মামলায় শাস্তি দেওয়ার মাধ্যমে তারেক রহমানসহ বিএনপির নেতৃত্বকে নির্বাচনে ‘অযোগ্য’ করার ষড়যন্ত্র চলছে দাবি করে সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় বক্তব্যে সরকারকে এই হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল বলেন, “বিএনপির নেতৃবৃন্দ যাতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারেন, সেজন্য নতুন চক্রান্ত শুরু হয়েছে। তারেক রহমানকে দিয়ে সেটা শুরু ।
“তবে আমরা স্পষ্টভাষায় বলে দিতে চাই, পরিবেশ-পরিস্থিতি এমন হয় যখন যোগ্য প্রার্থী লাগে না। তারেক রহমান বা অন্য কাউকে অভিযুক্ত কইরা যদি সরকার মনে করেন, নির্বাচনে জেতার পরিবেশ হয়ে যাচ্ছে- এটা ভুল, ভুল। আপনাদের (আওয়ামী লীগ) বিরুদ্ধে যারাই দাঁড়াবে, তারাই জিতবে। কারণ আপনাদের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ মানুষ, ক্ষুব্ধ জনগণ।”
দুর্নীতির নজির তুলে ধরতে গিয়ে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর রোববারের এক বক্তব্য ধরে নজরুল বলেন, “যে তথ্যমন্ত্রীর চাকরিই হল বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বক্তৃতা দেওয়া, সেও দেখলাম বলেছে, যে পরিমাণ সাহায্য দেওয়া হয়, গম দেওয়া হয়, তার ৮০ ভাগই এমপি সাহেবরা খেয়ে ফেলেন।
“এই সরকারের দুর্নীতি-অনাচার সীমাহীন। সরকার একটার পর একটা অপরাধ করে চলেছে। পত্রিকার পাতা খুললে দেখি, প্রতিদিন নানা ঘটনা ঘটছে।”
হারের ভয়ে আওয়ামী লীগ সুষ্ঠু নির্বাচন চায় না এবং বিএনপি নেতাদের নির্বাচন থেকে বাইরে রাখতে চায় বলে দাবি করেন বিএনপি নেতা নজরুল।
“অবাধ নির্বাচনের কোনো দাবি এই সরকার মানবে না। কিন্তু নির্বাচন করতেই হবে। আর তাই মিথ্যা মামলায় যে কোনো প্রকারে দুই বছরের বেশি সাজা দিতে হবে। তাহলে সাজা শেষ হওয়ার পরবর্তী পাঁচ বছরের মধ্যে আর নির্বাচনে অংশ নেওয়া যাবে না।”
মুদ্রা পাচারের মামলায় খালেদা জিয়ার ছেলে বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেকের কারাদণ্ড হওয়ায় তিনি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার যোগ্যতা হারিয়েছেন।
খালেদা জিয়াসহ বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের অনেক নেতার বিরুদ্ধেই ফৌজদারি মামলা বিচারাধীন। ওইসব মামলায় শাস্তি হলে তাদেরও একই পরিণতি ঘটবে বলে আশঙ্কা দলটির নেতাদের।
হাই কোর্টের রায়ে তারেকের শাস্তির পর বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে জাসাস ঢাকা মহানগর উত্তর প্রেস ক্লাবে আলোচনা সভা করে, যাতে নজরুল বক্তব্য রাখেন।
জাসাসের ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি আরিফুর রহমান মোল্লার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপি নেতা এ জেড এম জাহিদ হোসেন, হাবিবুর রহমান হাবিব, জাসাস সভাপতি এম এ মালেক, সাবেক সাংসদ রাশেদা বেগম হীরা, আইনজীবী ফাহিমা নাসরিন মুন্নী, জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক জোটের মহাসচিব রফিকুল ইসলাম।
‘তারেকই ভবিষ্যতে রাষ্ট্রনেতা’
মুদ্রা পাচার মামলায় দণ্ড নিয়ে যুক্তরাজ্যে থাকা তারেক রহমানকে ‘পরবর্তী রাষ্ট্রনেতা’ অভিহিত করেন বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরামের সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
তিনি বলেন, “তারেক রহমানের বিরুদ্ধে এই সরকার ক্ষুব্ধ, ক্রুব্ধ এবং আতঙ্কিত। এদেশে অনেক বড় বড় রাজনীতিবিদ নানা সময়ে আদালতের অভিযুক্ত হয়ে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন, আবার জনগণের রায়ে জনগণের নেতা হয়েছেন, রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন, অনেক দৃষ্টান্ত আছে।
“আমরা বলতে চাই, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে সাজা দেওয়ার পরেও তার রাষ্ট্রনেতা হতে বাধা নেই। আগামী দিনে নিশ্চয়ই ইনশাল্লাহ তিনি জনগণকে নেতৃত্ব দেবেন, জনগণের নেতার ভূমিকায় থাকবেন।”
জিয়াউর রহমানের বড় ছেলে তারেক তার মা খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকার সময় ব্যাপক প্রভাব নিয়ে ছিলেন। সরকার পরিচালনায় তার হস্তক্ষেপ ছিল বলেও আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগ।
তারেক বিএনপিতে যুক্ত হয়েই দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব হন। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে তিনি গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে গিয়েছিলেন, তারপর জামিনে মুক্তির পর স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে যাওয়ার পর আর ফেরেননি। প্রবাসে থাকার মধ্যেই বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান হন তিনি।
নজরুল বলেন, “তারেক রহমান একজন সংগঠক, তারেক রহমান একজন নেতা। তার ব্যক্তিগত কোনো দোষ নাই।
“দোষ হল, তিনি জনপ্রিয়; দোষ হল, তিনি বিএনপির নেতা; দোষ হল, বাংলাদেশে একজন মাত্র নেতা আছেন, যার পিতা ছিলেন নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি, আর মা ছিলেন জনগণের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী। আর কেউ নাই বাংলাদেশে এমন মানুষ।”
শেখ হাসিনা হত্যাচেষ্টা মামলাসহ অনেক মামলা নিয়ে লন্ডনে থাকা তারেকের দেশে ফেরার কোনো ইঙ্গিত না মিললেও বিএনপির কর্মীরা তাকেই দলের পরবর্তী কর্ণধার মনে করেন।
লন্ডনে থেকে ইতিহাসের মীমাংসিত বিষয়ে তারেকের বিতর্কিত বক্তব্যের পর তার বক্তব্য-বিবৃতি প্রচার কিংবা প্রকাশে বাংলাদেশের আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।