ধর্মের ব্যাপারে আ. লীগের অবস্থান পরিষ্কার: হানিফ

ধর্ম নিয়ে আওয়ামী লীগের আচরণ ‘সুবিধাবাদী’ বলে বিএনপি দাবিকে মিথ্যাচার মন্তব্য করে ক্ষমতাসীন দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ বলছেন, আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে কখনও ধর্মকে হাতিয়ার করেনি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 May 2016, 02:17 PM
Updated : 25 May 2016, 02:17 PM

বিএনপির অভিযোগের জবাবে সাংবাদিকদের হানিফ বলেন, “ধর্মের ব্যাপারে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। বিএনপি নানান সময় নানান ধরনের মিথ্যাচার করে; এই সব মিথ্যাচারের মধ্য দিয়ে তারা নিজেদের অপকর্মকে ঢাকতে চায়।”

বুধবার বিকালে রাজধানীতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের এক বৈঠক শেষে ধর্মের বিষয়ে ‘অবস্থান পরিষ্কার’ বলে মন্তব্য করলেও পরিষ্কার অবস্থানটি কী সে ব্যাপারে তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি তিনি।

আওয়ামী লীগের দলীয় গঠনতন্ত্রে দল পরিচালনার মূলনীতিতে বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও গণতন্ত্রের সঙ্গে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা তথা সকল ধর্মের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ ও অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি প্রতিষ্ঠা’ রয়েছে।

আর দলটির ২৪টি অঙ্গীকারের মধ্যে ৮ নম্বরে রয়েছে- ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ এবং সকল প্রকার সাম্প্রদায়িকতার বিলোপ সাধন।’

তবে গঠনতন্ত্রে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলা হলেও মঙ্গলবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ধর্ম নিয়ে আওয়ামী লীগের আচরণকে ‘সুবিধাবাদী’ বলে দাবি করেন।

ক্ষমতাসীনদের লক্ষ্য করে রিজভী বলেন, “এরা কখনো ইসলামিক হয়ে যাবেন, কখনো ধর্মনিরপেক্ষ হয়ে যাবেন, কখনো নাস্তিক হয়ে যাবেন- নিজেদের সমর্থন আদায়ের জন্য যখন যেটা প্রয়োজন।”

পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পক্ষ থেকে বিএনপি নেতার এই মন্তব্য সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে জানতে চাইলে তার দল কখনও রাজনীতিতে ধর্মকে হাতিয়ার করেনি বলে দাবি করেন আওয়ামী লীগ নেতা হানিফ।

তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ কখনও রাজনীতিতে ধর্মকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেনি, ব্যবহার করেছে বিএনপি।

আর ধর্ম সম্পর্কে দলের ‘স্পষ্ট অবস্থান’ সম্পর্কে গঠনতন্ত্রে থাকা ‘ধর্মনিরপেক্ষতা ও অসাম্পদ্রায়িকতার’ বিষয়টিই নির্দেশ করেন তিনি।

তিনি বলেন, “গঠনতন্ত্রের ধর্মনিরপেক্ষতা ও অসাম্প্রদায়িকতার ব্যাপারে আমরা পরিষ্কার।”

এর আগে রোববার এক সভায় হানিফ বিএনপি বিরুদ্ধের ইসরায়েল ও তাদের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে ‘হাত মিলিয়েছে’ অভিযোগ এনে এর প্রতিবাদে ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে মাঠে নামার আহ্বান জানান।

বুধবার দলীয় বৈঠকের পর আবারও বিএনপির বিরুদ্ধে সবাইকে আন্দোলনে নামার আহ্বান জানান আওয়ামী লীগের এই নেতা।

হানিফ বলেন, “মুসলিম বিশ্বের প্রধান শত্রু হিসাবে চিহ্নিত ইসরায়েলের সঙ্গে বিএনপির নেতারা বৈঠক করে তাদেরকে (ইসরায়েলকে) সব রকমের ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সুযোগ সুবিধা দিয়ে ক্ষমতায় আসতে চায়।

“তাই আমি দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের আহ্বান করেছি- ধর্মপ্রাণ মুসলমান এবং মুসলমানদের যে সকল সংগঠন আছে, তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার জন্য।”

আওয়ামী লীগের ২০তম ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের প্রস্তুতি উপলক্ষে ওই বৈঠক হয়। সম্মেলনের প্রস্তুতির জন্য গঠিত সব উপ-কমিটির ৭০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে বলে জানান দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হানিফ।

সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আমাদের জাতীয় সম্মেলনকে সফল করার লক্ষে আজ অর্থ উপ-কমিটির দায়িত্ব প্রাপ্ত নেতাদের সাথে অন্যান্য উপ-কমিটির নেতাদের বৈঠক হয়েছে।

“আলোচনায় আমরা জানতে পেরেছি, সম্মেলনকে সফল করার লক্ষে সকল উপ-কমিটির কাজ ৬০-৭০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। আশা করি নির্ধারিত সমেয়ের আগেই আমরা সব ‘সাব’ কমিটির দায়িত্ব যথাযথভাবে সম্পন্ন করবে।”

এ সময় হানিফের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম ও দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লার সভাপতিত্বে অর্থ উপ-কমিটির সাথে অন্যান্য উপকমিটির বৈঠকে এইচ টি ইমাম ও দীপু মনি ছাড়াও জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম, দপ্তর সম্পাদক আব্দুস সুবহান গোলাপ উপস্থিত ছিলেন।