তেল-গ্যাস কমিটির রামপাল ইস্যু হাইজ্যাক করেছেন খালেদা: আ. লীগ

সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের কোনো ইস্যু খুঁজে না পেয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তেল-গ‌্যাস কমিটির রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রবিরোধী আন্দোলন ছিনতাই করেছেন অভিযোগ করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 August 2016, 09:07 AM
Updated : 26 August 2016, 11:29 AM

শুক্রবার ধানমণ্ডিতে দলীয় সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে সরকারি দলটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ এই মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, “বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প করলে সুন্দরবন ধ্বংস হবে, ফলে পরিবেশের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। আসলে এমন প্রভাব পড়বে কি না এই জ্ঞান তার নেই।

“খালেদা জিয়া তার মনগড়া বক্তব্য দিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করতে চেষ্টা চালাচ্ছেন। প্রকৃতপক্ষে বেগম জিয়া সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের কোনো  ইস্যু না পেয়ে তেল-গ্যাস কমিটির ইস্যু হাইজ্যাক করেছে। বিএনপি এখন পরগাছা নির্ভর দলে পরিণত হয়ে গেছে।”

বাংলাদেশ-ভারত যৌথ উদ্যোগে সুন্দরবনের ইউনেস্কো ঘোষিত হেরিটেজ অংশ থেকে ৬৯ কিলোমিটার এবং সুন্দরবনের প্রান্তসীমা থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত রামপালে ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক ‘মৈত্রী সুপার থারমাল’ নামের বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে।

বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও ভারতের ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার করপোরেশন লিমিটেডের (এনটিপিসি) সমান অংশীদারিত্বে গঠিত বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেইন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি প্রকল্পটি ২০১৮ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে।

এই তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে তা বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের পরিবেশ ও প্রতিবেশ হুমকিতে ঠেলে দেবে বলে আশঙ্কা পরিবেশবাদীদের একাংশ ও বাম দলগুলোর।

ওই প্রকল্প বাতিলের দাবিতে বাম বাম দলগুলোর সমর্থন নিয়ে আন্দোলনর তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি ২৬ নভেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে, যাতে এর মধ্যেই সমর্থন জানিয়েছে বিএনপি।

এর আগে বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রামপাল প্রকল্পকে ‘দেশবিরোধী’ আখ্যা দিয়ে সুন্দরবনের কাছ থেকে অন্য এলাকায় সরিয়ে নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে শঙ্কার জবাবে সরকার বলছে, সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব‌্যবহার করে দূষণের মাত্রা ন‌্যূনতম রেখেই এই তাপ বিদ‌্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে, যা সুন্দরবনের প্রাকৃতিক পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত করবে না।

সংবাদ সম্মেলনে দেশের ৭৮ ভাগ লোক বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে বলে দাবি করে আওয়ামী লীগ নেতা হাছান বলেন, “২০০৯ সালে এদেশে ৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হতো। আর আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে সাত বছরে সেটা বেড়ে প্রায় ১৫ হাজার মেগাওয়াটে পরিণত হয়েছে।”

বিএনপির নেতৃত্বের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “মনগড়া বক্তব্য দিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করবেন না। নতুন করে গণ্ডগোল করার চেষ্টা করবেন না। অতি উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ভালো না।

“এগুলো সরকার অতীতের ন্যায় প্রতিরোধ করবে।”

সংবাদ সম্মেলনে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ফলে সম্ভাব্য দূষণ রোধে নেওয়া পদক্ষেপের সচিত্র তথ্যপ্রমাণসহ যুক্তি তুলে ধরেন হাছান মাহমুদ।

তিনি বলেন, “এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ৯৯ দশমিক ৯৯ ভাগ অর্থাৎ প্রায় শতভাগ ফ্লাইঅ্যাশ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। উন্নত প্রযুক্তির ইএসপি সিস্টেমে শতভাগ ফ্লাইঅ্যাশ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এগুলো বাংলাদেশের সিমেন্ট কারখানায় ব্যবহার করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

“৯৬ শতাংশ সালফার ডাই-অক্সাইড নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নাইট্রোজেন অক্সাইড, লো নাইট্রোজেন অক্সাইড ব্যবহারের মাধ্যমে এখানে নাইট্রোজেন অক্সাইড নিয়ন্ত্রণ করা হবে।”

এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরুদ্ধে যারা আন্দোলন করছেন ‘তাদের অনেকেই সঠিক তথ্য না জেনে কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবে অনেক ভুল তথ্য উপস্থাপন করছেন’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

“সেখানে বলা হয়েছে নদীর পানি ব্যবহার করা হলে নদী শুকিয়ে যাবে। প্রকৃতপক্ষে শুষ্ক মৌসুমে শূন্য দশমিক শূন্য পাচ ভাগ পানি ব্যবহার করা হবে। বর্ষা মৌসুমে সেটা অনেক কম। আবার এই পানি কুলিং সিস্টেমে ঠাণ্ডা করে আবার নদীতে ফেরত দেওয়া হবে। সুতরাং এইখানে ব্যাপকভাবে নদীর পানি ব্যবহারের কোনো সম্ভাবনাই নেই।”

হাছান বলেন, “বেগম জিয়া বলেছেন, রামপালের বাতাস গিয়ে সুন্দরবনের পরিবেশ বিনষ্ট করবে। কিন্তু প্রায় ৯০০ ফিট বা ৯০ তলার সমান উঁচু চিমনি ব্যবহার করা হবে। আর এ প্রকল্পের এরিয়ার বাতাস বছরের ৯ মাস বাতাস সুন্দরবনের বিপরীতে প্রবাহিত হয়। তাই এতে করে কোনো ক্ষতি হবে না।

“রামপাল প্রকল্প সুন্দরবন থেকে ১৪ কিলোমিটার, ওয়াল্ড হেরিটেজ থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে অবিস্থিত। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য কোনো কৃষি জমি এবং বসত-বাড়ি উচ্ছেদ করা হয়নি। শুধু ১৫০টি স্থাপনা পুর্নবাসন করা হচ্ছে।