সোমবার বিকালে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত মুজিবনগর দিবসের আলোচনা সভায় এক মঞ্চে উঠে হাতে হাত রেখে ‘ঐক্যে’র ঘোষণা দেন গত কয়েকদিন ধরে পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মাধ্যমে চট্টগ্রামের রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়ানো এই দুইজন।
সভায় সভাপতি হিসেবে প্রায় ১৮ মিনিটের বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি মহিউদ্দিন চৌধুরী আগামীতে ‘ঐক্যবদ্ধভাবে’ চলার ঘোষণা দেন।
এরপরই পাশে হাতে হাত ধরে দাঁড়িয়ে মহিউদ্দিনের ‘নেতৃত্বে’ কাজ করার ঘোষণা দেন নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক সিটি মেয়র নাছির।
দুই নেতার ‘ঐক্যের’ ঘোষণায় স্বস্তি নেমে এসেছে তাদের অনুসারীদের মধ্যে; উল্লসিতও দেখা গেছে তাদের।
চট্টগ্রাম মহানগরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তিনবারের মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী এবং বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছিরের বিবাদের ইতিহাস এক দশকের পুরনো।
মহিউদ্দিন যখন মেয়র ছিলেন,তখনও ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণ ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তৃত্ব নিয়ে নাছিরের সঙ্গে তার দূরত্বের খবর পত্রিকার শিরোনাম হয়েছে।
কিন্তু নির্বাচনের আগে হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানোর বিরোধিতা করা নাছির গত বছর নগরজুড়ে জমি ও স্থাপনার হোল্ডিং ট্যাক্স পুনঃনির্ধারণের ঘোষণা দিলে প্রকাশ্যে এর বিরোধিতা শুরু করেন মহিউদ্দিন।
সর্বশেষ গত ফেব্রুয়ারিতে মেয়র নাছির নগরীর পাথরঘাটা থেকে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র রাজাখালে সরিয়ে নিলে মার্চে তা আগের স্থানে ফিরিয়ে আনেন সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন। তখন থেকেই দুই নেতার বিবাদ প্রকাশ্যে চরম আকার ধারণ করে।
গত ১০ এপ্রিল লালদীঘি মাঠে এক সমাবেশ থেকে মহিউদ্দিন চৌধুরী তার সাধারণ সম্পাদক নাছিরকে ‘খুনি’ আখ্যায়িত করেন। তার অভিযোগ,নাছিরের তত্ত্বাবধানে ১২টি খুন হয়েছে।
এর পাল্টায় মেয়র নাছির খুনের প্রমাণ দেওয়ার আহ্বান জানান। মহিউদ্দিনের বক্তব্যকে ‘পাগলের প্রলাপ’ বলে উড়িয়ে দেন তিনি।
এরপর মঙ্গলবার দুপুরে মহিউদ্দিন চৌধুরী এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, নাছিরের হাত দিয়ে মানুষ খুন হওয়ার প্রমাণ তার কাছে আছে।
তিনি নাছিরের সিটি করপোরেশনকে ‘পাগলের আড্ডাখানা’ বলায় করপোরেশনের কাউন্সিলররা বৃহস্পতিবার মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেন এবং সাবেক মেয়রের সময়ে ‘নালা-নর্দমা দখল করে গড়ে তোলা স্থাপনা’ অপসারণের সিদ্ধান্ত জানান।
মুজিবনগর দিবসের আলোচনা সভায় বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, “আমি ও সাধারণ সম্পাদক দু’জনে মিলে চট্টগ্রামে বিভিন্ন সমস্যা আছে সেই সমস্যা সমাধানে কাজ করব।
তিনি বলেন, “পদবির জন্য প্রতিযোগিতা হতে পারে ইত্যাদি অনেক কিছু হতে পারে। এর অর্থ- মারামারি নয়, খুনোখুনি নয়।
“বক্তব্যতে অনেক সময় অনেক কিছু বলেছি আমি। বলেছি এজন্যই, সেটা আজকে নাই বা বললাম। আগামীতে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে চলব।”
নিজেদের বিরোধের জন্য গণমাধ্যমকর্মীদের দায়ী করে মহিউদ্দিন বলেন, “সাংবাদিক ভাইয়েরা, আবেদন করব আপনাদের লেখনিতে একটা জাতির ঐক্য যেটা হচ্ছে তাতে যেন ফাটল না হয়।
এরপর মঞ্চে বসা নাছিরের উদ্দেশ্যে মহিউদ্দিন বলেন, “ভাই, নাছির ভাই ইক্কা আইয়ুন (নাছির ভাই এদিকে আসুন)।”
মহিউদ্দিনের ডাকে সাড়া দিয়ে তার দিকে এগিয়ে যান মেয়র নাছির। তারপর দু’জন হাত ধরে উপরের দিকে উঁচিয়ে ধরেন।
এসময় নাছির বলেন, “উনার সাথে কাজ করব, উনার নেতৃত্বে।”
এর আগে বক্তব্যে মহিউদ্দিন বলেন, “চট্টগ্রাম মহানগরীতে আমরা আছি। মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ আমরা আছি। বিভিন্ন কারণে হয়তবা একে অন্যের মধ্যে কথাবার্তা হতে পারে। এর অর্থ এই নয়- যুদ্ধ।
“আপনার সাথে আমার কিছু কথার অমিল হতে পারে। তাই বলে যুদ্ধ নয়। অনেকে এটাকে যুদ্ধ মনে করে। বিভিন্নভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে ফাঁক তৈরি করার চেষ্টা করছে। এটা ঠিক হবে না।”
তিনি বলেন, “আমি মহিউদ্দিন চৌধুরী, আমার ৭৪ বছর বয়স। আমাদের সন্তানরা সঠিকভাবে আদর্শ মেনে চলুক। তাই ঝুঁকি নিয়ে হলেও রাজনীতি করছি এবং করে যাব।”