তিনি বলেছেন, দেশকে ‘গণতন্ত্রহীন’ রেখে আওয়ামী লীগই শহীদদের রক্তের সঙ্গে ‘বেঈমানি’ করেছে।
সোমবার এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় বিএনপি চেয়ারপারসনের কড়া সমালোচনা করেন।
ভাষা শহীদ দিবসের আগের দিন সকালে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যেধর পর বিকালে বিএনপির আলোচনা অনুষ্ঠানে ফখরুল বলেন, “ভাষা আন্দোলনের চেতনা ছিলে মূলত গণতান্ত্রিক চেতনা এবং ১৯৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল চেতনাটা ছিলে গণতান্ত্রিক চেতনা।
“এখনকার শাসকগোষ্ঠি বৃহত্তর জনগোষ্ঠির যে আশা-আকাঙ্ক্ষা পদদলিত করে দেশে একটা একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চায়। বন্দুক-অস্ত্র ব্যবহার করে জনগণের ন্যায্য দাবিগুলো তারা দাবিয়ে রাখছে।”
“আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, তারা (ক্ষমতাসীনরা) ভাষা আন্দোলনের চেতনার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তের সাথে বেঈমানি করেছে,” বলেন ফখরুল।
সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, “আজকে যে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলি, সেগুলো ধুলিসাৎ করে দিয়েছে বর্তমান সরকার।
“আজকে সত্যিকার অর্থে একদলীয় একটা সরকার চলছে। এটার জন্য আমরা যুদ্ধ করি নাই, এটার জন্য ভাষা আন্দোলনে আমি কারাবরণ করি নাই, এটার জন্য শহীদ বরকত, সালাম, রফিক রক্ত দেয়নি।”
ভাষা শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস উপলক্ষে দুদিনের কর্মসূচির প্রথম দিনে রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনা সভা করে বিএনপি।
একুশের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ঐক্যনবদ্ধ হয়ে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার সংগ্রামে নামার আহ্বান জানান দলটির মহাসচিব।
“নিপীড়ন-নির্যাতনে কেউ বাসা-বাড়িতে থাকতে পারে না। আমাদের অনেক কর্মীরা নিজের বাড়িতে থাকতে পারে না, অন্য বাড়িতে থাকে, নেতা-কর্মীরা নিজেদের পাড়ায় থাকতে পারে না, অন্য পাড়ায় গিয়ে থাকে। এই হচ্ছে রাজনৈতিক নিপীড়নের চিত্র।”
ভোলায় রোববার অনুষ্ঠিত বিএনপির জেলা সম্মেলনে বিভিন্ন থানা-উপজেলা থেকে নেতা-কর্মীদের আসতে দেওয়া হয়নি বলেও দাবি করেন ওই কর্মসূচি উদ্বোধনকারী ফখরুল।
সরকার দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করে দিচ্ছে দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “মিথ্যা বলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের একটা কল্পকাহিনী তৈরি করে জনগণকে বোঝানো হচ্ছে যে বাংলাদেশ দ্রুত উন্নতির দিকে এগিয়ে চলেছে, এত প্রবৃদ্ধি না কি কখনও হয়নি।”
২০০২- ২০০৫ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি যে অঙ্কে পৌঁছেছিল, আওয়ামী লীগের এই সরকার এখনও তা অতিক্রম করতে পারেননি বলে জানান সাবেক প্রতিমন্ত্রী ফখরুল।
“ওই সময়ে গোল্ডম্যান স্যাকসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশ উদীয়মান ব্যাঘ্র। এই যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, তা একদিনে না, ধারাবাহিকভাবে এসেছে। বিএনপি সরকারের আমলেই এই অর্থনৈতিক উন্নয়ন সবচেয়ে বেশি মাত্রা পেয়েছিল।”
নতুন নির্বাচন কমিশন ও আগামী নির্বাচনের বিষয়ে দলের অবস্থানও তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল।
“আজকে যে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে, তার প্রধান যাকে নিযুক্ত করা হয়েছেন তিনি হচ্ছেন আওয়ামী লীগ দলীয় একজন ব্যক্তি। কেউ তাকে চিনে না।”
“আগামীতে যে নির্বাচন আসবে, সেই নির্বাচন আমরা দেখতে চাই একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। সেটা যে নামেই চিহ্নিত করা হোক না কেন- সহায়ক সরকার বলি বা অন্য কোনো সরকার বলি, তাকে সম্পূর্ণভাবে নিরপেক্ষ হতে হবে।”
মহাসচিব ফখরুলের সভাপতিত্বে এবং প্রচার সম্পাদক শহিদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর পরিচালনায় সভায় সাবেক স্পিকার মুহাম্মদ জমিরউদ্দিন সরকার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ, অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক খন্দকার মুস্তাহিদুর রহমান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন বক্তব্য দেন।