বিচার একদিন হবে, রেহাই কেউই পাবে না: ফখরুল

গুম-খুনে জড়িতদের বিচার বাংলাদেশে একদিন হবেই বলে ক্ষমতাসীনদের হুঁশিয়ার করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 August 2016, 02:37 PM
Updated : 30 August 2016, 02:44 PM

তিনি বলেছেন, “আজ বাংলাদেশে যারা এই ঘৃন‌্যতম অপরাধ করছেন, তারা যদি মনে করে থাকেন, তারা রেহাই পেয়ে যাবেন। এটা ভুল। তারা কেউই রেহাই পাবেন না।

“একদিন না একদিন জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে, একদিন না একদিন মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে, সেদিন এই ঘৃন‌্যতম অপরাধের জন্য দায়ীদের বিচারের সম্মুখীন হতে হবে।”

আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবসে মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে বিএনপির এক আলোচনা সভায় একথা বলেন ফখরুল।

অনুষ্ঠানে বিএনপির পক্ষ থেকে ‘ধানের শীষ’ পত্রিকার সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সায়ান্থ ‘অনন্ত অপেক্ষা …. …..’ নামে একটি প্রামাণ্যচিত্র উপস্থাপন করেন। এতে ২০০৯-২০১৬ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে নিখোঁজ বা গুম হওয়া নেতা-কর্মীদের পরিচয় তুলে ধরা হয়।

অনুষ্ঠানে নিখোঁজ হওয়া পরিবারের মধ্যে সাবেক সাংসদ হুমায়ুন কবীর পারভেজের স্বজন শাহনাজ আখতার, ছাত্রদলের আদনান চৌধুরীর বৃদ্ধা বাবা রুহুল আমিন চৌধুরী, নাজমুল ইসলামের স্ত্রী সাবেরা নাজমুল, নিজামউদ্দিন আহমেদ মুন্নার বাবা শামসুদ্দিন আহমেদ, সেলিম রেজা পিন্টুর বোন মুন্নী আখতার, খালেদ হাসান সোহেলের শিশুপুত্র আরিয়ান, চঞ্চল আহমেদের শিশুপুত্র আহাদ, সেলিম শাহিনের শিশুপুত্র আফতাব আহমেদ, পারভেজ হোসেনের শিশুকন‌্যা হৃদি হোসেন তাদের মনোবেদনা তুলে ধরেন।

বিএনপির দাবি, আওয়ামী লীগের আট বছরের শাসনকালে তাদের অন্তত এক হাজার নেতা-কর্মী খুন এবং পাঁচশ জন গুমের শিকার হয়েছেন; তবে ক্ষমতাসীনরা এই অভিযোগ প্রত‌্যাখ‌্যান করে আসছে।

বর্তমান সরকারের আমলে দমনপীড়নের অভিযোগ তুলে ফখরুল বলেন, “এনফোর্সড ডিসএপিয়ারেন্স (জোর করে অপহরণ বা তুলে নেওয়া) জাতিসংঘের ঘোষণায় ঘৃন‌্যতম অপরাধ।”

বাংলাদেশে এখন ‘জঙ্গলের শাসন’ চলছে দাবি করে তিনি বলেন, “একদিকে ভয়াবহ জঙ্গিবাদের আক্রমণ-আগ্রাসন, অন্যদিকে এই ফ্যাসিবাদের আক্রমণ-আগ্রাসন।

“আমি বলি যে এখানে একটা জঙ্গল হয়ে গেছে। একটা জঙ্গলের মধ্যে বাস করছি আমরা। এখানে মনে হয় যে, চতুর্দিকে পশু।”

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, “আজকে গণতন্ত্র নেই বলে রাজনীতি নেই। যে রাজনীতি আছে, সেটা একদলীয় একটি অপরাজনীতি। এটা সুষ্ঠু রাজনীতি নয়।

“গণতন্ত্র নেই বলে মানুষের অংশীদারিত্ব নেই বলে সরকারের জবাবদিহিতা নেই বলেই আজকে সমাজে নানা রকমের সমস্যা দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে যে বিষয়টি আমাদের সবচেয়ে উদ্বিগ্ন করে, তা হচ্ছে জঙ্গিবাদ-উগ্রবাদ-সন্ত্রাসবাদ।”

গণমাধ‌্যমও ‘অসহায়’

দেশে এখন আইনের শাসনের অনুপস্থিতির পাশাপাশি মত প্রকাশের স্বাধীনতাও নেই বলে দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব ফখরুল। তার মতে, গণমাধ‌্যমও মুক্ত নয়।

“মিডিয়া অসহায় হয়ে পড়েছে। তারা পুরোপুরিভাবে নিয়ন্ত্রিত সরকারের দ্বারা। কেউ যদি এদিক-সেদিক করেন, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ধমক দিয়েছেন- মিডিয়া দিতেও পারি, নিতেও পারি।”

“এরপরে কোন মিডিয়ার মালিকের ঘাড়ে কয়টা মাথা আছে, দেশে সরকারের নির্দেশে বাইরে যাবে। কেউই সরকারের নির্দেশের বাইরে যেতে পারছে না।”

আদালতেও ‘অনেক সময়’ সুবিচার পাওয়া যায় না বলে মন্তব্য করেন অনেকগুলো মামলার আসামি ফখরুল।

পুলিশি অভিযানে জঙ্গিদের নিহত হওয়ার বিষয়টি ধরে তিনি আবার বলেন, “ধরে নিয়ে গিয়ে ক্রসফায়ার, গান ব্যাটেলে হত্যা করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে- জঙ্গিদের জন্য কোনো আইন থাকবে না। অথচ আইনে সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা বলা আছে।

“জঙ্গিদের নাম করে সন্দেহভাজন হিসেবে যাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, তাদের কেউ কিন্তু আর জীবনে ফিরে আসতে পারছেন না, তাদের বন্দুকযুদ্ধে হত্যা করা হচ্ছে। দেশে আজ ভোটের অধিকার নেই, মানবাধিকার নেই, মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার নেই।”

জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা পদক ফিরিয়ে নেওয়ার উদ‌্যোগের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “যারা জিয়াউর রহমানকে অস্বীকার করবেন, তারা স্বাধীনতা যুদ্ধকে অস্বীকার করবেন। তার পদক কে নিলেন, তার পদক কে কোথায় রাখলেন, এটা এখন বিচার্য বিষয় নয়।”

বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা ও গণতান্ত্রিক শক্তিকে শক্তিশালী করা ছাড়া এখন আর কোনো বিকল্প নেই।

সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ও সহ সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুলের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বক্তব‌্য রাখেন জমির উদ্দিন সরকার, জয়নাল আবেদীন, নিতাই রায় চৌধুরী, এ এম মাহবুবউদ্দিন খোকন, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আসাদুজ্জামান, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন।

অনুষ্ঠানে আমিনুল হক, সানাউল্লাহ মিয়া, কায়সার কামাল, ওবায়দুল ইসলাম, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, ফাহিমা নাসরিন মুন্নী, এবিএম মোশাররফ হোসেন, আবদুল আউয়াল খান, আনোয়ার হোসেন, শায়রুল কবীর খান উপস্থিত ছিলেন।