কর্নেল তাহেরের নামে ‘গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার’ নামকরণের দাবি

জাসদের এক সময়ের সামরিক শাখা গণবাহিনীর প্রধান মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল তাহেরের নামে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নামকরণের দাবি জানিয়েছেন দলটির একাংশের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 July 2016, 07:27 PM
Updated : 21 July 2016, 07:27 PM

বৃহস্পতিবার বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে কর্নেল তাহেরের মৃত্যুবার্ষিকীর আলোচনা সভায় তিনি এ দাবি জানান।

আম্বিয়া বলেন, “তাহের ছিলেন অতুলনীয় দেশপ্রেমিক ও সাহসী পুরুষ। বীর উত্তম তাহের সমাজ বদলের স্বপ্নে বিপ্লবী রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছিলেন। ৭ নভেম্বর ১৯৭৫ সিপাহী জনতার অভ্যুত্থান সফল হতে না পারলেও, জনমানুষের মুক্তির জন্য তাহেরের সাহসী আত্মদান বাংলাদেশের ইতিহাসে চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

“ইতোমধ্যে হাই কোর্টে তাহেরের গোপন বিচার প্রহসন অবৈধ ঘোষিত হয়েছে এবং তাহেরও মামলার অন্যান্য অভিযুক্তদেরকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ ও রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মানিত করার নির্দেশ দেওয়া হযেছে। সে অনুযায়ী আমরা জাতীয় বীর কর্নেল তাহেরের নামে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নামকরণের দাবি জানাচ্ছি।”

শরীফ নুরুল আম্বিয়া

পঁচাত্তরে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর ৩ থেকে ৭ নভেম্বরের ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে গৃহবন্দি তৎকালীন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানকে উদ্ধার করেন সেনাবাহিনী থেকে অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল তাহের। পরবর্তীতে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে বিচারের নামে কর্নেল তাহেরকে সামরিক আদালতে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে ১৯৭৬ সালের ২১ জুলাই তা কার্যকর করা হয়।

পরবর্তীতে আদালতের এক রায়ে একে ‘হত্যাকাণ্ড’ বলে এর জন্য জেনারেল জিয়াকে দায়ী করা হয়।

কর্নেল তাহেরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের দিনটিকে তাহের দিবস হিসেবে পালন করে তার দল জাসদ।

সভায় জাসদ একাংশের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান বলেন, “তাহেরের মত ইস্পাতদৃঢ় চেতনা নিয়ে সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদকে পরাস্ত করতে হবে। লড়তে হবে ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে।”

কর্নেল তাহেরকে বাংলাদেশের ‘বীরত্বের প্রতীক’ হিসেবে অভিহিত করেন জাসদের কার্যকরী সভাপতি মইন উদ্দিন খান বাদল।

তিনি বলেন, “বীরেরা মানুষকে দাঁড়াবার সাহস যোগায়। জিয়া মুক্তিযুদ্ধে কখনো সম্মুখ সমরে গিয়েছেন, এমন ঘটনা পাওয়া যায়নি। আর এই জিয়াই তাহের হত্যার জন্য দায়ী। কিন্তু কর্নেল তাহের সম্মুখ যুদ্ধে গিয়ে একটা পা হারিয়েছেন।”

সভায় ন্যাপ সভাপতি পংকজ ভট্টাচার্য বলেন, “কর্নেল তাহের হলেন জাতীয় বীর। গণমানুষের মুক্তির জন্য এমন দুঃসাহসিকতা, আত্মবলিদানের উদাহরণ খুব বেশি নেই বাংলাদেশে।”

চল্লিশতম ‘তাহের দিবস’ উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে শরীফ নুরুল আম্বিয়া ও নাজমুল হক প্রধান নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ।

গত ১২ মার্চ কাউন্সিলে নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্বে দুই অংশ ভাগ হয় জাসদ, যার একটি অংশের নেতৃত্বে আছেন আম্বিয়া-প্রধান। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বাধীন অপর অংশের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতারকে নেতৃত্বে আনা নিয়েই তাদের মধ্যে এই ভাঙন।

মাইন উদ্দিন খান বাদল

এরপর কয়েকবার ভেঙে যাওয়া দুই অংশের ঐক্য প্রক্রিয়ার খবর শোনা গেলেও তা আর বাস্তবায়িত হতে দেখা যায় নি।

তাহের দিবসের আলোচনা সভায় দলের ঐক্য প্রসঙ্গে একাংশের নেতা শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, “জনৈক ব্যক্তি… ব্যক্তি স্বার্থ ও অভিলাষ চরিতার্থ করতে দলে বিভক্তি আরোপ করেছেন, ষড়যন্ত্রের রাজনীতি করতে যাতে সহজ হয় এ জন্যে। জাসদ কর্মীরা তাকে ক্ষমা করবে না। মন্ত্রিত্ব দিয়ে সংগ্রামী দল হয় না, যা এখন জরুরি।

“যারা ঐক্যের চেষ্টা করছেন তাদের প্রতি পূর্ণ সহানুভূতি সহকারে বলতে চাই, দলীয় নেতৃত্ব ও মন্ত্রিত্ব আলাদা করেই শুধুমাত্র ঐক্যের পথ উন্মুক্ত হতে পারে। চাটুকারিতা নয়, অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাজনীতির স্বাতন্ত্র্য নিয়েই জাসদ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার রাজনীতিতে অবদান রাখবে।”

জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়ার সভাপতিত্বে সভায় কর্নেল তাহেরের সহধর্মিনী লুৎফা তাহের, স্থায়ী কমিটির সদস্য মুশতাক হোসেন ও মো. খালেদ, ন্যাপ নেতা ইসমাইল হোসেন, সাম্যবাদী দলের নেতা লুৎফর রহমান, জাতীয় কৃষক লীগের কামরুজ্জামান ফসি, যুবজোটের আলিমুজ্জামান রাজা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জনা করিম সিকদারসহ অন্যরা বক্তব্য রাখেন।