ভিটামিন ‘এ’: গুজব শুনে হাসপাতালে ভিড়

ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানোর পর শিশুর মৃত্যুর গুজবে মঙ্গলবার বিভিন্ন জেলায় হাসপাতালে উৎকণ্ঠিত অভিভাবকদের ভিড় জমে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 March 2013, 11:45 AM
Updated : 12 March 2013, 12:44 PM

তবে কোনো ভিটামিন ক্যাপসুল খাওয়ার কারণে কোনো শিশুর অসুস্থতার কোনো প্রমাণ মেলেনি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও শিশুর মৃত্যুর খবর নিছক গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছে।

ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল ও কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়ানোর এই কর্মসূচি সফল হয়েছে বলেও জানান জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টি অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক মো. এখলাসুর রহমান।

মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল পর্যন্ত দেশজুড়ে ৬ থেকে ৫৯ মাস বয়সী শিশুদের ভিটামিন ‘এ’ ও কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়ানো হয়।

অধ্যাপক এখলাস বলেন, তারা এই বয়সী ৯০ শতাংশ শিশুকেই ক্যাপসুল ও ট্যাবলেট খাওয়াতে পেরেছেন।

১৫ কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশে ২ কোটি ১০ লাখ শিশুর বয়স ছয় মাস থেকে ৫ বছর।

ভিটামিন ক্যাপসুল ও ট্যাবলেট খাওয়ানোয় শিশুর অসুস্থতার কোনো কারণ নেই জানিয়ে মৃত্যুর খবরটি গুজব বলে উড়িয়ে দেন অধ্যাপক এখলাস।

“এই ভিটামিন ক্যাপসুলগুলো পরীক্ষিত, অসুস্থতার কোনো কারণই নেই।

এদিকে ক্যাপসুল খাওয়ার পর অসুস্থতার গুজবে চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে মঙ্গলবার শিশুদের নিয়ে অভিভাবকদের ভিড় দেখা গেছে।  

আতঙ্কিত এই অভিভাবকদের পরে আশ্বস্ত করেন চিকিৎসকরা। ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল কিংবা কৃমিনাশক ট্যাবলেটে অসুস্থতার খবরটি গুজব বলেও উড়িয়ে দেন তারা।

দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতাল, মা ও শিশু হাসপাতালসহ বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রে উৎকণ্ঠিত অভিভাবকদের ভিড় দেখা যায়।

চমেক হাসপাতালে নগরীর সি অ্যান্ড বি এলাকা থেকে আসা মাকসুদুর রহমান ও তার স্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, তাদের দুই বছর তিন বয়সী ছেলে ও পাঁচ বছর বয়সী মেয়েকে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল ও কৃমিনাশক ক্যাপসুল খাওয়ান।

এরপর তাদের দুই বছর তিন মাস বয়সী ছেলে একবার বমি করেছে, কিন্তু মেয়ের কোনো সমস্যা হয়নি, বলেন তারা।

তবে কেন হাসপাতালে এসেছেন- জানতে চাইলে রহমান বলেন, “সবাই আসছে, তাই আমরাও সন্তানদের নিয়ে এসেছি।”

চমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক মো. মোমিনুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, “এটা নিছক গুজব। কৃমির ওষুধ খেলে গরমের কারণে এমনটি হতে পারে, এটাই স্বাভাবিক।”

শ্রাবন্তী দাশ নামে একজন জানান, তার সন্তানকে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানোর পর কোনো সমস্যা হয়েছে কি না, তা যাচাই করতেই হাসপাতালে এনেছেন।

বিকালে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সিভিল সার্জন ডা. আবু তৈয়ব বলেন, “আমরা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন সব টিকাকেন্দ্র এবং ১৪ উপজেলায় খোঁজ নিয়ে দেখিছি ভিটামিন এ ক্যাপসূল ও কৃমিনাশক ওষুধ সেবনের কারণে কোথাও কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা হয়নি।”

তিনি জানান, আতঙ্কিত হয়ে চট্টগ্রামের মিরসরাই, সাতাকনিয়া, বাঁশখালী, হাটহাজারী, ফটিকছড়ি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ৫০-৭০ জন শিশু ভর্তি হয়েছে। চট্টগ্রামের জেনারেল হাসপাতালে একই কারণে ৭০ জন শিশু ভর্তি হয়।

গুজব শুনে সিলেট, গাজীপুর, চাঁদপুর, গাইবান্ধা, বাগেরহাট, মুন্সীগঞ্জেও অনেক অভিভাবক শিশুদের নিয়ে হাসপাতালে যান।

চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক বেলায়েত হোসেন বিডিনিউজ  টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গরম ও খালি পেটে ক্যাপসুল খাওয়ানোর কারণে হয়তো কিছু শিশু অসুস্থ বোধ করছিল। চিকিৎসা দিয়ে তাদের ফেরত পাঠানো হয়েছে।”

মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও ভিড় করে কয়েকশ অভিভাবক।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে গুজব বলে মাইকিংয়ের মাধ্যমে অভিভাবকদের আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দেন।

হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. এহতেশামুল হক দুলাল বলেন, “অভিভাবকরা শিশুদের নিয়ে আসছেন। পরীক্ষা করে সুস্থ দেখায় শিশুদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে।”