শনিবার বিকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক সমাবেশে তিনি বলেন, “সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে।
“সুতরাং নির্বাচনকে সামনে রেখে জঙ্গিসঙ্গী খালেদা জিয়া অথবা জঙ্গিবাদীরা কোনো ফায়সালা বা মিটমাটের ফর্মুলা যদি হাজির করে তাহলে জাসদের পক্ষ থেকে বলবো, কোনো মিটমাটের ফর্মূলা নির্বাচনকে সামনে নিয়ে আমরা গ্রহণ করি না। আমরা যথাসময়ে ভোটও চাই, জঙ্গি উৎখাতও করতে চাই।”
নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের পর সেটাকে প্রত্যাখ্যানের সঙ্গে সঙ্গে বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচন সহায়ক সরকার গঠনের প্রস্তাবের সমালোচনা করেন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের তথ্যমন্ত্রী ইনু।
নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে দলে ভাঙনের একবছর পর হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদকে চাঙ্গা করতে প্রথমবারের মতো এই সমাবেশে সারাদেশের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেন।
জঙ্গি-সন্ত্রাসকে ‘বাংলাদেশ ও পৃথিবীর সামনে ভয়াবহ বিপদ’ আখ্যা দিয়ে তা মোকাবেলায় জাসদ ‘মহাঐক্যে’ রয়েছে জানিয়ে ইনু বলেন, “এই জঙ্গি সন্ত্রাসীরা এতো ভয়াবহ হতে পারত না, যদি জঙ্গির সঙ্গী বিএনপি এবং খালেদা জঙ্গিবাদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক, প্রধান সঙ্গী না হতো। জঙ্গি খারাপ, কিন্তু জঙ্গি খালেদাকে ভাল করা যাবে, আমি মনে করি এটা ভুল ধারণা।
“যারা মনে করে জামায়াত থেকে বিএনপিকে আলাদা করতে পারবেন, জঙ্গির সঙ্গ থেকে খালেদাকে আলাদা করতে পারবেন, আমি মনে করি এটা সঠিক না। জঙ্গি জামায়াত আর খালেদা, নয় তারা আলাদা।”
বিএনপিকে ‘আগাগোড়া একটি সাম্প্রদায়িক-সন্ত্রাসী দল’ আখ্যা দিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, রাজনীতিকে তারা ছাতা হিসাবে ব্যবহার করে এবং সুযোগ পেলেই সন্ত্রাসী হামলা চালায়। বিপদে পড়লে গণতন্ত্রের ঝাণ্ডা তোলে।
ইনু বলেন, “আগামী নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতি আর কোনো দিন ‘একবার রাজাকার আরেকবার মুক্তিযোদ্ধা’ এমন মিউজিক্যাল চেয়ার থাকবে না। বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠে কেবল মুক্তিযোদ্ধারাই খেলবে।
পাঠ্যপুস্তকে সাম্প্রদায়িকীকরণের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়ার প্রতিশ্রুতি তুলে ধরে জাসদ সভাপতি বলেন, “বাল্যবিবাহের যে আইন করা হয়েছে, বিশেষ বিধান নিয়ে নারী সংগঠন বুদ্ধিজীবীরা আপত্তি তুলেছেন।আমি মনে করি আলোচনা করে নীতিমালা তৈরির সময় এটা নিষ্পত্তি করা উচিত।”
সমাবেশে জাসদ সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার বলেন, “জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা মোকাবেলায় জাসদকে প্রস্তুত করতে হবে এবং জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। সমাজতন্ত্রের পথে কোনো বাধা আমরা মেনে নেব না।”
সমাবেশে দলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যে জাসদের সর্বশেষ ভাঙনের বিষয়ে কোনো কথা না এলেও বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের বক্তব্যে বিভিন্নভাবে উঠে আসে।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, “একবছর পর সমাবেশে মিলিত হওয়ার কথা জাসদ রেখেছে। গত বছর এই সময়ে কমিটি হওয়ার পর জাসদের একটি অংশ বিভ্রান্ত হয়ে চলে গিয়েছেন। আপনাদের বলবো, আপনারা বিভ্রান্ত হয়েছেন, কিন্তু নেতাকর্মীরা বিভ্রান্ত হননি। তার প্রমাণ আজকের এতোবড় সমাবেশ।”
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে ইনু জাসদের কার্যকরী সভাপতি রবিউল আলম, সহ-সভাপতি রেজাউল করিম তানসেন ও মীর হোসাইন আখতার, ইকবাল হোসেন খান, আবদুল হাই তালুকদার, হাবিবুর রহমান শওকত, আফরোজা হক রীনা, শফিউদ্দিন মোল্লাসহ বিভিন্ন মহানগর ও জেলার নেতারা বক্তব্য দেন।