নাসিরনগর ঘুরে আসা সিপিবির প্রতিনিধি দলের প্রতিবেদন তুলে ধরে শুক্রবার সিপিবির কেন্দ্রীয় কার্যালয় এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম এ দাবি জানান।
২০১২ সালে কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মন্দির ও বসতিতে হামলার প্রসঙ্গ টেনে সিপিবি সভাপতি বলেন, “এসব ঘটনা প্রতিহত করার জন্য সরকার এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার ছিল তা হয়নি। রামুতেও দেখেছি, নাসিরনগরেও আমরা দেখছি।
‘সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস’ মোকাবেলায় সরকার ‘আপসকামী মনোভাব’ দেখাচ্ছে মন্তব্য করে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, এসব ঘটনাকে হালকা করে দেখার সুযোগ নেই। অন্যান্য ক্ষেত্রে সরকার যদি ‘জিরো টলারেন্স’ দেখাতে পারে এক্ষেত্রেও তা দেখানো উচিৎ।
ফেইসবুকে ইসলাম অবমাননার অভিযোগ তুলে গত ৩০ অক্টোবর নাসিরনগরে ১৫টি মন্দির এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের দেড় শতাধিক ঘরে ভাংচুর ও লুটপাট চালানো হয়। বুধবার সিপিবির একটি প্রতিনিধি দল ওই এলাকা পরিদর্শন করে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
‘সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস’ মোকাবিলায় প্রতিনিধিদলের প্রতিবেদনে আসা পাঁচটি দাবি হল- হামলার ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা, সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম বাতিল, ব্যর্থ প্রশাসনের অপসারণ এবং নাসিরনগরে আক্রান্তদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়া।
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম সাম্প্রদায়িকতাকে দেশের ‘এক নম্বরের বিপদ’ হিসেবে বর্ণনা করেন এবং সরকারের বিরুদ্ধে ‘সাম্প্রদায়িকতার কার্ড’ খেলার অভিযোগ আনেন।
তিনি বলেন, “আমরা জানি যুদ্ধাপরাধীদের সংগঠন জামায়াতে ইসলামী এবং আরও যেসব সাম্প্রদায়িক সংগঠন-সংস্থা আছে সেগুলোর সাথে বিএনপি জোটভুক্ত। বিএনপি সরাসরি তাদের মদদ দিচ্ছে। দুঃখজনক হল, সরকার একা বিএনপিকে সাম্প্রদায়িক কার্ড খেলার সুযোগ দিতে চাচ্ছে না।
“বিএনপির সাথে সরকারও এখন প্রতিযোগিতায় নেমেছে। নির্বাচনের সমীকরণ নিজেদের পক্ষে রাখার জন্য সাম্প্রদায়িকতার কার্ড খেলতে সরকারও পিছপা হচ্ছে না। তাই সাম্প্রদায়িকতা প্রশ্নে সরকার আপসকামী মনোভাব দেখাচ্ছে।”
সিপিবি সভাপতি বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উপর সাম্প্রতিক হামলা-নির্যাতন ‘এক সূতায় গাঁথা’।
“দু-এক দিনের ব্যবধানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জে হামলার ঘটনা ঘটেছে। গতকালও বানারিপাড়ায়, বরিশালের ধুনটে, বগুড়া, যশোরে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয়ে হামলা হয়েছে। এসব ঘটনার কোনোটিই বিচ্ছিন্ন নয়।”
এসব দাবি সামনে রেখে আগামী ৮ নভেম্বর সিপিবি-বাসদের উদ্যোগে দেশব্যাপী ‘সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস প্রতিরোধ দিবস’ এবং ১৫ থেকে ৩০ নভেম্বর সিপিবির উদ্যোগে ‘সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী প্রচার ও প্রতিরোধ পক্ষ’ পালনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
সিপিবি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রাগীব আহসান মুন্নার নেতৃত্বে তাদের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা ২ নভেম্বর নাসিরনগরে আক্রান্তদের বাড়িঘর ঘুরে দেখেন।
সিপিবি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আবদুল্লাহ আল ক্বাফী রতন, মনিরা বেগম অনু, কাজী রুহুল আমিন, সিপিবি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শাহরিয়ার মো. ফিরোজ, সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় পরিষদ সদস্য সাজিদুল ইসলামও ছিলেন এই দলে।
প্রতিনিধি দলের সদস্যরা ছাড়াও কেন্দ্রীয় নেতারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।