জঙ্গি সন্দেহে আটকের পর ৫ লাখে রফা: ফখরুল

কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের পর আটক স্থানীয় বিএনপির এক নেতাকে পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ থেকে রেহাই দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 August 2016, 03:53 PM
Updated : 23 August 2016, 03:53 PM

মঙ্গলবার রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “মিরপুরে আমাদের পুরনো নেতা কায়সার সাহেব যিনি কমিশনার ছিলেন, এখন আবার বংশগত কারণে পীর হয়েছেন। তারপরও এখনও বিএনপি করেন।

“কল্যাণপুরে তথাকথিত জঙ্গি আস্তানায় অভিযান ‘থান্ডার বোল্ট’ এ পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসে। বলা হয় ‘আপনি তাজ ভবন নিয়মিত যাতায়াত করেন, আপনি জঙ্গিদের অর্থ দেন।

“শেষ পর্যন্ত ১৫ লাখ টাকা চেয়েছিল, ৫ লাখ টাকায় রফা হয়েছে। ৫ লাখ টাকা দিয়ে ওই জঙ্গি মামলা থেকে তিনি রক্ষা পেয়েছেন, কিন্তু কারাগার থেকে রক্ষা পাননি। অন্য একটা মামলায় তাকে জেলে পাঠিয়ে দিয়েছে।”

এরকম ঘটনা অহরহ ঘটছে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “কোথায় জঙ্গিবাদ হচ্ছে, কীভাবে খবর নিচ্ছেন?  অহরহ জঙ্গিবাদের কথা বলে এখন হাজার হাজার বিরোধী দলের একেবারে গ্রাম পর্যায়ের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এটাতে একদিকে ভয়ভীতি দেখানো হয় আর অন্যদিকে বাণিজ্যটা ভালো মতো হয়, প্রচুর পয়সা আমদানি হচ্ছে।”

কল্যাণপুরের ওই তাজ ভবনের মালিক আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত বলেও দাবি করেন তিনি।

কথিত বন্দুকযুদ্ধে সন্দেহভাজন জঙ্গিদের হত্যার সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, “প্রতিদিন ক্রসফায়ার, একটা-দুইটা-তিনটা চলছে। যতজনকে এই জঙ্গি সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের একজনও কি বেঁচে আছে? সবাইকে ক্রসফায়ার বা গানব্যাটেলে হত্যা করা হচ্ছে। তাহলে আপনারা (সরকার) তদন্ত করছেন কী?

‘ডেমোক্রেটিক স্পেস নেই’

বর্তমানে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব।

‘আমার দেশ’ পত্রিকার অনলাইন সংস্করণ বন্ধের প্রতিবাদে ওই আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “রাজনৈতিক পরিসর আমরা সেটাকে রাজনৈতিক মাঠ কর্মীরা বলি, ডেমোক্রেটিক স্পেস- এটা এখন একেবারেই অনুপস্থিত। একই কক্ষের বাইরে গিয়ে কথাও বলতে পারবেন না। কথা বললে হিসাব করে বলতে হবে বাইরে গিয়ে গ্রেপ্তার হবেন কি না।”

রাজধানীতে জনসভার জায়গাও ক্রমশ সংকুচিত করে ফেলা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, “পল্টন ময়দান এখন আর নেই, এটা এখন আউটার স্টেডিয়াম, ভাসানি স্টেডিয়াম, জিমনেসিয়াম- পুরোটাই দখল হয়ে গেছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বলেন বা কাকতলীয়ভাবে অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে যা-ই বলেন, আওয়ামী লীগ সেটাকে পরিপূর্ণতা দিয়েছে, যেটা শুরু করেছিল এরশাদ সাহেব।

“শুধু এটাই নয়, এই মুক্তাঙ্গণ- সেখানে গিয়ে আমরা কথা বলতাম- সেটাও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মানিক মিয়া এভিনিউতে বড় বড় জনসভাগুলো করা হত, সেখানে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার আসার পরে মাঝখানে আইল্যান্ড নির্মাণ করে সেই রাস্তাকে বন্ধ করে দিয়ে সেখানে সভা-সমাবেশ বন্ধ করে দিয়েছে।”

বর্তমানে সভা-সমাবেশ করার ক্ষেত্রে পুলিশের অনুমতির বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, “এখন আমরা যখন বলি একটা সভা করতে চাই। আইন তো করেই দিয়েছে, পুলিশের অনুমতি ছাড়া কোনো সভা করা যাবে না। সেই পার্টি অফিসের (নয়া পল্টন) সামনেও সভা করতে দেবে না।

“আবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সভা করতে চাইলে দিনক্ষণের ব্যাপার আছে। আগস্ট মাসে আমরা কোনো সভা করতে পারব না। আমরা ৩১ আগস্ট দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনার জন্য ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তন চেয়েছিলাম, কর্তৃপক্ষ বলে দিয়েছে- ৩১ তারিখ পাবেন না, ১ সেপ্টেম্বর পাবেন। ৩১ আগস্ট আমরা দেব না।”

বিএনপির জেলা অফিসগুলো খুলতে দেওয়া হয় না এবং কখনও খুললেও সেখানে পুলিশ বসে থাকে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আশপাশে পুলিশের অবস্থান এবং সেখান থেকে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের বিষয়ও তুলে ধরেন তিনি।

এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, “সাধারণ মানুষগুলো আজ বড় কষ্টে আছে, তারা একটা দম বন্ধ করা পরিবেশের মধ্যে আছে। তারা স্বজন হারাচ্ছে, পুত্র হারাচ্ছে।

“তাদের জন্য আপনাদের সকলকে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। আপনি যদি চান একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বাস করবেন, আপনি যদি আপনার স্বকীয়তা ও নিজস্বতাকে রক্ষা করতে চান। তাহলে অবশ্যই আপনাদের রুখে দাঁড়াতে হবে, সেই ঘুরে দাঁড়াতে হবে।”

‘জাতীয় ঐক্য’

জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় খালেদা জিয়ার জাতীয় ঐক্যের আহ্বান নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “আমি বিভিন্ন দলের নেতাদের সঙ্গে যখন যোগাযোগ করি,  কথা বলি, তারা বিভিন্ন শর্ত জুড়ে দেন। ঠিক আছে শর্ত জুড়ে দিচ্ছেন। যখন আপনার উপরে খড়গটা এসে পড়ছে, তখন আপনি কাকে শর্ত জুড়ে দেবেন?

“আজকে কিন্তু মাহমুদুর রহমান মান্না ছাড়া পাননি, আজকে কিন্তু রামপালে কয়লার উপরে ভিত্তি করে পাওয়ার প্ল্যান্ট তৈরি করার যারা প্রতিবাদ করছেন, রাস্তায় নামছেন, তাদের পা ভেঙে দিতে কিন্তু কুণ্ঠবোধ করছে না। আনু মুহাম্মদ সাহেবের মতো পণ্ডিত ব্যক্তিকে রাস্তায় ফেলে দিয়ে মারতে কিন্তু কুন্ঠাবোধ করে না। কারণ সেটা তাদের স্বার্থের ব্যাপার আছে, সেটা তারা করবে।”

রাজনৈতিক দলসহ সবার প্রতি ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আজকে আমরা একটা বিষয়ে একমত হই, আমরা এখানে গণতান্ত্রিক পরিসর তৈরি করব, আমরা এখানে কথা বলার স্বাধীনতা নিশ্চিত করব- এজন্য আমরা একবার এক হয়ে আওয়াজ তুলি।

“বার বার আমরা আহ্বান করছি- আসুন আমরা নিজেদের ভুল-ক্রটি, বিভেদ-দ্বন্দ্ব না বাড়িয়ে একসাথে আমরা আমাদের দাবিটাকে, আমাদের পাওনাগুলোকে বুঝে নেওয়ার জন্য সোচ্চার হই।”

নতুন প্রজন্মকে ‘বাংলাদেশের সঠিক ইতিহাস’ জানার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, “আজকে দেশের বই-পত্রে যেসব ছাপা হচ্ছে তাতে ইতিহাসকে একেবারে ভিন্নভাবে দেখানো হচ্ছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে তা করা হচ্ছে।”

সাংবাদিক শফিক রেহমান, আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার মুক্তির দাবি জানান তিনি।

সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় ফরহাদ মজহার, আমার দেশ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের মহাসচিব ও আমার দেশ এর নগর সম্পাদক এম আবদুল্লাহ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, আমার দেশ পত্রিকার বার্তা সম্পাদক জাহেদ চৌধুরী, জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক কাদের গনি চৌধুরী, বিএনপির সহ প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক শাকিল ওয়াহেদ, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল প্রমখ বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবদুল হাই শিকদার।