নির্বাচনে অংশ নিতে এখন থেকেই ‘সমান-সুযোগ’ চান মওদুদ

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রায় দুই বছর বাকি থাকলেও আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে নির্বাচনী প্রচারভিযানে নেমেছেন দাবি করে এখন থেকে বিএনপিকেও নির্বাচনী প্রচার চালানোর সুযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন দলটির নেতা মওদুদ আহমেদ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 March 2017, 12:03 PM
Updated : 10 March 2017, 02:00 PM

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, “প্রধানমন্ত্রী এরই মধ্যে নির্বাচনী প্রচারভিযানে নেমে গেছেন। তিনি বগুড়ায় জনসভা করেছেন, নৌকায় ভোট চেয়েছেন মানুষের কাছে। এটা দেখে মনে হচ্ছে, একতরফা একটা নির্বাচন করার ষড়যন্ত্র তারা করছে।

“আমরা বলতে চাই, গণতন্ত্রের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। আমাদেরকে জনসভা করতে দিতে হবে, আমাদেরকে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে দিতে হবে। আমাদেরকে প্রতিবাদ করার সুযোগ দিতে হবে, যাতে করে আমরা, দেশের সকল রাজনৈতিক দল এখন থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য সমান্তরালভাবে সমান সুযোগ-সুবিধা পাই।”

শুক্রবার রাজধানীর এক আলোচনা সভা থেকে এ দাবি জানিয়ে নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে মওদুদ বলেন, “নির্বাচন কমিশন আজকে সরকারকে বলুক যে, এখন থেকে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের জনসভা আয়োজনে কোনো বিধি-নিষেধ থাকবে না।”

“সত্যিকার অর্থে যদি সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ উন্মুক্ত করতে চাই, তাহলে এখন থেকেই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সৃষ্টি করতে হবে। যে নির্বাচন কমিশনের কথা আমরা বলছি, তাদের বড় দায়িত্ব হচ্ছে, এখন থেকে সকল রাজনৈতিক দলকে সমান সুযোগ দেওয়ার ব্যবস্থা করা।”

জনসভায় লোকসমাগমের ভয়ে সরকার বিএনপিকে জনসভা করতে দেয় না বলেও অভিযোগ করেন দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করা বিএনপির এই নেতা।

“আজকে যদি বেগম খালেদা জিয়া একটি জনসভা করার সুযোগ পান, তাহলে প্রমাণ করে দেবে বাংলাদেশের জনগণ কাদের পক্ষে আছে। সেই ভয়ে তারা আমাদের জনসভা করতে দেয় না।

“সরকারকে বলব, সমঝোতার পথে আসুন। আমরা সংলাপ চাই, রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমেই তা করতে চাই। আর যদি সমঝোতা না হয়, আন্দোলনের বিকল্প থাকবে না।”

‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের করণীয়’ শিরোনামে জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ ডেমোক্রেটিক কাউন্সিল।

আলোচনায় ক্ষমতাসীনদের প্রতি অভিযোগ এনে বিএনপি নেতা মওদুদ বলেন, “যে রাজনৈতিক পরিবেশ সরকার সৃষ্টি করেছে, এটা মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সম্পূর্ণ পরিপন্থি, এবং এই চেতনাকে এই সরকারই আজকে ধ্বংস করে দিয়েছে, চেষ্টা করছে।

“আমি বলতে চাই, মুক্তিযুদ্ধের এই চেতনাকে ধবংস করা যাবে না এবং এই চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশে গণতন্ত্র আবার ফিরে আসবে।”

নিজ দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টে দুর্নীতির অভিযোগে দায়ের করা দুটি মামলাকে সরকারের ‘প্রতিহিংসামূলক মামলা’ বলে আখ্যায়িত বিএনপি নেতা মওদুদ।

তিনি বলেন, “এই দুইটি মামলায় সরকারের কোনো অর্থ জড়িত নয়। তারপরও রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় এই দু্ইটি মামলা চলছে।

“কেউ যদি তার পিতার নামে বা তার স্বামীর নামে ফাউন্ডেশন বা ট্রাস্ট করেন- এটা কী বিশ্বাসযোগ্য যে, সেই স্ত্রী বা সন্তান তার স্বামী ও পিতার নামে যে ট্রাস্ট, তা থেকে অর্থ আত্মসাৎ করতে পারেন। এটা দেশের একটি মানুষও বিশ্বাস করে না।”

মামলা দুটিকে ‘ভিত্তিহীন’ ও ‘আইনবহির্ভূত’ মন্তব্য করে বিএনপি নেত্রীকে ‘অপমান ও হয়রানি’ করার জন্যই তা দায়ের করা হয়েছে বলে দাবি করেন সাবেক এই মন্ত্রী।

বাংলাদেশে আইনের দুই রকম প্রয়োগ হচ্ছে দাবি করে মওদুদ বলেন, “নাইকো মামলাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও আসামি ছিলেন, আমাদের নেত্রীকেও আসামি করা হয়েছে।

“প্রধানমন্ত্রীর মামলাটি খারিজ হয়ে গেছে। আর আমাদের নেত্রীর মামলাটি চালু রাখা হয়েছে। অর্থাৎ আইনের শাসন যে বাংলাদেশে নাই, এটা একটি মাত্র উদাহরণ দিলাম, আরো হাজার হাজার উদাহরণ আছে।”

ডেমোক্রেটিক কাউন্সিলের সভাপতি এম এ হালিমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবুর রহমান সারোয়ার, আইন বিষয়ক সম্পাদক সানাউল্লাহ মিয়া, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ এবং নিপুন রায় চৌধুরী বক্তব্য রাখেন।