তারেক রহমান শুধু জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার ছেলে নন, তিনি বাংলাদেশের মানুষের ‘সবচেয়ে প্রিয় যে দল, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী রাজনীতির দর্শনের একজন ধারক ও পতাকাধারী’ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
তারেক দণ্ডিত হওয়ার পর এখন ট্রাইব্যুনাল করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের ‘দণ্ড দেওয়ার পাঁয়তারা’ চলছে বলেও অভিযোগ করেছেন ফখরুল।
এ থেকে রক্ষা পেতে নেতাকর্মীদের সংগঠিত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
২০ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের মামলার আপিলের রায়ে গত বৃহস্পতিবার তারেক রহমানকে সাত বছরের কারাদণ্ড ও ২০ কোটি টাকা জরিমানা করে হাই কোর্ট। আড়াই বছর আগে এ মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে তারেক খালাস পেলেও অপর আসামি তার বন্ধু ও ব্যবসায়িক অংশীদার গিয়াসউদ্দিন মামুন দণ্ডিত হয়েছিলেন।
আপিলে তারেকের দণ্ড হওয়ার প্রতিবাদে রোববার বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সমাবেশের আয়োজন করে মহানগর বিএনপি।
বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, “তারেক রহমানের এই রায়ে আমরা ভীত নই, আমরা হতাশ হয়েছি, আমরা ক্ষুব্ধ। এই রায়ে এটাই প্রমাণ হয়েছে যে, তারা (সরকার) আমাদের বুকের মধ্যে হাত দিয়েছে।
এখন খালেদা জিয়াসহ অন্যদের ‘ট্রাইব্যুনাল এর মাধ্যমে ‘দ্রুত সাজা’ দেওয়ার পাঁয়তারা চলছে বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “জনাব তারেক রহমান সাহেবের মামলাগুলোর এই রায় দেওয়া চলছে শেষ পর্যায়ে। এরপর এক এক করে কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতা-ই শুধু নয়, গ্রাম পর্যায়ে নেতাকর্মীদের মামলাগুলো এই ট্রাইব্যুনালে নিয়ে আসবে।”
ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে তিনটি ট্রাইব্যুনাল করা হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, “সেখানে আমাদের যু্বদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদলসহ বিএনপির নেতৃবৃন্দ, গ্রাম পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলাগুলো ট্রাইব্যুনালে নেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ অতি দ্রুত এই মামলাগুলোকে শেষ করার জন্য তারা ব্যবস্থা নিয়েছে।
“এরপর দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ সমস্ত নেতৃবৃন্দ এখানে আছেন। আমরা কেউই বাদ যাব না। আমাদের নেতাকর্মীরা কেউ বাদ যাচ্ছে না। তাদের হাত-পা-চোখ চলে গেছে।”
দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র ‘ধ্বংস’ এবং জাতীয়তাবাদী দর্শন ‘নিশ্চিহ্ন’ করে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এসব করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।
এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে নেতাকর্মীদের ‘ঘরে বসে না থেকে জেগে উঠার’ আহ্বান জানান তিনি।
“এখন আমাদের ঘরে বসে থাকবার সময় নেই। এই অবস্থা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। এখন দলকে সংগঠিত করতে হবে।
“পরস্পর পরস্পরের মধ্যে ছোট-খাটো দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ও ভেদাভেদ আছে, তা ভুলে গিয়ে ঐক্য সৃষ্টি করতে হবে এবং সমগ্র জাতির ঐক্য সৃষ্টি করে আমাদের গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করতে হবে। এই ভয়াবহ উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে- এটা হলো আমাদের একমাত্র কাজ।”
তারেক রহমানকে বিএনপির ভবিষ্যৎ কাণ্ডারি অভিহিত করে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে তাকে সাজা দিয়েছে।
“কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অর্থলোপাট, উগ্রবাদ-জঙ্গিবাদের উত্থানসহ তাদের পাহাড় প্রমাণ ব্যর্থতার কথা আমরা যাতে না বলি সেজন্য সরকার আমাদের নেতাকে সাজা দেওয়ার্ এই কৌশল নিয়েছে।”
নিম্ন আদালতে তারেক রহমানকে খালাসের রায় সম্পর্কে আওয়ামী লীগের সাংসদ শেখ ফজলুল করিম সেলিমের বক্তব্যের সমালোচনা করেন বিএনপির মহানগরের আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস।
তিনি বলেন, “শেখ সেলিম বলেছেন, নিম্ন আদালতের বিচারককে তিন কোটি টাকা ঘুষ দিয়ে রায় প্রভাবিত করা হয়েছে। এরকম বক্তব্য দিয়ে আজকে আদালতকে অপমান করা হচ্ছে। আজকে তারা ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় আদালতকে প্রভাবিত করছে- এটা প্রমাণ করল।”
আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, সেলিমা রহমান, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবীর খোকন, আবদুল খায়ের বাবলু, শহীদউদ্দিন এ্যানি, আবদুস সালাম আজাদ, শামীমুর রহমান শামীম, শহিদুল ইসলাম বাবুল, কাজী আবুল বাশার বক্তব্য রাখেন।
তারেকের মামলা প্রত্যাহার দাবিতে কর্মসূচি
তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া সব মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে চার দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম।
রোববার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলেন ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তাদের কর্মসূচির মধ্যে সভা, বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন রয়েছে।
তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিসহ দেশের সব জেলা বারের জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করবে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মাহবুব উদ্দিন খোকন আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, “ফোরাম তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানাচ্ছে।”
এক প্রশ্নের জবাবে ফোরামের সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘যথাসময়ে’ তারেক রহমান এসে আপিল করবেন। বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টে ১৭ বছর পরের আপিলও মঞ্জুর হওয়ার উদাহরণ রয়েছে।
এ সময় অন্যদের মধ্যে সমিতির সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার এম বদরুদ্দোজা বাদল, সানাউল্লাহ মিয়া, তৈমুর আলম খন্দকার ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল উপস্থিত ছিলেন।