রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীতে কি মতানৈক‌্য, প্রশ্ন ফখরুলের

রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের ভিন্নতায় তাদের মধ‌্যে মতানৈক‌্যের গন্ধ পাচ্ছে বিএনপি।

জ‌্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Jan 2017, 03:06 PM
Updated : 18 Jan 2017, 04:34 PM

“আমি জানি না, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আজকে সরকারের সম্পর্কের কোনো অবনতি হয়েছে কি না,” বলেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

নতুন ইসি গঠন নিয়ে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মঙ্গলবার সংলাপে দলগুলোর নিজেদের মধ‌্যে সংলাপের পরামর্শ দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

বুধবার রাজধানীর গুলিস্থানে কাজী বাশার মিলনায়তনে (মহানগর নাট‌্যমঞ্চ) এক সভায় ওই প্রসঙ্গ ধরে রাষ্ট্রপতি ও সরকারের মধ‌্যে মতানৈক‌্যের সন্দেহের কথা প্রকাশ করেন বিএনপি মহাসচিব।

ফখরুল বলেন, “রাষ্ট্রপতি বলে্ছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ করা উচিৎ। আমরা আলোচনা চাই, সংলাপ চাই। দেশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পাস্পরিক আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে একটা গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি হোক, দেশনেত্রী সেকথা বলেছেন। দুর্ভাগ্য প্রধানমন্ত্রী তা নাকচ করে দিয়েছেন।”

দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি সংলাপের আহ্বান জানিয়ে এলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বরাবরই তা প্রত‌্যাখ‌্যান করছে। এজন‌্য এক সময় বিএনপিকে ডেকে সাড়া না পাওয়াকে কারণ দেখিয়ে আসছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।

ফখরুল বলেন, “সংলাপের আহ্বান যখন আমরা করেছি, তখন নাকচ করে দেওয়া হয়েছে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া নিজে উদ্যোগ নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করার জন্য একটি প্রস্তাব দিয়েছেন; সাথে সাথে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেটাকে অন্তঃসারশূন‌্য বলে নাকচ করে দিলেন।

“তারপর রাষ্ট্রপতি যখন আমাদের ডাকলেন, আমরা একটু অবাকই হয়েছি। সরকারি দল করতে চায় না, রাষ্ট্রপতি সাহেব ডাকলেন। আমরা জানি না এই ডাকার মধ্যে কোনো ছলচাতুরি আছে কি না।”

“রাষ্ট্রপতি যদি আন্তরিকভাবে সংলাপের কথা বলে থাকেন, তিনি সত্যি কথা বলেছেন। এদেশের মানুষ সংলাপের মধ্য দিয়ে এই রাজনৈতিক সঙ্কটের নিরসন চায়,” বলেন তিনি।

রাষ্ট্রপতির কাছে গ্রহণযোগ‌্য একটি ইসি প্রত‌্যাশা করার কথা জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “যদি তা না হয়ে থাকে, আগের বারের মতো একটা মেরুদণ্ডহীন ও বংশবদ নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে, যা কোনো দিন এদেশের মানুষ মেনে নেবে না।”

দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৮১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়। ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি জিয়া জন্মগ্রহণ করেন। দিবসের কর্মসূচি হিসেবে বৃহস্পতিবার শেরে বাংলা নগরে জিয়ার কবরে ফুল দেবেন বিএনপি নেতারা।

সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস‌্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “এই সরকার শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও তার পরিবারকে ভয় পায়। সেজন্য তার নাম-নির্দেশন সব কিছু মুছে ফেলতে চায়, বিএনপিকে ধ্বংস করতে চায়।

“আমরা স্পষ্টভাষায় বলতে চাই, এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের বৃহত্তম দল বিএনপিকে ধ্বংস করা যাবে না। এই দল ফিনিক্স পাখির মতো, একে যত ভাগ করতে চাইবে, তত বেশি শক্তিশালী হবে।”

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী একটি ইসি গঠন করতে হবে। সেই সঙ্গে ভোটের সময় এই কমিশনকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়ার জন্য একটি সহায়ক সরকারও থাকতে হবে।

“সেই সরকার বলতে বুঝি নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকার, নির্বাচনের ফলাফলের ব্যাপারে তাদের কোনো স্বার্থ থাকবে না, কোনো রাজনীতির সঙ্গে তারা সম্পৃক্ত থাকবে না।”

১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন ছাড়া বাংলাদেশে আর কোনো ভোট অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ হয়নি বলে দাবি করেন প্রবীণ এই রাজনীতিক।

ফখরুলে সভাপতিত্বে ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপি নেতাদের মধ‌্যে বক্তব‌্য রাখেন মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, আবদুল্লাহ আল নোমান, সেলিমা রহমান, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক খন্দকার মুস্তাহিদুর রহমানও বক্তব্য রাখেন।