জলাবদ্ধতা: চট্টগ্রামে ৪৮ বছরে অস্তিত্ব হারিয়েছে ১২ খাল

৪৮ বছর আগে প্রণীত চট্টগ্রামের ‘ড্রেনেজ মাস্টারপ্ল্যানে’ চিহ্নিত খালের মধ্যে ইতোমধ্যে ১২টির অস্তিত্ব লোপ পেয়েছে বলে এক নাগরিক সংলাপে উঠে এসেছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 May 2017, 06:02 PM
Updated : 20 May 2017, 06:02 PM

পাকিস্তান শাসনামলে প্রণীত ওই ‘মাস্টারপ্ল্যানে’ ৩৪টি চিহ্নিত খাল কর্ণফুলি নদীতে গিয়ে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন তা হারিয়েছে অস্তিত্ব।

সোমবার চট্টগ্রাম ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটিতে এ নাগরিক সংলাপের আয়োজন করে ‘ফোরাম ফর প্ল্যানড চিটাগাং’।

‘চট্টগ্রাম মহানগরে জলাবদ্ধতা’ বিষয়ক এ সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেসরকারি সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ও নগর পরিকল্পনাবিদ আলী আশরাফ।

তিনি জানান, ১৯৬৯ সালে চট্টগ্রাম শহরের জন্য ‘স্টর্ম ড্রেনেজ অ্যান্ড ফ্লাড কন্ট্রোল, মাস্টার প্ল্যান অ্যান্ড ফিজিবিলিটি রিপোর্ট ফর চিটাগাং’ নামে একটি মাস্টারপ্ল্যান হয়। যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানভিত্তিক প্রকৌশল প্রতিষ্ঠান ‘জন আর স্নেল ইনকরপোরেশন’ এটা তৈরির দায়িত্বে ছিল।

ওই মাস্টারপ্ল্যানে চট্টগ্রাম শহরের কালুরঘাট থেকে নেভাল একাডেমি পর্যন্ত ৩৪ টি খালের মুখ চিহ্নিত করা হয়েছিল।

আলী আশরাফ বলেন, “সম্প্রতি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন-সিসিসি এবং চট্টগ্রাম ওয়াসা যৌথভাবে নতুন ড্রেনেজ ও স্যুয়ারেজ মাস্টারপ্ল্যানের জন্য যে জরিপ শুরু করে, সেটাতে প্রথম মাস্টারপ্ল্যানে থাকা ৩৪টি খালের মধ্যে পাওয়া গেছে ২২টি। বাকি ১২টি খালের অস্তিত্বই পাওয়া যায়নি।”

আরএস জরিপের (রিভাইজড সার্ভে) ম্যাপে এ খালগুলোর অস্তিত্ব থাকলেও পরের জরিপগুলোতে জালিয়াতির মাধ্যমে তা পরিবর্তনের কথা জানান আলী আশরাফ।

“হয়ত যারা দখল করেছে, তারা বিএস জরিপে এগুলো ভিটা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছে। সরকার চাইলে এগুলো উদ্ধার করা সম্ভব।”

বর্তমানে যে মাস্টারপ্ল্যান তৈরি হচ্ছে সেখানে হারিয়ে যাওয়া খালগুলো পুনরুদ্ধারে কোনো পরিকল্পনা নেই বলেও জানান তিনি।

বর্ষায় চট্টগ্রাম শহরের এক-তৃতীয়াংশ ডুবে যাওয়ার তথ্য দিয়ে এ জলাবদ্ধতা দূর করতে হারিয়ে যাওয়া খালগুলো উদ্ধারের কোনো বিকল্প নেই বলছেন এ নগর পরিকল্পনাবিদ।

“আমাদের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন- জলাবদ্ধতা সাময়িক সমস্যা। এটি যে একটি সিরিয়াস ইস্যু সেটা তারা বুঝেন না। তারা শুধু প্ল্যানের পর প্ল্যান করেছেন, বাস্তবায়ন করার কোনো সদিচ্ছা দেখাননি।”

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ফোরাম ফর প্ল্যানড চিটাগাং এর সদস্য সচিব শামসুল হোসাইন।

ফোরামের সাধারণ সম্পাদক জেরিনা হোসেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম ওয়াসার মতো নির্বাহী সংস্থাগুলোতে আমূল সংস্কার আনার ওপর জোর দেন।

সংস্কার না করে এসব সংস্থা দিয়ে চট্টগ্রামের মতো একটি দ্রুত বর্ধনশীল নগরী চলতে পারে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

জেরিনা হোসেন বলেন, “কোথাও খালি জায়গা দেখলেই সেখানে ভবন নির্মাণের জন্য সরকারি সংস্থাগুলো তৎপরতা শুরু করে। এগুলো হল বন্যা ও বর্ষায় পানি ধারণের জায়গা। এগুলো আমরা ধ্বংস করে দিচ্ছি।”

নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার বলেন, “বছরে দুই থেকে তিনবার শহর ডুবে যায়, পৃথিবীর কোনো দেশে এমন ঘটনা ঘটে না।”

জলাবদ্ধতায় শুধু ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হিসেব করার যে পদ্ধতি তার সমালোচনা করেন তিনি।

“ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও জলাবদ্ধতায় বাসাবাড়ির যে ক্ষতি, সেটা বিবেচনায় নিলে মোট আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ আড়াই হাজার কোটি টাকার কম না।”

সংলাপে সিটি করপোরেশন ও সিডিএকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তাদের কোনো প্রতিনিধি আসেননি।

সম্প্রতি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম ওয়াসা ‘ড্রেনেজ ও স্যানিটেশন মাস্টারপ্ল্যান’ বাস্তবায়নে একটি চুক্তি করে।

চুক্তি অনুযায়ী ড্রেনেজ সিস্টেম সিটি করপোরেশন এবং চট্টগ্রাম ওয়াসা স্যানিটেশন সিস্টেম বাস্তবায়ন করবে। সংস্থা দুটি আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে এ ‘মহাপরিকল্পনা’ বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।

অন্যদের মধ্যে চট্টগ্রাম ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য মাহফুজুল হক চৌধুরী, কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন, চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নুরুল আবসার, প্রকৌশলী আলম খোরশেদ ও চট্টগ্রাম ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির হিউম্যান রিসোর্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান মোসলেহ উদ্দিন খালেদ আলোচনায় অংশ নেন।