পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণদের উচ্ছেদের পর ‘পুনর্বাসন অচিরেই’

চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়ে অবৈধ বসতিতে থাকা ঝুঁকিপূর্ণদের উচ্ছেদের পর যাচাই-বাছাই করে অচিরেই পুনর্বাসন করা হবে বলে জানিয়েছেন বিভাগীয় কমিশনার মো. রুহুল আমীন।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 July 2017, 09:59 AM
Updated : 10 July 2017, 09:59 AM

সোমবার চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত জানান তিনি।

২০০৭ সালে চট্টগ্রাম নগরী ও আশেপাশের এলাকায় পাহাড় ধসে ১২৭ জনের মৃত্যুর পর শক্তিশালী পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হয়। গত ১০ বছরে এ কমিটি ১৬টি সভায় মিলিত হয়।

সোমবার কমিটির ১৭তম সভায় বিভাগীয় কমিশনার ‘পুর্নবাসনের’ সিদ্ধান্তের বিষয়টি জানান।

সভার শেষ দিকে বিভাগীয় কমিশনার মো. রুহুল আমীন বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সাথে আলাপ করেছি। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, যারা পাহাড় থেকে উচ্ছেদ হবে তাদেরকে যাচাই-বাছাই করে পুর্নবাসনের ব্যবস্থা করা হবে।

“জেলা প্রশাসন, চট্টগ্রাম- জেলার পাহাড়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের যে তালিকা করেছে, সে তালিকা যাচাই-বাছাই করার পর পুনর্বাসন কার্যক্রম গ্রহণ করবে; এবং এটি অচিরেই শুরু হবে।”

বিভাগীয় কমিশনার রুহুল আমীন বলেন, “আশা করছি, এর মাধ্যমে দীর্ঘদিনের সমস্যা পাহাড়ে অবৈধ বসবাসকারী উচ্ছেদ ও তাদের পুনর্বাসন সংক্রান্ত যে সমস্যা তা সামধান হবে।”

এর আগে সভায় পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব ও চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আব্দুল জলিল জানান, মহানগরীর বিভিন্ন পাহাড়ে ৬৮৪টি ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারে প্রায় তিন হাজার মানুষ আছে।

“তারা বেশিরভাগ ফেনী, কুমিল্লা, ভোলা ও লক্ষীপুর জেলার বাসিন্দা। দুইভাবে পুনর্বাসন হতে পারে। যারা চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা তাদের নিজ নিজ উপজেলায়। আর যারা ভিন্ন জেলার তাদের নিজ জেলায় অথবা নগরীর উপকণ্ঠে হাটহাজারী, সীতাকুণ্ড, আনোয়ারা ও পটিয়া উপজেলায় করা যায়?” 

জবাবে বিভাগীয় কমিশনার মো. রুহুল আমীন বলেন, “এজন্য কমিটি আছে। তারা বাছাই করবে- কারা পুনর্বাসিত হবে, কিভাবে পুনর্বাসিত হবে।”

পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির ১৬তম সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়, নগরী ও আশেপাশের এলাকায় ৩০টি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে ৬৬৬টি  পরিবার বসবাস করছে।

“মহানগরীর বেশিরভাগ ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়সমূহ সরকারি সংস্থা যথাক্রমে বাংলাদেশ রেলওয়ে, চট্টগ্রাম ওয়াসা, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, সড়ক ও জনপথ বিভাগ ও জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের মালিকানাধীন।”

সোমবারের সভায় ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের যে তালিকা দেওয়া হয় তাতে ২৮টি পাহাড়ের নাম আছে।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আগে ৩০টি পাহাড়ের তালিকা ছিল। কয়েকটি পাহাড়ে ঝুঁকি কমেছে। আবার নতুন করে ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে এমন পাহাড়ও আছে।

“পুরো পর্যালোচনা করেই ২৮টি পাহাড়ের তালিকা দেওয়া হয়েছে।”

সভার সিদ্ধান্ত জানিয়ে বিভাগীয় কমিশনার বলেন, পাহাড়ের মালিক যেসব সংস্থা, উচ্ছেদের দায়িত্ব তাদের। তারা উচ্ছেদ করবে। প্রশাসন সহায়তা করবে।

“অপ্রিয় হলেও সত্য, অনেকসময় জেলা প্রশাসনের ওপর দায় চাপানো হয়। কিন্তু যেখানে যাদের মালিকানাধীন পাহাড় আছে, এ দায়িত্ব কিন্তু তাদের।”

রুহুল আমীন বলেন, “তারা হয়ত অন্য একটি কোম্পানিকে সাবলিজ দিয়েছে। সেখানে তারা কি করছে না করছে দেখেও না। কিন্তু গোটা বিষয়টার দায়িত্ব মূল মালিকের। সেখানে যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে দায়িত্ব পাহাড়ের মালিকের।

“তখন কিন্তু কাকে আপনি সাবলিজ দিলেন, কাকে ভাড়া দিলেন, কার সাথে চুক্তি করলেন- এটা বলে পার পাওয়া যাবে না।”

সভায় পাহাড়ের মালিক বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ ব্যক্তিরা উপস্থিত না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিভাগীয় কমিশনার।

তিনি বলেন, “পাহাড়গুলোর ব্যবস্থাপনা বিভিন্ন সংস্থার দায়িত্বে আছে। সেসমস্ত সংস্থার যে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আছেন, তাদেরকে প্রেরণ করবেন। সভায় যারা আসেন তারা কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেন না। তাদের কাছে কোনো তথ্য উপাত্ত নেই।

“কোথায় কী সমস্যা, কোথায় কে বাধা দিয়েছে- তা আমরা জানতে চাই। তথ্য-উপাত্তসহ আলোচনা করতে চাই। পাহাড় থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও মৃত্যুঝুঁকি কমানো অত্যন্ত দুরূহ কাজ। সকলের সহায়তা প্রয়োজন।”

অবৈধ বসতিতে গ্যাস-বিদ্যুৎ ও পানি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পাশাপাশি আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে বিভাগীয় কমিশনার বলেন, এসব সংযোগ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের লোকজন বারবার বিচ্ছিন্ন করে। আবার সেখানে মানুষ এসে অবৈধ সংযোগ নেয়।

“তাই সরকারি নীতিমালা অনুসারে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। আইনের ঊর্ধ্বে আমরা কেউ নই। আইনকে প্রয়োগ করছি না বলে হয়ত অবৈধ সংযোগ নিতে সাহস পাচ্ছে।”

সভায় বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার শংকর রঞ্জন সাহা, জেলা প্রশাসক মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা ইসরাত রেজা, নির্বাহী প্রকৌশলী আতাউল হক ভূঁইয়া, সীতাকুণ্ডের ইউএনও নাজমুল ইসলাম ভুঁইয়াসহ অন্যরা।