যুক্তরাজ্যের লিভারপুলে ‘ফুসফুসের স্বাস্থ্য’ বিষয়ে চলমান এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বাংলাদেশ উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিডিআর,বি)- এর গবেষকরা এই গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন।
তারা যক্ষ্মা ও ডায়াবেটিস শনাক্তকরণে ‘দুইমুখী যাচাইয়ের’ একটি পদ্ধতি প্রস্তাব করেছেন, যাতে যক্ষ্মা রোগীদের ডায়াবেটিস এবং ডায়াবেটিস রোগীদের যক্ষ্মা রয়েছে কিনা, তা যাচাই করা যাবে।
ডায়াবেটিস শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বিপর্যস্ত করে যক্ষ্মার ঝুঁকি তিনগুণ বাড়িয়ে দেয়। অন্যদিকে কোনো যক্ষ্মা রোগীর শরীরে ডায়াবেটিস ধরা পড়ে না থাকলে তা দীর্ঘমেয়াদি যক্ষ্মার চিকিৎসায় সুফল পাওয়ার সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়।
আইসিডিডিআরবির জ্যেষ্ঠ গবেষক ডা. মো. তৌফিক রাহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তাদের কাছে যক্ষ্মা পরীক্ষা করাতে আসা ১৫ হাজার ৫১৫ জনের কাছে তারা জানতে চেয়েছিলেন, তাদের ডায়াবেটিস আছে কি না।
২০১৪ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৬ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে ওই সাড়ে ১৫ হাজারের মধ্যে তিন হাজার ৯৩০ জন শেষ পর্যন্ত ডায়াবেটিস পরীক্ষা করিয়েছিলেন।
তৌফিক রাহমান বলেন, “আমরা তাদের মধ্যে (৩৯৩০ জন) ১৪ ভাগের ডায়াবেটিস পেয়েছি; আর এই ডায়াবেটিস আক্রান্ত মানুষদের মাঝে ২৩ শতাংশের যক্ষ্মা রয়েছে বলে আমরা পরে নিশ্চিত হয়েছি।
“এটিই দেখিয়ে দিচ্ছে যে আমাদের দুই মুখী যাচাই কার্যক্রম অবশ্যই চালু করা উচিত। যদি দুটিই একসঙ্গে থাকে তাহলে যক্ষ্মার চিকিৎসায় সেরে ওঠার ব্যাপারটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।”
‘দুইমুখী যাচাই’ পদ্ধতিতে হাসপাতালগুলো যক্ষা রোগীদের তাদের ডায়াবেটিস আছে কিনা জানতে চাইবে; যদি তারা না বলে তাহলে তাদের গ্লুকোজ লেভেল নির্ণয়ে একটি রক্ত পরীক্ষার ভেতর দিয়ে যেতে হবে।
একইভাবে ডায়াবেটিস রোগীদেরকে স্থায়ী কাশি, ওজন কমে যাওয়া, জ্বর ও ঘামের মতো যক্ষ্মার গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণগুলো রয়েছে সে সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে হবে। যদি এসব লক্ষণ থাকে তাহলে যক্ষা বিষয়ে পরবর্তী অনুসন্ধান কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে।
যক্ষ্মা ও ডায়াবেটিসের যুগপৎ ঝুঁকির এই নতুন হুমকি বিষয়ে গবেষণার জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত ডা. অ্যান্থনি হ্যারিস গতবছর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “অর্ধেক লোক জানে না যে তাদের ডায়াবেটিস রয়েছে। আর এক তৃতীয়াংশ মানুষ নিজের শরীরে যক্ষা সংক্রমণের বিষয়টি জানেন না। নতুন এই পদ্ধতিতে সেই অশনাক্ত রোগীদের আমরা খুঁজে বের করতে পারি।”
বাংলাদেশে ডায়াবেটিস আক্রান্তের হার প্রতি ১০০ জনে ১১ জন এবং ২০৩০ সালের মধ্যে তা ১৩ জনে গিয়ে দাঁড়াবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এছাড়া দেশে প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে ২৯৫ জনের যক্ষ্মা রয়েছে বলে এ বিষয়ে সর্বশেষ এক জরিপের প্রাথমিক ফলে দেখা যায়।