হাজার কোটি টাকার মানহানি মামলা এমপি লতিফের নামে

বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃত করার অভিযোগে চট্টগ্রামের সাংসদ এম এ লতিফের বিরুদ্ধে মানহানির দুটি মামলা হয়েছে আদালতে, যার একটিতে হাজার কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Feb 2016, 08:09 AM
Updated : 4 Feb 2016, 10:54 AM

বৃহস্পতিবার দণ্ডবিধির ৫০০ ও ৫০১ ধারায় হাজার কোটি টাকার মানহানির প্রথম অভিযোগটি করেন সাবেক যুবলীগ নেতা সাইফুদ্দিন রবি, যাকে চট্টগ্রামের মহানগর হাকিম ফরিদ আলম মামলা হিসেবে গ্রহণ করে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

এরপর দুপুরে অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম নুর আলম মোহাম্মদ নিপুর আদালতে দ্বিতীয় আরেকটি অভিযোগ দায়ের করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক উপ-পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক আবদুর রহিম জিল্লু।

দণ্ডবিধির ৫০০ ধারায় করা এ অভিযোগে আদালতে শুনানি শেষ হলেও বিচারক বিকাল পর্যন্ত কোনো আদেশ দেননি বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন বাদীর আইনজীবী সালাউদ্দিন মনসুর রিমু।

তিনি বলেন, “বিলবোর্ড-ফেস্টুনে ছবি বিকৃতি করে সংসদ সদস্য এম এ লতিফ জাতির জনককে অবমাননা করেছেন। সেই কারণে মানহানির মামলা করা হয়েছে।”

এদিকে সাবেক যুবলীগ নেতার মামলাটি আদালত গ্রহণ করে পুলিশকে অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার কথা জানিয়েছেন বাদীর আইনজীবী ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল জানান।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “জাতির জনকের ছবি বিকৃত করায় দণ্ডবিধির ৫০০ ও ৫০১ ধারায় মামলাটি করা হয়েছে। আদালত গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার পদমর্যাদার কোনো কর্মকর্তাকে দিয়ে এর তদন্ত করতে বলেছে।”

মামলার বাদী সাইফুদ্দিন রবি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এমপি লতিফ ‘জাতির জনকের অবমাননা’ করায় বাংলাদেশের ‘কোটি মানুষের পক্ষে’ এই মামলা করেছেন তিনি।

“এমপি লতিফ জাতির জনককে হাস্যকর করতে চেয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী জামায়াতের লোক। প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি, অবিলম্বে তার সংসদ সদস্য পদ বাতিল করে দল থেকে বহিষ্কার করা হোক।”

এম এ লতিফের নামে এই দুটি বিলবোর্ড লাগানো হয়েছিল বন্দর নগরীতে

এম এ লতিফকে গ্রেপ্তার করে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করারও দাবি জানান কেন্দ্রীয় যুবলীগের ১৯৯১ সালের নির্বাহী কমিটির সদস্য সাইফুদ্দিন রবি।

তিনি বলেন, “জাতির জনকের মানহানির ক্ষতিপূরণ হিসেবে আমি এক হাজার কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেছি। তবে সেটা বড় বিষয় নয়। জাতির জনকের সম্মান টাকার অঙ্কে বিবেচ্য নয়।”

সম্প্রতি প্রধানমমন্ত্রী শেখ হাসিনার চট্টগ্রাম সফরের সময় চট্টগ্রাম-১১ আসনের সংসদ সদস্য লতিফের নামে যেসব বিলবোর্ড-ফেস্টুন বন্দরনগরীতে স্থাপন করা হয়েছিল, তাতে বঙ্গবন্ধুর বিকৃত ছবি ব্যবহারের অভিযোগ ওঠায় ফেইসবুকে আলোচনার ঝড় চলছে।

এসব বিলবোর্ডে বঙ্গবন্ধুর দাঁড়ানো অবস্থার একটি ছবি এবং এম এ লতিফের নামে দেওয়া বক্তব্য ছিল। বঙ্গবন্ধুর ওই ছবিটি বিকৃত দাবি করে বলা হচ্ছে, ছবির দেহাবয়ব, পাজামা ও জুতা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর বুধবার কর্মসূচি নিয়ে রাস্তায় নামেন ছাত্র ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা। শহীদ মিনারে ওই কর্মসূচি থেকে লতিফের সংসদীয় আসন শূন্য ঘোষণা করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন নগর ছাত্রলীগের সভাপতি।

চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি লতিফ ২০০৮ সালে হঠাৎ করেই আওয়ামী লীগের মনোনয়নে চট্টগ্রাম বন্দর আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে জিতে টানা দ্বিতীয়বার সংসদে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিত্ব করছেন তিনি।

আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হওয়ার এক বছর পর চট্টগ্রামে এক অনুষ্ঠানে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের মুখে থাকা মাওলানা শামসুদ্দিন এবং জামায়াতের তৎকালীন নায়েবে আমির আফসার উদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে এক অনুষ্ঠানে মঞ্চে উঠে সমালোচনায় পড়েছিলেন লতিফ।

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিনবিরোধী শিবিরে থাকা লতিফ বরাবরই তার বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছেন।

সাম্প্রতিক অভিযোগের বিষয়ে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিলবোর্ড বসানোর দায়িত্বটি যাদের দেওয়া হয়েছিল, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ যাচাই করে ব্যবস্থা নেবেন তিনি।