মঙ্গলবার বিকালে মাগুরার মুক্তিযোদ্ধা আছাদুজ্জামান স্টেডিয়ামে আওয়ামী লীগের জনসভায় শেখ হাসিনা বলেন, “দেশ যেন দ্রুত উন্নয়নের পথে এগিয়ে যায় সে লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি। আমাদের লক্ষ্য উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গড়া।
“২০১৯ সালের নির্বাচনে আশা করি নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে মানুষের সেবার করার সুযোগ দেবেন।”
সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ও মাদকাসক্তি রুখতে সব স্তরের মানুষের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “আমরা আপনাদের উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছি, আপনাদের কাছে আমার একটা দাবি থাকবে। এখানে অভিভাবকবৃন্দ আছেন, শিক্ষকরা আছেন, মুক্তিযোদ্ধা ভাইয়েরা আছেন, স্থানীয় মুরুব্বিরা আছেন, আমাদের মসজিদের ইমাম, ওলামা মাশায়েখগণ আছেন, আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রশাসনের কর্মকর্তারাসহ বিভিন্ন পেশাজীবীরা, সকলের কাছে আমার একটাই আবেদন থাকবে-এই মাগুরা এখানে যেন কোনো রকম সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ বা মাদকাসক্তি যেন এখানে স্থান না পায়। তার ব্যবস্থা আপনারা করবেন।”
সন্তানদের দিকে নজর দিতে অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “নিজের ছেলে-মেয়ে, তাদের কী সমস্যা, তারা কী চায়, তাদের সঙ্গে কথা বলেন। তারা যেন বিপথে না যায়, সেদিকে বিশেষভাবে আপনারা দৃষ্টি দেবেন- সেটাই আমি চাই।”
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা অনুপস্থিত থাকলে তার কারণ খুঁজতে শিক্ষক ও অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদক ছেড়ে আসাদের পুনর্বাসনের বিষয়ে তিনি বলেন, “যারা ভালো হতে চায় তাদের ভালো হওয়ার ব্যবস্থা এবং তাদের জীবন-জীবিকা যেন চলে সেজন্য যা যা প্রয়োজন আমরা সেই ব্যবস্থা করব। জঙ্গি সন্ত্রাস ও মাদক থেকে মুক্ত হয়ে তারা যদি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে চায় সেই ব্যবস্থা আমরা করব।”
এ প্রসঙ্গে কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে বিনা জামানতে দুই লাখ টাকা ঋণ পাওয়ার সুযোগের কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
এছাড়া দেশব্যাপী গড়ে তোলা ডিজিটাল সেন্টার, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প এবং সারা দেশে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সরকারের চলমান কর্মকাণ্ডে তরুণরা সম্পৃক্ত হতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর সমাবেশ ঘিরে নির্ধারিত সময়ের আগে থেকেই আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা স্টেডিয়ামে সমবেত হতে থাকেন। মাগুরা ছাড়াও ফরিদপুর, রাজবাড়ী, পাংশা, নড়াইল, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, যশোর ও খুলনার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা সমাবেশে আসেন।
জনসভায় উপস্থিত হয়ে শেখ হাসিনা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন, আড়াইশ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল, শ্রীপুর ও মহম্মদপুর উপজেলা ফায়ার স্টেশন নির্মাণ, মাগুরা সদর উপজেলার মঘি ইউনিয়নে ফটকী নদীর ওপর রাঘবদাইড় ঘাটে সেতু নির্মাণ, মাগুরা সদর উপজেলার কাটাখালী জিসি থেকে ইছাখাদা আর অ্যান্ড এইচ পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ, শ্রীপুর সড়কে নবগঙ্গা নদীর উপর পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ, ঘণ্টায় ৩৫০ ঘনমিটার ক্ষমতা সম্পন্ন ভূগর্ভস্থ পানি শোধনাগার নির্মাণ, সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামার, প্রশিক্ষণ ভবন ও অতিথিশালা নির্মাণ, আঞ্চলিক মসলা গবেষণা কেন্দ্র, জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়, মাগুরার শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট কমপ্লেক্সে উন্নীতকরণ, শালিখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট কমপ্লেক্সে উন্নীতকরণ, শালিখা উপজেলার আড়পাড়ায় ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র নির্মাণ, মাগুরা টেক্সটাইল মিলস এবং পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করবেন।
প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মাগুরায় খালি হাতে আসিনি। উপহার নিয়ে এসেছি।”
জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে কাজ করছেন জানিয়ে তার মেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “বাবার আর্দশ অনুসরণ করে বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে জীবন উৎসর্গ করতে.. যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত। বাবার মতো হাসিমুখে বুকের রক্ত দিয়ে আপনাদের সেবা করব।
“আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পাই না। কারও কাছে মাথা নত করি না।”
শেখ হাসিনা বলে, “শোক ব্যথা বুকে নিয়ে সব কষ্ট সহ্য করে একটা কারণে দেশে এসেছিলাম, আপনাদের সেবা করার জন্য। জাতির জনক এদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত করতে চেয়েছিলেন, সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি।
“আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে মানুষের দুঃখ দুর্দশা দূর করার চেষ্টা করে। আওয়ামী লীগের একটাই আদর্শ- দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো।”
“বিএনপি ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন কাজ বন্ধ করে সন্ত্রাস ও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল- মানুষের বাড়ি ঘরে আগুন দিয়েছিল, ফসল লুট করেছিল, খুন, দুর্নীতি করেছিল।”
ওই সরকারের সময়ে মাগুরা উপ-নির্বাচনের কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “ভোট চুরি করার কারণে গণআন্দোলন হয়েছিল। আন্দোলন করে খালেদা জিয়াকে পদত্যাগে বাধ্য করেছিল বাংলার জনগণ।
“ভোট চুরির অপরাধে যাদের জনগণ ক্ষমতা থেকে হটিয়েছে, তারা ক্ষমতায় আসলে দেশকে আবারও ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাবে। কারণ, তারা দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না।”
জনসভায় প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সহকারী সচিব সাইফুজ্জামান শিখর (মাগুরার প্রয়াত নেতা আছাদুজ্জামানের ছেলে) মাগুরার জনগণের দীর্ঘদিনের দাবি রেললাইন, মেডিকেল কলেজ এবং আইনজীবী সমিতি ও প্রেস ক্লাব ভবন নির্মাণের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
এ বিষয়ে বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মাগুরাবাসীর দাবি- তারা নাকি রেল লাইন দেখেনি… দিতে হবে। রেল লাইন যাতে হয় সে ব্যবস্থা করব।”
জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি তানজেল হোসেন খানের সভাপতিত্বে জনসভায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য পিযুষ কান্তি ভট্টাচার্য, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল-আলম হানিফ ও আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার, পাট ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, স্থানীয় সাংসদ আবদুল ওয়ায়াহাব, মহিলা আওয়ামী লীগের সাফিয়া খাতুন, যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আখতার ও সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন বক্তব্য রাখেন।