নকল নয়, সব আমাদের উদ্ভাবন: বিএনপি

খালেদা জিয়ার ‘ভিশন ২০৩০’ আওয়ামী লীগের ‘রূপকল্প ২০২১’ থেকে ‘চুরি করে’ তৈরি বলে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে ‘পুরোটাই উদ্ভাবনের ফসল’ বলে দাবি করেছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 May 2017, 01:39 PM
Updated : 11 May 2017, 04:37 PM

বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই প্রতিক্রিয়া জানান।

তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ বলেন, আমরা নাকি তাদেরকে ইমিট্যাট করেছি। নো, ওই হ্যাভ ইনোভেটেড অল দ্য আইডিয়াজ। দিস ইজ মাই অ্যানসার টু আওয়ামী লীগ লিডারস। গতকাল তারা বলেছেন, উই ইমিট্যাটিং। উই ডিড নট ইমিট্যাট দেম, দে ইমিট্যাটেড আস।

“আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, বিএনপি বরাবরই ভিশনারি রাজনৈতিক দল। আপনাদের (গণমাধ্যম) নিশ্চয়ই মনে আছে, ২০০১ সালে আমরা প্রথম ভিশন দিয়েছিলাম। ‘ভিশনটা আওয়ামী লীগ প্রথম দিয়েছে, তাদেরকে আমরা অনুসরণ করেছি’- এটা একেবারেই অসত্য একটা বক্তব্য।”

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে দেশের উন্নয়নের লক্ষ্যে কী কী করবে তার একটা ফিরিস্তি ‘ভিশন ২০৩০’ আকারে বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেন বিএনপির চেয়ারপারসন।   

প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের ধারণা চুরির অভিযোগ তুলেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, “পরের মেধাস্বত্ব চুরি করা একটি নৈতিক অপরাধ। এটা এক ধরনের পলিটিক্যাল ডিজঅনেস্টি। একটি রাজনৈতিক দল কতটুকু দেউলিয়া হলে অপর একটিরাজনৈতিক দলের দেওয়া আইডিয়া  ও থট নির্লজ্জভাবে চুরি করতে পারে! তারা ইমিট্যাট করতে পারে, কিন্তু ইনোভেট করতে পারে না।”

এর প্রতিক্রিয়ায় বৃহস্পতিবার নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল উল্টো আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিএনপিকে অনুসরণ করার অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ বরাবরই বিএনপিকে অনুসরণ করেছে, প্রেসিডেন্ট জিয়াকে অনুসরণ করেছে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অনুসরণ করেছে। আপনারা নিশ্চয়ই ভুলে যাননি যে, ১৯৭৫ সালে তারা গণতন্ত্রকে অবরুদ্ধ করে একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল। সে সময়ে আওয়ামী লীগে নিজের দলকে অবলুপ্ত করে বাকশালে যোগ দিয়েছিল।

“প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন করেছিলেন। তখন এই আওয়ামী লীগ জিয়াউর রহমানের আমলে নিবন্ধিত হয়ে তারা রাজনীতি শুরু করে এবং তাদের গঠনতন্ত্রে সমাজতন্ত্রকে তুলে নিয়ে তারা মুক্তবাজার অর্থনীতির কথা লেখে, তারা এখন মুক্তবাজার অর্থনীতি ও বেসরকারি বিনিয়োগ নীতি তারা বিএনপি ও প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে অনুসরণ করছে।”

বাংলাদেশে রাজনীতি, অর্থনীতি, বাণিজ্য, কৃষি, শিল্পায়ন ও রাষ্ট্রব্যবস্থাসহ সব ক্ষেত্রে আধুনিকায়ন ও ইতিবাচক যেসব সংস্কার হয়েছে, সেগুলো জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার হাত ধরেই এসেছে বলে দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব।

“একদলীয় শাসন ব্যবস্থা থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্র জিয়াই উপহার দিয়েছেন, সংসদীয় গণতন্ত্র বেগম খালেদা জিয়া উপহার দিয়েছেন স্বৈরাচারকে পরাজিত করে নির্বাচিত হয়ে এসে।”

মির্জা ফখরুল বলেন, “বাক-ব্যক্তির স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বিএনপি দিয়েছে। সমাজতন্ত্রের নামে লুটতরাজের নামে কমান্ড ইকোনমির জায়গায় জিয়া বেসরকারি খাত অগ্রাধিকার দিয়ে অর্থনীতিকে মুক্ত ও প্রতিযোগিতামূলক করেছেন। মুক্তবাজার অর্থনীতি ও ভ্যাট বিএনপির অবদান।

“যোগাযোগ, নারী শিক্ষা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে যুগান্তকারী অবদান বিএনপির। নারী ও শিশু, যুব শক্তি, মুক্তিযোদ্ধা, প্রবাসী ও আইটি মন্ত্রণালয় বিএনপিই স্থাপন করেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা ও ইতিহাস প্রণয়নের উদ্যোগ বিএনপির, আওয়ামী লীগের নয়।”

কৃষিখাতে উন্নয়ন, খাদ্য ও বস্ত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, পাবলিক পরীক্ষায় নকল বন্ধ, বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের হাতে দেশে ছাপানো পাঠ্যপুস্তক সরবারহ, গার্মেন্টস শিল্পের দ্বার উন্মোচন ও বিকাশ, বিদেশে শ্রমশক্তি রুপ্তানি, জঙ্গিবাদের শীর্ষ নেতাদের জীবিত গ্রেপ্তার করে তাদের বিচারের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শাস্তি প্রদান, যুমনা সেতুর অর্থায়ন ও নির্মাণকাজের ৭০ ভাগ সম্পন্ন, পরিবেশ দূষণ রোধে ক্ষতিকারক পলিথিন ব্যবহার বন্ধ ও কালো ধুঁয়ার বেবিট্যাক্সি (থ্রি হুইলার) চলাচল নিষিদ্ধ করা বিএনপির অবদান বলে দাবি করেন মির্জা ফখরুল।

“রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে বিএনপি প্রথম ভিশন পরিকল্পনা পেশ করে ২০০১ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে। পরে আওয়ামী লীগ তা অনুসরণ করেছে। এরকম বহু ক্ষেত্রে ই তারা আমাদের অনেক দর্শন ও কর্মসূচি অনুসরণ করেছে, এতে আমাদের আপত্তি নয় বরং গৌরব অনুভব করি।

“আওয়ামী লীগ ভিশন দিলেও তা বাস্তবায়ন করে না। সেই যোগ্যতা তাদের নেই। তারা দলীয়করণ, লুটপাট, দুর্নীতি, অত্যাচার, অপশাসন আর গলাবাজি ও ধাপ্পাবাজিতে লিপ্ত। তাদের দিনবদলের ঘোষণা এখন এক করুণ পরিহাসে পরিণত হয়েছে।”

আওয়ামী লীগের ‘ভিশন ২০২১-৪১’ এর প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “তারা ভিশন দিয়েছিল। বাংলাদেশের অবস্থাটা কী? এই ভিশনের সঙ্গে মিল কতটুকু। আজকে মাননীয় প্রধান বিচারপতি বলছেন যে, দেশে আইনের শাসন নেই। অথচ তাদের ভিশনে প্রথম কথা ছিলো আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করবেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করবেন। একথাগুলো নিশ্চয়ই আমরা ভুলে যাইনি।”

দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা ফোরাম (সার্ক) গঠনেও জিয়াউর রহমানের ভূমিকা রয়েছে বলে জানান তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, “১৯৯৩ সালে বু্লেটিন বোর্ড বা বিবিএস পদ্ধতিতে ডায়াল-আপের সাহায্যে ই-মেইলের ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি হয়। এই সুযোগ খুব সীমিত থাকায় ইন্টারনেটের জন্য ভি-সেট স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। বিএনপি সরকারই সেই উদ্যোগ গ্রহন করে।

“১৯৯৫ সালের শেষের দিকে ভি-সেট ডাটা সার্ভিস সাবস্ক্রাইব করার জন্য আবেদনপত্র আহ্বান করে। এই প্রক্রিয়া চলাকালে জাতীয় নির্বাচনকালীন কেয়ারটেকার সরকার দায়িত্ব নেয়। প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুসসহ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই-তিনজনের বিশেষ আগ্রহ ও তাগিদে খুব অল্প সময়ের মধ্যে পুরো প্রক্রিয়া শেষ করা হয়। ১৯৯৬ সালের ৪ জুনে দেশে প্রথম ভি-সেট ডাটা সার্ভিস কমিশন করা হয়। এর মাধ্যমে সকলের জন্য উন্মুক্ত হয়ে যায় ইন্টারনেট সার্ভিস।”

তিনি বলেন, “বাংলাদেশ কখন সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে যুক্ত হয়, জবাব দেবেন আওয়ামী লীগ। ২০০৬ সালে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি সরকার এই বিশাল যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এর ফলে যোগাযোগ প্রযুক্তির মহাসড়কের যুক্ত হয় বাংলাদেশ। দেশে ইন্টারনেটের ব্যাপক প্রসার ও গতিবেগ সঞ্চারিত হয়, যা ক্রমে ব্যবহারকারীদের সহজলভ্য হয়।

“তথ্য প্রযুক্তিকে গুরুত্ব দিয়ে পৃথক মন্ত্রণালয় বেগম খালেদা জিয়া সৃষ্টি করেছেন। ২০০২ সালে তার সরকারই আইসিটি পলিসি প্রণয়ন করে তথ্য প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসারের লক্ষ্যে কালিয়াকৈরের হাইটেক পার্কে স্থাপনের প্রকল্প হাতে নিয়েছিলো, বাংলাদেশে তার আগে কেউ এমন উদ্যোগের কথা কল্পনাও করেনি। ”