। তবে রাষ্ট্রপতি নির্দলীয় পদ। কোনো দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত কেউ রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পর দল থেকে পদত্যাগ করে থাকেন।

গত কয়েকটি সংসদে বিরোধী দলের কোনো মুলতবি প্রস্তাব আলোচনা হয়নি বলে দাবি করেন সাবেক এই সংসদ সদস্য।

মওদুদ বলেন, “মুলতবি প্রস্তাব- এই দুইটি সংসদের কথা বাদই দিলাম, এই দুটা তো কোনো সংসদ না। আগের সংসদেও একটা মুলতবি প্রস্তাব আলোচনা হয় নাই। নট এ সিঙ্গেল ওয়ান। এগুলো আমাদের রেকটিফাই করতে হবে।

“আমরা যারা ভুল করেছি, আমাদের সেই ভুল সংশোধন করতে হবে। তা না হলে খামাখা সবাইকে নিয়ে আন্দোলন করে ক্ষমতায় এসে গেলাম, তারপরে যদি। আমরা সেজন্য আমাদের বেগম খালেদা জিয়া ‘ভিশন ২০৩০’ বিষয়ে আমরা অনেক প্রশংসা পেয়েছি। সেখানে সব কিছু বিস্তারিত আছে- আমরা কি করতে চাই।”

বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ মনে করেন না বললেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে কমিশনের সংলাপে বিএনপি অংশ নেবে বলে জানান দলটির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য।

আর্দশ নাগরিক আন্দোলনের সভাপতি মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসানের সভাপতিত্বে আলোচনায় নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, বিকল্পধারা বাংলাদেশ এর যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরী, স্বাধীনতা ফোরামের আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, নাগরিক ফোরামের আবদুল্লাহহিল মাসুদ, ন্যাপ মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া, এনডিপির মঞ্জুর হোসেন ঈসা, ইসলামী পেশাজীবী পরিষদের রেজাউল করিম চৌধুরী, স্বাধীনতা অধিকার আন্দোলনের কাজী মনিরুজ্জামান মুনির বক্তব্য রাখেন।