খালেদার প্রস্তাব বঙ্গভবনে, রাষ্ট্রপতির উদ্যোগে ‘খুশি’ বিএনপি

নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে খালেদা জিয়ার প্রস্তাব বঙ্গভবনে পৌঁছে দিয়েছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Dec 2016, 01:32 PM
Updated : 6 Dec 2016, 05:36 PM

এরপর বঙ্গভবন থেকে এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপে বসার ঘোষণায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।    

সকালে বঙ্গভবনে খালেদার প্রস্তাব পৌঁছে দেওয়ার পর এক সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল বলেন, “রাষ্ট্রপতির অফিস থেকে জানানো হয়েছে যে, তিনি আলোচনা শুরু করবেন। আমরা সবচেয়ে ভালো জিনিসটা আশা করব।

“রাষ্ট্রপতির এই উদ্যোগ থেকে আমরা ইতিবাচক রেজাল্ট আশা করছি।”

পরে বিকালে এক আলোচনা সভায় বিএনপির পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতিকে সাধুবাদ জানান মির্জা ফখরুল।

নির্বাচন কমিশন গঠন বিষয়ে খালেদা জিয়ার প্রস্তাব নিয়ে মঙ্গলবার বঙ্গভবনে যান বিএনপি নেতারা

তিনি বলেন, “আজকে একটা ভালো খবর আমরা পেয়েছি, সেজন্য মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জানাই। তার প্রেস সেক্রেটারি দুপুরে বলেছেন যে, তিনি (রাষ্ট্রপতি) বিদেশ থেকে ফিরে আসার পরেই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচন কমিশন নিয়ে আলোচনা শুরু করবেন। ধন্যবাদ রাষ্ট্রপতিকে।

“তিনি জনগণের যে দাবি, সেই দাবিকে সম্মান করেছেন এবং তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করতে চেয়েছেন। আমরা খুব খুশি হয়েছি।”

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল রুহুল আলম চৌধুরী ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সকাল ১১টায় বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতির সহকারী সামরিক সচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইনুর রহমানের কাছে দলের মহাসচিবের একটি চিঠি ও খালেদা জিয়ার প্রস্তাবের অনুলিপি পৌঁছে দেয়।

এরপর দুপুরে নয়া পল্টনে ২০ দলীয় জোটের বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা সব সময়ই আলোচনার মাধ্যমে, সমঝোতার মাধ্যমে রাজনৈতিক মীমাংসায় পৌঁছাতে বিশ্বাস করি। সেই কারণেই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এই প্রস্তাবনা দিয়েছেন।

“আমরা আশা করি, রাষ্ট্রপতি যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন, সেই উদ্যোগ গ্রহণ করে সফল হবেন এবং সমস্ত রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন করতে তিনি (রাষ্ট্রপতি) সক্ষম হবেন।”

তবে আগেরবারের মতো আওয়ামী লীগের ‘প্রেসক্রিপশন’ অনুযায়ী সার্চ কমিটি করে নির্বাচন কমিশন গঠন যেন না হয় সে প্রত্যাশা জানান তিনি।

বিকালে ডিআরইউ মিলনায়তনে ‘স্বৈরাচারের পতন ও গণতন্ত্র মুক্তি দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্যে সবাইকে নব্বইয়ের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে ‘গণতন্ত্র ফিরিয়ে’ আনার আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।

“১৯৯০ সালে স্বৈরাচারের পতনের জন্য ছাত্র-জনতার যে অভ্যুত্থান ঘটানো হয়েছিল, এই ছাত্র-জনতাকে জাগ্রত করে তাদের গণতন্ত্রের পথে নিয়ে যেতে হবে। তাদের গণতন্ত্রের বিজয়ের পথে, সংগ্রামের পথে নিয়ে যেতে হবে। এটাই হোক- আজকের দিনের শপথ।”

বিকালে ডিআরইউয়ে আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

গণআন্দোলনের মুখে ১৯৯০ সালের
৬ ডিসেম্বর ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন সাবেক সামরিক শাসক এইচএম এরশাদ।

‘স্বৈরাচার পতন দিবসের’ আলোচনায় বর্তমান সরকারকে ‘নব্য ফ্যাসিস্ট সরকার’ আখ্যায়িত করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, “ধিক্কার জানাচ্ছি এই সরকারকে, যারা আজকে স্বৈরাচারকে আশ্রয় দিয়ে তাদের আবার পুনঃস্থাপিত করে নতুন জীবন দিয়ে তাদের সরকারের অঙ্গ বানিয়েছে, রাজনীতিতে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে। এটাই হচ্ছে ‘আইরনি’।

“যাদের বিরুদ্ধে দেশের ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধ বিপ্লব করে তাদের পরাজিত করে ফেলে দিয়েছিল, তাদেরই তারা (আওয়ামী লীগ) নিয়ে একটা অনৈতিক সরকার গঠন করে দেশের মানুষের ওপরে আরেকটা স্টিমরোলার চালিয়ে যাচ্ছে।

“এই সরকারকে যদি আমরা স্বৈরাচার বলি, আমার মনে হয় সঠিক হবে না। স্বৈরাচারের যে সংজ্ঞা তা ছাড়িয়ে তারা অনেক দূর চলে গেছে। এখন এটাকে নব্য ফ্যাসিস্ট সরকার ছাড়া কিছু বলা যাবে না।”

মঙ্গলবার বিভিন্ন পত্রিকায় বনানী থেকে চার যুবকের অন্তর্ধানের খবর এবং নাটোর থেকে গুম হওয়া তিন ছাত্রলীগ নেতার লাশ দিনাজপুরে পাওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সমালোচনা করেন বিএনপি নেতা ফখরুল।

“বিরোধী আন্দোলনের সময়ে গুম হওয়া মানুষের বিষয়ে পরিবারের আকুতির জবাবে মন্ত্রী বলেছেন, ওরা আত্মগোপন করে আছে অথবা নিজেরাই লুকিয়ে আছে। তাদের খুঁজে বের করার দায়িত্ব কার? এই দায়িত্ব আপনার ওপরই বর্তাবে আপনি সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আপনি তাদের খুঁজে বের করে দেবেন।”

অতীতচারিতা, বিএনপিকে ‘বকাবকি’ ও বিরোধীদের ‘দমনের’ পথ থেকে সরে আসতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, “সরকার ও আওয়ামী লীগের প্রধানের কাছে আহ্বান জানাতে চাই, আপনারা এক সময়ে গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করেছেন, আপনারা দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন। সেই গণতন্ত্রকে ধ্বংস করবেন না। অতীতে একবার করেছেন, আর করবেন না।

“সেই খাতায় নাম লেখাবেন না, যে খাতায় ধিকৃত ব্যক্তিদের নাম লেখা আছে। এটা আমরা চাই না। আমরা চাই, এদেশের রাজনৈতিক দলের নেতাদের নামই স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাক, উজ্জ্বল হয়ে থাক। আমরা চাই, এই দেশের মানুষ একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাতে বাস করুন।”

সব দলের অংশগ্রহণে ‘নিরপেক্ষ’ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা বলি না যে, বিএনপিকে ক্ষমতায় বসাতে হবে। আমরা বলি, জনগণের প্রতিনিধিকে ক্ষমতায় বসাতে হবে। যারা আজ দেশ শাসন করছেন, তারা জনগণের প্রতিনিধি নন কারণ তারা নির্বাচিত হননি।”

স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে আত্মত্যাগকারীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান মির্জা ফখরুল।   

নব্বইয়ে ডাকসু’র ভিপি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে এবং তৎকালীন ডাকসুর এজিএস নাজিমউদ্দিন আলমের পরিচালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে হাবিবুর রহমান হাবিব, খায়রুল কবির খোকন, মুস্তাফিজুর রহমান বাবুল, খোন্দকার লুৎফর রহমান, সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, আসাদুর রহমান খান আসাদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।