জিকা ভাইরাস: জরুরি অবস্থা ঘোষণা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার

দক্ষিণ আমেরিকার পর জিকা ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্বময় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Feb 2016, 07:55 PM
Updated : 2 Feb 2016, 04:02 AM

স্বাস্থ্য বিষয়ক এই জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে বিশ্ব সংস্থাটি বলেছে, মশাবাহিত এই ভাইরাসটি সংক্রামণ ঠেকাতে সমন্বিত প্রচেষ্টা চালাতে হবে।

আফ্রিকায় ইবোলো ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণায় দেরি নিয়ে সমালোচনার মধ্যে থাকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সোমবার জিকা ভাইরাস নিয়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে বলে বিবিসি ও রয়টার্স জানিয়েছে।

এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে সংস্থার মহাপরিচালক মার্গারেট চ্যান জেনেভায় সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের আর অপেক্ষা করার সুযোগ নেই।”

জিকা ভাইরাস দুই আমেরিকার ২৪টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে বলে দি প্যান আমেরিকান হেলথ অর্গানাইজেশন জানিয়েছে। এতে আক্রান্তের সংখ্যা ৪০ লাখ। শুধু ব্রাজিলেই এই ভাইরাসের কারণে ৪০ হাজার শিশু বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হয়ে জন্ম নিয়েছে।

পশ্চিম আফ্রিকায় ইবোলো ভাইরাসে অন্তত ১০ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে। এখন ইবোলোর মতো জিকা ভাইরাস মোকাবেলাকেও সমান গুরুত্বে আনল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

পরিস্থিতি মোকাবেলায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করলেও ভ্রমণের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রয়োজন এখনও হয়নি বলে মনে করেন মার্গারেট চ্যান।

জিকা ভাইরাসে যেহেতু গর্ভবতী নারীদের ক্ষতির মাত্রাই বেশি, সেজন্য আক্রান্ত এলাকায় তাদের ভ্রমণ না করার পরামর্শ দিয়েছেন চ্যান। তিনি ভাইরাস আক্রান্ত এলাকায় গর্ভবতী নারীদের চিকিৎসকের নিবিড় পর্যক্ষেণে থাকার পরামর্শও দেন।

চ্যান বলেন, “এখন আমাদের সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দিতে হবে গর্ভবতী নারী ও তাদের শিশুদের রক্ষায় এবং মশা নিয়ন্ত্রণে।”

পূর্ব আফ্রিকার দেশ উগান্ডার অতি পরিচিত জিকা (স্থানীয় ভাষায় ‘বাড়ন্ত’) বনাঞ্চলে ১৯৪৭ সালে প্রথম এ ভাইরাসের সন্ধান মেলে। এই কারণে এর নাম দেওয়া হয় ওই বনেরই নামে।

সন্ধান পাওয়ার সাত বছর পর নাইজেরিয়ায় প্রথম মানবদেহে এ ভাইরাস সংক্রমণের তথ্য পাওয়া যায়। এরপর তা ছড়িয়ে পড়ে পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপগুলোতে। 

গতবছর ব্রাজিলে নতুন করে জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর খোঁজ মেলার পর মাত্র চার মাসের মধ্যে বহু দেশে তা ছড়িয়ে পড়ে। এর বাহক এডিস এজিপ্টি মশা।

জিকা ভাইরাসে সচরাচর মৃত্যুর ঘটনা দেখা যায় না। এর লক্ষণও সবসময় স্পষ্ট থাকে না। এই ভাইরাস সবচেয়ে বড় উদ্বেগ হয়ে এসেছে নবজাতকদের নিয়ে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, গর্ভবতী মা জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে তার অনাগত শিশুর মাথা স্বাভাবিকের চেয়ে ছোট হতে পারে, মস্তিষ্কের গঠন থাকতে পারে অপূর্ণ। এ রোগকে বলে মাইক্রোসেফালি।

এ ভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক বা ওষুধ নেই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তিকে বিশ্রাম ও বেশি করে তরল খাবার খেতে পরামর্শ দেয়া হয়।

ইউরোপীয় উপনিবেশ স্থাপনকারীরা আফ্রিকা থেকে মশার এই জাতকে সমুদ্র পার করে আমেরিকায় নিয়ে আসেন বলে গবেষকদের ধারণা।