এমপি লতিফের বিলবোর্ডে বঙ্গবন্ধুর ছবি ‘বিকৃতি’

শেখ হাসিনার সফরকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামে সংসদ সদস্য এম এ লতিফের নামে স্থাপিত বিলবোর্ডে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বিকৃতির অভিযোগ উঠেছে।

মিন্টু চৌধুরী চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Feb 2016, 02:57 PM
Updated : 4 Feb 2016, 03:31 PM

এনিয়ে ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তুমুল আলোচনার পর আওয়ামী লীগের এই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগ মিছিল-সমাবেশও করেছে।

গত শনিবার আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চট্টগ্রাম সফরের আগে লতিফের নির্বাচনী এলাকায় (বন্দর, কাঠগড় ও পতেঙ্গা) সড়কের ধারে অনেক বিলবোর্ড লাগানো হয়।

এসব বিলবোর্ডে বঙ্গবন্ধুর দাঁড়ানো অবস্থার একটি ছবি এবং এম এ লতিফের নামে দেওয়া বক্তব্য ছিল। সেখানে বঙ্গবন্ধুর ওই ছবিটি বিকৃত দাবি করে বলা হচ্ছে, ছবির দেহাবয়ব, পাজামা ও জুতা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

নিজের নামে এসব বিলবোর্ড লাগানোর স্বীকার করলেও এই দায়িত্বটি অন্যদের দেওয়া হয়েছিল দাবি করে করে লতিফ বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃত করলে ব্যবস্থা নেবেন তিনি।

লতিফের নামে লাগানো বিলবোর্ডগুলোতে বঙ্গবন্ধুর যে ছবি রয়েছে, তাতে প্রকৃতপক্ষে বঙ্গবন্ধুর নয় বলে আলোচনা চলছে ফেইসবুকসহ নানা যোগাযোগ মাধ্যমে।

কবি কামরুল হাসান বাদল তার ফেইসবুক ওয়ালে ছবিটি শেয়ার দিয়ে লিখেছেন, “এ ছবিটি বঙ্গবন্ধুর বলে বিশ্বাস হচ্ছে না। পোশাক ও দাঁড়ানোর এই ভঙ্গি বঙ্গবন্ধুর নয়। জাতির জনকের মর্যাদা রক্ষায় কেউ কি আছেন যিনি এ প্রশ্নের উত্তর দেবেন?”

কবি কামরুল হাসান বাদলের ফেইসবুক স্ট্যাটাস

চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রণি লিখেছেন, “এমপি লতিফ তার নিজের ছবিতে ‘সুপার কম্পোজিংয়ের’ মাধ্যমে জাতির জনকের মাথার ছবি বসিয়ে শুধু বঙ্গবন্ধুর ছবিই বিকৃতি করেননি, জাতিকে আকাশ থেকে মাটিতে নিক্ষেপ করেছেন।”

তিনি স্ট্যাটাসটি দেওয়ার পর ৭৬ শেয়ার এবং তাতে ১৩৮টির মতো মন্তব্যও এসেছে, যাতে সাংসদ লতিফের বিষেদগার ছাড়াও এর প্রতিবাদ জানানো হয়।

ছাত্রলীগ নেতা রণি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ফেইসবুকে বিলবোর্ডের ছবিসহ পোস্ট দেওয়ার পর অনেকেই শেয়ার করে। এরপর ওইসব বিলবোর্ড সরিয়ে ফেলা হয়।”

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে লতিফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে কিছু বিলবোর্ড লাগানো হয়েছিল।

“তবে চট্টগ্রাম চেম্বারের শতবর্ষ ও ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের পাঁচ দিনের অনুষ্ঠান নিয়ে আমি খুব ব্যস্ত ছিলাম। যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তারা কীভাবে করেছে আমি ব্যস্ততার কারণে দেখিনি।”

বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃতির অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, “যদি এটা হয়ে থাকে, যে বা যারা করেছে তারা অনৈতিক কাজ করেছে। আমি এখন ঢাকায়। ফিরে এসে ঘটনা যাচাই করে ব্যবস্থা নেব।”

প্রধানমন্ত্রীর চট্টগ্রাম সফরের সময় লতিফ ছাড়াও অন্য সংসদ সদস্য এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের নামে নগরীর বিভিন্ন সড়কে বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনার ছবিসহ বিলবোর্ড লাগানো হয়েছিল।

লতিফের দেওয়া বিলবোর্ডের একটিতে বঙ্গবন্ধুর ছবির নিচে লেখা ছিল- ‘মানবসম্পদ মহাসম্পদ এতে নেই দ্বিধা, এতেই মোদের দেশ এগুবে বঙ্গবন্ধুর কথা-এম এ লতিফ এমপি’।

অন্য বিলবোর্ডে লেখা ছিল- ‘জনসংখ্যা আর নদ-নদী, বাংলাদেশের জিয়নকাঠি-এম এ লতিফ এমপি’।

২০০৮ সালে আকস্মিকভাবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে চট্টগ্রাম-১০ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় লতিফ নানা সময়েই বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন।

চাষী কল্যাণ সমিতির সেই অনুষ্ঠানে এম এ লতিফ (বাঁ থেকে দ্বিতীয়)

২০০৯ সালের ৩১ জানুয়ারি জামায়াতে ইসলামীর সহযোগী সংগঠন চাষী কল্যাণ সমিতি আয়োজিত যৌতুকবিহীন বিয়ের অনুষ্ঠানে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের মুখে থাকা ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদের সভাপতি মাওলানা শামসুদ্দিন, জামায়াতের তৎকালীন নায়েবে আমির আফসার উদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে মঞ্চে উঠে সমালোচনায় পড়েছিলেন তিনি।

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গেও একাধিকবার বিরোধে জড়িয়েছিলেন চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি লতিফ।

মহিউদ্দিনঘনিষ্ঠ নেতারা বলে আসছেন, লতিফ একজন ‘বর্ণচোরা’। তার সঙ্গে জামায়াতের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।