ত্রাণের টিন আত্মসাৎ মামলায় দুই আসামির ৪২ বছর করে দণ্ড

পঁচিশ বছর আগে রিলিফের টিন আত্মসাতের অভিযোগে করা ‍দুর্নীতির ছয় মামলায় চট্টগ্রামের সাবেক জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তাসহ দুই আসামিকে ৪২ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Feb 2017, 02:12 PM
Updated : 15 Feb 2017, 02:41 PM

চট্টগ্রামের বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মীর রুহুল আমিন বুধবার এ রায় ঘোষণা করেন।

দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- চট্টগ্রামের সাবেক জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার শর্মা ও হালিশহরে অবস্থিত জেলা ত্রাণ গুদামের নিম্নমান সহকারী জয়নাল আবেদীন।

এদের মধ্যে বিপ্লব বরিশালের আগৈলঝড়া বড়পুর এলাকার মৃত সুনীল চন্দ্র শর্মার ছেলে; আর জয়নায় ফেনীর কোতোয়ালি থানার মৃত মকবুল আহমেদের ছেলে।

১৯৯২ সালে ত্রাণ হিসেবে জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাঠানো ২৭০০ মেট্রিক টন ঢেউটিনের মধ্যে ২০০০ মেট্রিক টন আত্মসাতের অভিযোগে ওই ছয়টি মামলা করা হয় বলে জানান বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, এসব মামলায় দোষী প্রমাণিত হওয়ায় প্রত্যেকটিতে দুই আসামির প্রত্যেককে সাত বছর করে মোট ৪২ বছরের সাজা দেয় আদালত।

ছয় মামলার সাজা পর্যায়ক্রমে কার্যকর হওয়ায় আসামিদের ৪২ বছরই কারাদণ্ড ভোগ করতে বলে জানান মেজবাহ উদ্দিন।

বর্তমানে পলাতক এই দুই আসামির বিরুদ্ধে মামলার হওয়ার পর তাদের কর্মস্থল থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল জানিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনজীবী জানান, রায়ে আদালত ছয়টি মামলায় আলাদা আলাদাভাবে জরিমানা ধার্য করে।

ছয় মামলায় প্রত্যেক আসামিকে মোট এক কোটি ৭১ লাখ ১৪৪ টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে ছয় মাস করে কারাদণ্ডের আদেশ দেন বিচারক। এই হিসেবে দুই আসামির বিরুদ্ধে মোট তিন কোটি ৪২ লাখ ২৮৮ টাকা জরিমানা ধার্য হয়েছে।

এছাড়া অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় মামলার আরেক আসামি ত্রাণ গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল বশরকে আদালত খালাস দিয়েছে বলে জানান মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী।

এছাড়া অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় মামলার আরেক আসামি ত্রাণ গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল বশর এবং উচ্চমান সহকারী হেমেন্দ্র চন্দ্র দেবকে আদালত খালাস দিয়েছে বলে জানান মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী।

এরমধ্যে কাগজপত্র জাল করে ত্রাণের টিনের পরিমাণ ৭০০ টন দেখিয়ে বাকি দুই হাজার টন ঢেউটিন আত্মসাৎ করে আসামিরা।

এই অভিযোগে ১৯৯৩ সালের ৬ এপ্রিল সেসময়ের দুর্নীতি দমন ব্যুরোর সহকারী পরিদর্শক মোল্লা নুরুল ইসলাম বাদী হয়ে চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়তলি থানায় ছয়টি মামলা করেন।

তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয় ১৯৯৪ সালের ৫মে। এর পরের বছর ১৯৯৫ সালের ৫মে চার আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ গঠন করা হয়।

দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় এবং দণ্ডবিধি ১০৯ ও ৪০৯ ধারায় করা মামলাগুলোতে ১৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বুধবার আদালত এ রায় ঘোষণা করে।

রায়ে বিচারক মামলাগুলোর মধ্যে প্রথমটিতে ৯২ লাখ ১৮ হাজার দুইশ টাকা, দ্বিতীয়টিতে ২৭ লাখ ১৯ হাজার ৯৪৪ টাকা, তৃতীয়টিতে এক লাখ ৭৬ হাজার টাকা, চতুর্থটিতে ছয় লাখ ৬১ হাজার দুইশ টাকা, পঞ্চমটিতে ১৮ লাখ ৭১ হাজার ছয়শ টাকা এবং ষষ্ঠটিতে ২৪ লাখ ৫১ হাজার ২০০ টাকা করে জরিমানা করেছেন।

প্রত্যেক আসামিকে এই অংকের জরিমানা করা হয়েছে। সে হিসেবে প্রত্যেক আসামির জরিমানা এক কোটি ৭১ লাখ ১৪৪ টাকা করে।  দুই আসামির মোট জরিমানা তিন কোটি ৪২ লাখ ২৮৮ টাকা।